কলকাতা, 30 এপ্রিল: 'মন কি বাত' অনুষ্ঠান কোটি কোটি ভারতীয়ের মনের কথার প্রতিফলন বলেই ব্যাখ্যা করেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ৷ এই অনুষ্ঠান আদতে আমজনতার মনের অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ ৷ কিন্তু, সেই 'মন কি বাত'-এর অংশ হয়েও আক্ষেপ বাংলার ছেলে সইদুল লস্করের। শুধু তাই নয়, রবিবার রাজভবনের অনুষ্ঠানে হাজির থাকলেও রাজ্যপালের সম্মান প্রত্যাখ্যান করলেন তিনি। কারণ হিসাবে, অবশ্য সইদুলের ব্যাখ্যা, তাঁর লড়াইয়ের কথা এদিনের বিশেষ অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয়নি ৷ তেমনই বাংলার রাজভবনের বিশেষ অনুষ্ঠানে যায়গা হয়নি বাংলার আর কারও কথাই ৷ সেই কষ্ট থেকেই সম্মান গ্রহণে না-করেছেন তিনি ৷
রবিবার দেশের 22টি ভাষায় এবং একাধিক বিদেশি ভাষাতেও সম্প্রচারিত হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর 'মন কি বাত' অনুষ্ঠান ৷ দেখানো হয়েছে রাষ্ট্র সংঘেও ৷ কলকাতার রাজভবনেও এদিন 'মন কি বাত-এর শততম এপিসোডের স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়। এদিনের সেই এপিসোডে কাশ্মীরের মনজুর, হরিয়ানার সুনীলরা স্থান পেলেও বাংলার সইদুল লস্করের লড়াইয়ের কাহিনী স্থান পায়নি। আর তা নিয়েই প্রবল মনোকষ্টে অনুষ্ঠান শেষে রাজ্যপালের হাত থেকে সম্মান নিতে অস্বীকার করেন সইদুল লস্কর।
এদিন রাজভবনে দাঁড়িয়ে সইদুল বলেন, "49তম 'মন কি বাত'-এ আমার গল্পের কথা জানা যায়। 50তম এপিসোডে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আমার লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন। এই মন কি বাত অনুষ্ঠানের জন্য গোটা দেশের কাছে আমার কাজ পরিচিতি পেয়েছে। এ কারণে আমি তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ।" সইদুল দাবি করেছেন, এরপর প্রজেক্ট নিয়ে দিল্লিতে যেতে বলা হয়েছিল তাঁকে। গত 25 মার্চ দিল্লিতে গিয়েওছিলেন তিনি ৷ কিন্তু সেখানে গিয়েও কোনও লাভ হয়নি বলে অভিযোগ করেন সইদুল ৷ তাঁর কথায়, "দিল্লিতে গেলাম, হোটেলে থাকলাম। ঘুরে চলে এলাম ৷ কারও সঙ্গে দেখা হলো না। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও দেখা হয়নি। কথাও হয়নি কোনও।"
সইদুলের আরও দাবি, দিল্লি থেকে ফিরে আসার পর 100 তম 'মন কি বাত' অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাঁকে। তিনি বলেন, "ভেবেছিলাম আজকের স্পেশাল স্ক্রিনিংয়ে আমার লড়াইয়ের কাহিনী তুলে ধরা হবে। কিন্তু তা হল না। বাংলার কারও কথাই তুলে ধরা হয়নি। অথচ বাংলার রাজভবনে অনুষ্ঠান হচ্ছে। যখন আমার কাহিনী দেখলাম না, আমার খুব কষ্ট হয়েছে। আমি অত্যন্ত আবেগপ্রবণ মানুষ ৷ তাই আমি রাজ্যপালের হাত থেকে সম্মান গ্রহণ করিনি।" সইদুল লস্কর আদতে দক্ষিণ 24 পরগনা জেলার বারুইপুরের পুড়িগ্রামের বাসিন্দা। পেশায় তিনি ট্যাক্সি চালক।
ট্যাক্সি চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি পুড়িগ্রামে একটি হাসপাতালও পরিচালনা করেন তিনি। যে হাসপাতালে ওই গ্রামের বাসিন্দা-সহ আশপাশের বহু মানুষ চিকিৎসা করাতে আসেন এবং বিনা পয়সায় তাদের ওষুধও দেওয়া হয়। এদিন সইদুল লস্কর জানান, দূরে হাসপাতাল হওয়ার কারণে তাঁর বোনের চিকিৎসা করাতে পারেননি। তাঁকে অকালেই চলে যেতে হয়েছিল। সেই ঘটনার পরই তিনি শপথ নিয়েছিলেন এলাকার কেউ যেন চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত না হন। গাড়ি চালিয়েই এবং মানুষের থেকে কিছু কিছু সাহায্য নিয়েই গড়ে তুলেছেন এই হাসপাতাল। তিনি জানিয়েছেন, বর্তমান তাঁর হাসপাতালে মোট 10 জন চিকিৎসক আছেন। চার-পাঁচটি গ্রামের লোকজন সেখানে চিকিৎসা করাতে আসেন। সাহায্য পেলে আগামিদিনে হাসপাতালকে আরও বড় করে তুলতে চাইছেন সইদুল।
আরও পড়ুন: মন কি বাতের 100তম পর্বে অংশ নিলেন ইউনেস্কোর প্রধান, আমেরিকা-ব্রিটেনে আপ্লুত প্রবাসীরা