কলকাতা, 17 অগস্ট: যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে বেআইনিভাবে দিনের পর দিন থাকার পাশাপাশি নতুন আবাসিকদের কাছ থেকে চাঁদাও সংগ্রহ করতেন 'হস্টেলের বাবা' হিসেবে পরিচিত সৌরভ চৌধুরী । তাঁকে ও অন্যান্য ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এবং তদন্ত চালিয়ে এ কথা জানতে পেরেছে পুলিশ ৷
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রের খুনের অভিযোগের তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ এবং যাদবপুর থানার পুলিশ কর্মীরা যৌথভাবে এখনও পর্যন্ত মোট নয় জনকে গ্রেফতার করেছে । এই নয় জন ছাত্রের মধ্যে অধিকাংশই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী । এই ঘটনায় প্রথম গ্রেফতার করা হয় 'হস্টেলের বাবা' বলে পরিচিত সৌরভ চৌধুরীকে । বর্তমানে সৌরভ চৌধুরী পুলিশের হেফাজতে রয়েছেন ।
তাঁকে এই বিষয়ে জেরা করে এবং পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ জোগাড় করে তদন্তকারীরা ইতিমধ্যেই জানতে পেরেছেন যে, শুধু হস্টেলের ব়্যাগিং সেল বানিয়ে নতুন আবাসিকদের ব়্যাগিং করাই নয়, বরং নতুন আবাসিকদের কাছ থেকে চাঁদাও তুলতেন সৌরভ চৌধুরী । কী হিসেবে চাঁদা তুলতেন তিনি এবং এখনও পর্যন্ত মোট কত অংকের চাঁদা তুলেছেন সৌরভ ? সেই বিষয়ে কোনও স্পষ্ট মন্তব্য করতে চাননি কলকাতা পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা ।
তবে এই বিষয়ে নিজের নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক জানিয়েছেন, "এই বিষয়ে আমরা খুব ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করছি । বিভিন্ন ভাবে ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা তোলার ঘটনা খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে । আদৌ এই টাকা কোথায় যেত এবং কীভাবে এই টাকা খরচ হত, সেই বিষয়ে তদন্ত চলছে ।"
কলকাতা পুলিশের আইপিএস মহলের একাংশের দাবি, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এই র্যাগিংয়ের নেপথ্যে যে ভয়াবহতার ছবি সামনে এসেছে, সেগুলি আদতে পরিচালনা হত বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে থেকে । এই ঘটনায় যুক্ত থাকতে পারে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন আরও কোনও বড় মাথা । ইতিমধ্যেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন যে, গোটা অপরাধের ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর প্রাথমিকভাবে বাইরে থেকে হস্টেলের আবাসিকদের ব্রেন ওয়াশ করছিলেন কয়েকজন প্রাক্তনী । তবে এই ঘটনায় নয় জনের গ্রেফতারির পর, তাঁদের বয়ান সংগ্রহ করে এবং ধৃতদের প্রত্যেককে ঘটনাস্থলে নিয়ে গিয়ে গোটা ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল তার পুনর্নির্মাণ করতে চাইছেন তদন্তকারীরা ।
যদিও এই বিষয়ে লালবাজারের দাবি, "যতক্ষণ না আমরা এক প্রকার নিশ্চিত হচ্ছি যে এই ঘটনায় আর কেউ যুক্ত নেই, ততক্ষণ ঘটনার পুনর্নির্মাণ করা ঠিক নয় ।"
ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারকে তলব করে তাঁর বয়ান সংগ্রহ করেছেন তদন্তকারীরা । কিন্তু গতকাল ডিন অফ স্টুডেন্ট রজত রায়কেও লালবাজারে তলব করা হয়েছিল, তবে তিনি হাজিরা দেননি ৷ ফলে তাঁকে নতুন করে ফের নোটিশ দিয়ে লালবাজারে ডেকে পাঠাবে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ ।
আরও পড়ুন: যাদবপুর নিয়ে বৈঠকে ঢুকতে বাধা, রাজ্যপাল ভয় পেয়েছেন বলে দাবি ইংরেজির বিভাগীয় প্রধানের