কলকাতা, 1 এপ্রিল : বন্ধ হয়ে যাচ্ছে একের পর এক বাস রুট। ইতিমধ্যেই কমেছে বেসরকারি বাসের সংখ্যা (private bus routes are getting shut down) ৷ করোনা ও লকডাউনের জেরে বেসরকারি পরিবহণ শিল্পের মাজা ভাঙা অবস্থা। তার উপর দোসর হয়েছে জ্বালানির অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি। মালিকদের হাত খালি। অর্থাভাবে ইন্সুরেন্স থেকে শুরু করে সিএফ নবিকরণ করানো যাচ্ছে না বাসগুলোর। এমনকি বাড়তি ভাড়া নিয়েও তেমন লাভ হচ্ছে না। তাই ভারি জরিমানা থেকে বাঁচতে রুট থেকে উধাও হচ্ছে একের পর এক বেসরকারি বাস। পরিস্থিতি আরও খারাপ হাওয়ার আশঙ্কা করছেন বেসরকারি বাস মালিকরা।
কিছুদিন আগে সার্টিফিকেট অফ ফিটনেস ছাড়া একটি মিনিবাস পথ দুর্ঘটনার শিকার হয়। তাইপরেই কড়া পদক্ষেপ নেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। কড়া ভাষায় মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, যদি কোনও বাস ফিটনেস সার্টিফিকেট ছাড়া পথে নামে সেক্ষেত্রে বাস বাজেয়াপ্ত করা হবে। এরপরেই আরও সতর্ক হয় বাস মালিকপক্ষ। পথে যেহেতু সরকারি বাসের তুলনায় বেসরকারি বাসই বেশি চলে, সেই কারণে যাত্রীরা বেসরকারি বাসের উপরেই বেশি নির্ভরশীল। কিন্তু বাসের অভাবে সংকটের মধ্যে পড়েছেন নিত্যযাত্রীরা। আগে যত সংখ্য়ক বেসরকারি বাস চলত তার অর্ধেকের উপর বাস বসে গিয়েছে।
আরও পড়ুন : Tram Style Trolley Bus in Kolkata : ট্রামের ধাঁচেই কি শহরে চলবে ট্রলি বাস !
মোটর ভেহিকেল অ্যাক্ট অনুসারে যে গাড়ি ইন্সুরেন্স ফেল করবে সেই গাড়ি সিএফ করাতে পারে না। ইন্সুরেন্স করাতে খরচ প্রায় 70 হাজার টাকা। এই বিষয়ে অল বেঙ্গল বাস মিনিবাস সমন্বয় সমিতির সাধারণ সম্পাদক রাহুল চট্টোপাধ্যায় বলেন, "বেশিরভাগ মালিকেরই হাত প্রায় খালি। তাই ইন্সুরেন্স বাকি পড়ে রয়েছে। এমনকি মালিকপক্ষ স্বীকার করেছে যে, বর্তমানে রাস্তায় যে বাসগুলো চলছে তার কতগুলি আদতে সিএফ রয়েছে সেই বিষয়ে নিশ্চিত কিছু বলা যাচ্ছে না।"
হাওড়ার দিকের যেই রুটগুলোতে বাস কমেছে সেগুলি হল, ধুলাগড়-আলিয়া ইউনিভার্সিটি, ধুলাগড়-নয়াবাদ, দানেশ শেখ লেন-নিউটাউন, টিকিয়াপাড়া-সল্টলেক। সলপ-ব্যারাকপুর যেটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রুট ছিল, সেই রুটে আগে 25 থেকে 30টি বাস চলত ৷ এখন চলছে 10 থেকে 15টি গাড়ি। তাও প্রতিদিন সব গাড়ি পথে নাবে না।
সাউথ সুপারম্যান বাস সিন্ডিকেটের সেক্রেটারি রতন মাইতি বলেন, "পরিবহণমন্ত্রী জানিয়েছিলেন যেই গাড়িগুলোর এখনও সিএফ নবিকরণ হয়নি সেগুলি এককালীন 1,500 টাকা জরিমানা দিয়ে সিএফ করাতে পারবে ৷ কিন্তু আমরা যখন স্থানীয় রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট অফিসগুলিতে গিয়ে এই কাজ করাতে যাচ্ছি, তখন সেখান থেকে বলা হচ্ছে তাদের কাছে এই সংক্রান্ত এখনও কোনও নোটিফিকেশন বা বিজ্ঞপ্তি এসে পৌঁছায়নি ৷ তাই এই কাজ করানো সম্ভব নয়। ফেব্রুয়ারি মাসেই ঘোষণাটি করেছিলেন পরিবহণমন্ত্রী ৷ তখন থেকে আজ প্রায় দু'মাস অতিক্রান্ত কিন্তু এখনও কোনও কাজই এগোল না।"
অত্যন্ত জনপ্রিয় রুট SD-8 ৷ এই বাসটি বালিগঞ্জ থেকে বিবি ঘাট পর্যন্ত যাতায়াত করে ৷ এই রুটে আগে কমবেশি 32টি গাড়ি চলত এখন সেই জায়গায় 10 থেকে 15টি গাড়ি চলছে, তাও নিয়মিত নয়। গাড়িগুলি সিএফ করাতে পারেনি বলে বসে রয়েছে ৷ আবার বেশ কিছু গাড়ির মালিক অতিরিক্ত তেলের দাম, গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ সব সামলে সেরকম লাভ করতে পারছেন না ৷ সেই জন্য গাড়ি বার করতে নারাজ।
SD-4/SSD-1/SD-4B এই তিনটি রুট মিলিয়ে প্রায় 70টি গাড়ি চলত ৷ এখন শুধু চলছে SD-4 রুটের কিছু বাস। এই রুট তিনটি একেবারে বন্ধের মুখে। দক্ষিণ কলকাতার সবথেকে পুরনো রুট 12C/ 12C-1A এই দুটি বাস পৈলান থেকে হাওড়া পর্যন্ত যায়। এই দুটি রুট মিলিয়ে বাসের সংখ্যা ছিল 115টি ৷ বর্তমানে এই রুটে মাত্র 22টি গাড়ি চলছে। ঠিক একইভাবে 18 A, B, C, D এই চারটি রুটের বাস সরশুনা থেকে ছাড়ে এবং বিভিন্ন রুটে যায় ৷ এই রুটের এই চারটি রুট মিলিয়ে 150টির উপর গাড়ি ছিল ৷ যার মধ্যে বর্তমানে চলছে 30 থেকে 35টির মত গাড়ি।
রতনবাবু আরও বলেন, "আমাদের বেসরকারি পরিবহণ ক্ষেত্র একেবারে ধ্বংস হয়ে গিয়েছে ৷ ভাড়া না বাড়ানো হলে আমরা আর ব্যবসা চালিয়ে যাত্রী পরিষেবা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারব না ৷ প্রতিদিন একটি করে বাস বসে যাচ্ছে।"