ETV Bharat / state

7 ঘণ্টায় বিরল অস্ত্রোপচারে 'কাটা' হাত জুড়লেন আরজি করের চিকিৎসকরা - RG KAR MEDICAL COLLEGE AND HOSPITAL

নজির গড়ল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ ৷ চিকিৎসকরা 7 ঘণ্টার বিরল অস্ত্রোপচারে 58 বছরের বৃদ্ধের কাটা হাত জোড়া লাগালেন ৷

RG KAR MEDICAL COLLEGE AND HOSPITAL
আরজি করে বিরল অস্ত্রোপচার (ফাইল চিত্র, ইটিভি ভারত)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 21, 2025, 10:55 AM IST

কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: আরজি কর হাসপাতাল ! বিগত 7 মাস ধরে একাধিকবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে কলকাতার এই সরকারি হাসপাতাল । কখনও প্রশ্নের মুখে পড়েছে নিরাপত্তা আবার কখনও দেখা গিয়েছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি । এবার সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় বাদ হয়ে যাওয়া হাত ফিরে পেলেন 58 বছরের এক বৃদ্ধ ৷

হাওড়ার শ্যামপুকুর থানা এলাকার বাসিন্দা কার্তিক জানা ৷ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তিনি ৷ কলকাতায় কর্মসূত্রে রোজ আসেন ৷ ফেব্রুয়ারি মাসের 4 তারিখ কারখানায় কাজ করার সময় নিজের অসাবধানতায় যন্ত্র কাটার মেশিনের নিজের বাঁ-হাত ঢুকিয়ে ফেলেন তিনি । ফলে হাত থেকে বাদ হয়ে যায় কবজির পরের অংশ । ওই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাথমিক একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । সেখান থেকে আসেন এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু, বেড না-পাওয়ায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এসে উপস্থিত হন আরজি কর হাসপাতালে ৷ এখানে শুরু হয় চিকিৎসা।

আরজি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয় কার্তিক জানাকে । কিন্তু, চিকিৎসকদের কথায় অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তক্ষরণের ফলে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রোগী । যদিও সেই সময় স্যালাইন এবং রক্ত দিয়ে স্বাভাবিক করা হয় তাঁকে । তারপর রাতেই শুরু হয় অস্ত্রোপচার । সাত ঘণ্টা অস্ত্রোপচার চলার পর পরের দিন সকাল সাতটায় শেষ হয় হাত জোড়া লাগানোর কাজ ।

প্লাস্টিক সার্জেন বিভাগের প্রধান তথা অধ্যাপক আর এন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বিরল এই অস্ত্রোপচারে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের চিকিৎসক অপূর্ব কুমার নায়েক, চিকিৎসক দিপ্রসত্ব মহাপাত্র, চিকিৎসক বিকাশ চন্দ্র দে, অ্যানাসথেসিস্ট চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো এবং অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসকেরা । প্লাস্টিক সার্জেন্ট বিভাগের প্রধান আর এন ভট্টাচার্য বলেন, "রক্ত চলাচলের সমস্ত শিরাগুলি কেটে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে সময় নিয়ে সেই সমস্ত শিরাগুলিকে জোড়া লাগানো হয়েছে । একটি নার্ভও জোড়া লাগানো হয়েছে । হাড় ভেঙে যাওয়ায় অর্থপেডিক বিভাগ একটি ডিভাইস লাগিয়েছে হাড় জোড়া লাগানোর জন্য ।"

RG KAR MEDICAL COLLEGE AND HOSPITAL
বাদ যাওয়া হাত জুড়ে দিল আরজি কর হাসপাতাল (নিজস্ব চিত্র)

এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ওই রোগীর হাত । শুক্রবার দিন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে । তবে চিকিৎসক জানান, "এখনই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এরপর বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে । এরপরও আরও একটি অস্ত্রোপচার করা হবে ওনার । এখনই আবার তিনি কাজে যোগ দিতে পারবেন না । আরও কিছু মাস সময় লাগবে । অর্থপেডিক বিভাগের বেশ কিছু কাজ রয়েছে এরপরে । তারপরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবেন তিনি ।"

তবে, এই ধরণের অস্ত্রোপচার নতুন নয় ৷ কিন্তু, কার্তিক জানার ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । এই ধরণের ঘটনায় প্রথম 6 ঘন্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্রথম 6 ঘণ্টাকে বলা হয় 'গোল্ডেন আওয়ার' ৷ কিন্তু, হাসপাতালে পৌঁছতেই 7 ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল কার্তিক জানার ।

সেই বিষয়ে চিকিৎসক বলেন, "চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্রথম 6 ঘণ্টা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, সময় যত এগনোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিরা উপশিরা মরে যেতে থাকে । এর ফলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । কিন্তু, এনার ক্ষেত্রে আমরা 8 থেকে 9 ঘণ্টা পর অস্ত্রোপচার করেছি । বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ করার পর এখন ওনার বিষয় আমরা নিশ্চিত ।"

হাসপাতালের উপাধক্ষ্য সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আরজি কর হাসপাতালে এই ধরণের কাজ নতুন নয় । কিছুদিন কিছু সমস্যা ছিল । তবে, রোগীদের উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ৷"

