কলকাতা, 26 জানুয়ারি: জ্ঞানের দেবীর স্থান হয়েছে কলেজে বাইরে রাস্তার উপরে। এমনটাই দৃশ্য প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের (Presidency University) সামনে। সরস্বতী পুজো কোথায় হবে তা নিয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের (TMCP) তর্জায় এই প্রথমবার মা সরস্বতীর ঠাঁই হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল গেটের ঠিক বাইরে। এমনটাই জানিয়েছে পুজোর উদ্যোগী ছাত্র-ছাত্রীরা।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা গত 206 বছর ধরে যেই পুজো করে আসছে তা হয় হিন্দু হস্টেলে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পর্টিকোর ভিতরে যেই পুজোটি 2016 পর্যন্ত হয়েছে তা মূলত করতেন ক্যাম্পাসের অশিক্ষক কর্মীরা। কিন্তু 2016-র পর থেকে সেই পুজোটি আর হচ্ছে না। তবে এই বছর যখন ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজোর আয়োজন করার অনুমতি চাওয়া হলে তখন কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় যে যেহেতু প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় একটি ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাই ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজো করার অনুমতি দেওয়া যাবে না।
প্রেসিডেন্সি বিশ্বিদ্যালয় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সেক্রেটারি অরিত্র মণ্ডল বলেন, "দুর্ভাগ্যবশতভাবে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করা সম্ভব নয়, এমনই জানিয়েছেন আমাদের ডিন অফ স্টুডেন্টস। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে যেহেতু প্রেসিডেন্সির ক্যাম্পাস সেক্যুলার তাই পুজো করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ হয়ত সেক্যুলার শব্দের সঠিক সাংবিধানিক অর্থ জানে না। কারণ সংবিধানে বলা রয়েছে, সেক্যুলারিজম একটি ইতিবাচক ধারণা '(Secularism is a Positive Concept)' সেখানে প্রত্যেক ধর্মের মানুষ নিজেদের মতো আচার-অনুষ্ঠান-উৎসব পালন করতে পারবে।"
তিনি আরও বলেন, "সেক্যুলারিজম একটি সদর্থক ভাবনা। সেখানে কোথাও বলা নেই কোনও মানুষ তাঁর নিজস্ব ধর্মীয় আচরণ পালন করতে পারবে না। কর্তৃপক্ষের কাছে আমাদের প্রশ্ন তারা কি সেক্যুলার ক্যাম্পাসের কথা বলার আড়ালে বাম সংঠনের চাপে নতিস্বীকার করেছেন? কারণ এরকম উদাহরণ ইতিহাসে আমরা দেখতে পেয়েছি যেখানে সুভাষ চক্রবর্তী মহাপীঠ তারাপীঠে পুজো দিতে গিয়েছিলেন বলে তাঁকে সিপিএম দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। দীর্ঘ 206 বছরের ইতিহাসে বাম একনায়কতন্ত্রের অত্যাচারকে আসলে অথারিটি ভয় পাচ্ছে। এরকম ভয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু ছাত্রছাত্রী অযথা পায়।"
আরও পড়ুন: প্রেসিডেন্সির প্রতিষ্ঠা দিবসেও অব্যাহত থাকছে পড়ুয়াদের অবস্থান-বিক্ষোভ
এরসঙ্গে তিনি আরও বলেন, "শিক্ষাঙ্গণে সরস্বতী পুজো কেউ আটকাতে পারবে না। অথারিটিকে অসংখ্য চিঠি, মেইল করা হয়েছে, রিপ্লাই হিসেবে শুধু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিরুদ্ধ আচরণ পেয়েছি আমরা। প্রেসিডেন্সিতে সরস্বতী পুজো বহু প্রাক্তনীরাও চায়, কিন্তু ওই যে মুখ ফুটে কেউ বলতে সাহস পায় না। আমরা তৃণমূল ছাত্র পরিষদ এই পুজোকে উপস্থাপনা করেলেও পুজো করছেন সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাই। আমাদের এই পুজোতে কোনও রাজনীতি থাকবে না বা কোনও রং থাকবে না। আমরা সবাইকে আমাদের এই পুজোয় যোগদান করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছি।"
স্বাভাবিকভাবেই এবার প্রশ্ন উঠছে যে ডিরোজিও ভাবধরার এই কলেজ তাই এখানে কোনও ধর্মকেই প্রাধান্য দেওয়া হয় না তাহলে 2016 সাল পর্যন্ত কলেজের ভিতরে কী করে পুজো হল? এই বিষয় অরিত্র মণ্ডল বলেন, "তাঁরা কীভাবে ক্যাম্পাসের ভিতরে পুজো চালিয়ে গেল সেটা আমাদের জানা নেই।" জানা গিয়ছে যে শিক্ষক-কর্মচারীরা 2016 সাল পর্যন্ত পুজোটি চালিয়ে গিয়েছিলেন তাঁদের এখন আর কেউই নেই।