কলকাতা, 6 ডিসেম্বর : পেশায় যৌনকর্মী, এদের প্রত্যেকেরই ঠিকানা সোনাগাছি ৷ সমাজের একবারে প্রান্তিক অংশে বসবাসকারী মানুষ এরা । তাঁদের মধ্যেই বেশ কয়েকজন জীবনে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, যা সমাজের মূলস্রোতে থাকা বহু মানুষ তা হয়তো ভাবতেই পারবেন না । এরা নিজেদের দেহ দান করেছেন (Posthumous body donation)।
যৌনপল্লীর প্রায় 20-25 জন যৌনকর্মী ও সমাজসেবী মরণোত্তর দেহ দান করেছেন (Sex workers of Sonagachi have donated their posthumous bodies) । সম্প্রতি গণদর্পনের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির সমাজসেবী ও যৌনকর্মীরা মরণোত্তর দেহদান অঙ্গীকারে সই করেন । চিকিৎসক সরোজিৎ জানার স্ত্রী মধুলীনা জানাও মরণোত্তর দেহ দান করেছেন । সরোজিৎ জানার আদর্শের পথে হেঁটেই এই অঙ্গীকার করেছেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যেকে।
এক যৌনকর্মী বলেন, ‘‘ডাঃ সরোজিৎ জানা এই বিষয়ে আমাদের পথপ্রদর্শক ৷ তাঁর আদর্শের পথে হেঁটেই আজ আমরা এই অঙ্গীকার করলাম । আমি মনে করি, মৃত্যুর পরে আমার দেহ কবর দিয়ে দেওয়া হবে ৷ কিন্তু সেই দেহকেই যদি আমার মৃত্যুর পরেও মানুষের এবং বিজ্ঞানের উন্নতির জন্য কাজে লাগাতে পারি, তাহলে আমি নিজেকে ধন্য মনে করব । আমার এই চোখ যদি অন্য কারও দৃষ্টি ফেরাতে পারে, তার থেকে বড় সেবা আর হবে না । আমার এই দেহ যদি ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার কাজে লাগতে পারে, তাহলে আমি জানব আমি ধন্য হলাম । সমাজের জন্য কিছু করতে পারলাম ৷’’
আরও পড়ুন : প্রীতিভোজের দিন দেহদানের অঙ্গীকার নব দম্পতির
সন্ধ্যা দাস নামের আরেক যৌনকর্মী বলেন, ‘‘মৃত্যুর পর দেহের আর কী মূল্য থাকে ? মৃত্যুর পর মানুষটাকেও সবাই ভুলে যায় । তাই এই অঙ্গীকারে সই করে আমার খুব ভাল লাগছে ৷’’ গণদর্পনের সাধারণ সম্পাদক সুদীপ্ত সাহা রায় বলেন, ‘‘সমাজে বিজ্ঞানমনস্কতাকে বাড়াতে এঁদের ভূমিকা রয়েছে । আর তাঁরা যে সেই দ্বায়িত্ব পালনে এগিয়ে এসেছেন সেটাই আনন্দের ব্যাপার ।’’
আরও পড়ুন : যৌনকর্মী ও অসহায়দের জন্যও ডিজিটাল রেশন কার্ড