পড়ুন: আরজি করে শিশু সুরক্ষা কমিশন, দেখলেন বড়তলায় যৌন হেনস্থার শিকার একরত্তিকে

কলকাতা, 21 ফেব্রুয়ারি: আরজি কর হাসপাতাল ! বিগত 7 মাস ধরে একাধিকবার খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে কলকাতার এই সরকারি হাসপাতাল । কখনও প্রশ্নের মুখে পড়েছে নিরাপত্তা আবার কখনও দেখা গিয়েছে চিকিৎসকদের কর্মবিরতি । এবার সিনিয়র ও জুনিয়র চিকিৎসকদের দীর্ঘ প্রচেষ্টায় বাদ হয়ে যাওয়া হাত ফিরে পেলেন 58 বছরের এক বৃদ্ধ ৷

হাওড়ার শ্যামপুকুর থানা এলাকার বাসিন্দা কার্তিক জানা ৷ পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী তিনি ৷ কলকাতায় কর্মসূত্রে রোজ আসেন ৷ ফেব্রুয়ারি মাসের 4 তারিখ কারখানায় কাজ করার সময় নিজের অসাবধানতায় যন্ত্র কাটার মেশিনের নিজের বাঁ-হাত ঢুকিয়ে ফেলেন তিনি । ফলে হাত থেকে বাদ হয়ে যায় কবজির পরের অংশ । ওই অবস্থায় তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় প্রাথমিক একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে । সেখান থেকে আসেন এসএসকেএম হাসপাতালে। কিন্তু, বেড না-পাওয়ায় বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ এসে উপস্থিত হন আরজি কর হাসপাতালে ৷ এখানে শুরু হয় চিকিৎসা।

আরজি কর হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয় কার্তিক জানাকে । কিন্তু, চিকিৎসকদের কথায় অতিরিক্ত পরিমাণ রক্তক্ষরণের ফলে নিজের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন রোগী । যদিও সেই সময় স্যালাইন এবং রক্ত দিয়ে স্বাভাবিক করা হয় তাঁকে । তারপর রাতেই শুরু হয় অস্ত্রোপচার । সাত ঘণ্টা অস্ত্রোপচার চলার পর পরের দিন সকাল সাতটায় শেষ হয় হাত জোড়া লাগানোর কাজ ।

প্লাস্টিক সার্জেন বিভাগের প্রধান তথা অধ্যাপক আর এন ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে বিরল এই অস্ত্রোপচারে উপস্থিত ছিলেন বিভাগের চিকিৎসক অপূর্ব কুমার নায়েক, চিকিৎসক দিপ্রসত্ব মহাপাত্র, চিকিৎসক বিকাশ চন্দ্র দে, অ্যানাসথেসিস্ট চিকিৎসক অনিকেত মাহাতো এবং অর্থপেডিক বিভাগের চিকিৎসকেরা । প্লাস্টিক সার্জেন্ট বিভাগের প্রধান আর এন ভট্টাচার্য বলেন, "রক্ত চলাচলের সমস্ত শিরাগুলি কেটে গিয়েছিল । আস্তে আস্তে সময় নিয়ে সেই সমস্ত শিরাগুলিকে জোড়া লাগানো হয়েছে । একটি নার্ভও জোড়া লাগানো হয়েছে । হাড় ভেঙে যাওয়ায় অর্থপেডিক বিভাগ একটি ডিভাইস লাগিয়েছে হাড় জোড়া লাগানোর জন্য ।"

RG KAR MEDICAL COLLEGE AND HOSPITAL
বাদ যাওয়া হাত জুড়ে দিল আরজি কর হাসপাতাল (নিজস্ব চিত্র)

এখন অনেকটাই স্বাভাবিক ওই রোগীর হাত । শুক্রবার দিন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে । তবে চিকিৎসক জানান, "এখনই তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হলেও এরপর বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে । এরপরও আরও একটি অস্ত্রোপচার করা হবে ওনার । এখনই আবার তিনি কাজে যোগ দিতে পারবেন না । আরও কিছু মাস সময় লাগবে । অর্থপেডিক বিভাগের বেশ কিছু কাজ রয়েছে এরপরে । তারপরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাবেন তিনি ।"

তবে, এই ধরণের অস্ত্রোপচার নতুন নয় ৷ কিন্তু, কার্তিক জানার ক্ষেত্রে বিষয়টি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল । এই ধরণের ঘটনায় প্রথম 6 ঘন্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । চিকিৎসা বিজ্ঞানের পরিভাষায় প্রথম 6 ঘণ্টাকে বলা হয় 'গোল্ডেন আওয়ার' ৷ কিন্তু, হাসপাতালে পৌঁছতেই 7 ঘণ্টা লেগে গিয়েছিল কার্তিক জানার ।

সেই বিষয়ে চিকিৎসক বলেন, "চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় প্রথম 6 ঘণ্টা আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । কারণ, সময় যত এগনোর সঙ্গে সঙ্গে অনেক শিরা উপশিরা মরে যেতে থাকে । এর ফলে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায় । কিন্তু, এনার ক্ষেত্রে আমরা 8 থেকে 9 ঘণ্টা পর অস্ত্রোপচার করেছি । বেশ কিছু পর্যবেক্ষণ করার পর এখন ওনার বিষয় আমরা নিশ্চিত ।"

হাসপাতালের উপাধক্ষ্য সপ্তর্ষি চট্টোপাধ্যায় বলেন, "আরজি কর হাসপাতালে এই ধরণের কাজ নতুন নয় । কিছুদিন কিছু সমস্যা ছিল । তবে, রোগীদের উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়ার জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ ৷"

পড়ুন: আরজি করে শিশু সুরক্ষা কমিশন, দেখলেন বড়তলায় যৌন হেনস্থার শিকার একরত্তিকে
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.