কলকাতা, 19 জুলাই : সময়ের ব্যবধান 4 বছর । সেবার, SSKM হাসপাতালের অধিকর্তার পদ থেকে আচমকা সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল তাঁকে । আর, এবার আচমকা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা (DME)-র পদ থেকে । তিনি, প্রদীপকুমার মিত্র।
4 বছর আগের ওই ঘটনায় স্বাস্থ্য দপ্তরের অনেকেই যেমন বিস্মিত হয়েছিলেন । এবারও তেমনই হয়েছেন অনেকে । সূত্রের খবর, ৪ বছর আগের ওই ঘটনায় প্রদীপকুমার মিত্র নিজে যেমন অসম্মানিত বোধ করেছিলেন । এবারও তিনি তেমন বোধ করছেন । তাঁর চাকরি জীবনের মেয়াদ আর কিছু দিন পরে শেষ হওয়ার কথা । এই অবস্থায় কী এমন হল, যার জেরে আচমকা তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হল DME-র পদ থেকে, তা নিয়ে স্বাস্থ্য দপ্তরের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন ধরনের বক্তব্য ঘুরে বেড়াচ্ছে ।
এই বিষয়ে প্রদীপকুমার মিত্রর বক্তব্য জানতে চেয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় । তবে, তাঁর বক্তব্য মেলেনি । সম্প্রতি, অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তিনি । হৃদরোগ সংক্রান্ত সমস্যায় আক্রান্ত হওয়ায়, তাঁর চিকিৎসা হয়েছে SSKM হাসপাতালে । তাঁর হৃদযন্ত্রে একটি স্টেন্ট বসানো হয়েছে । সোমবার থেকে তিনি আবার কাজে যোগদান করবেন বলে জানা গেছিল । সূত্রের খবর, সোমবারের বদলে তিনি আজ (19 জুলাই) থেকে কাজে ফিরতে চেয়েছিলেন । আর, গতকাল (18 জুলাই) এক নির্দেশে তাঁকে DME-র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় । ওই নির্দেশে জানানো হয়েছে, DME-র পদমর্যাদায় প্রদীপকুমার মিত্রকে রিসার্চের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে । অসুস্থতার কারণে প্রদীপকুমার মিত্রর অনুপস্থিতিতে DME-র দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন দেবাশিস ভট্টাচার্য । তাঁকেই DME-র দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে বৃহস্পতিবারের ওই নির্দেশে ।
প্রদীপকুমার মিত্রকে এভাবে আচমকা DME-র পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার জেরে স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকদেরই একাংশ এমনই মনে করছে, আর মাত্র মাস দু'য়েক পরে চাকরিজীবনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে । প্রদীপকুমার মিত্রর সঙ্গে এখন এমন নাই হতে পারত । এটা অসম্মানের । অন্য একটি অংশ এমন মনে করছে, অসুস্থতার কারণে প্রদীপকুমার মিত্রকে DME-র পদমর্যাদায় রেখে রিসার্চের দায়িত্ব দেওয়া হল । এ সবের পাশাপাশি এমনও মনে করছেন অনেকে, কোনও বিষয়ে যদি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনও সিদ্ধান্ত সঠিক বলে মনে না হয়, তা হলে তা কার্যত সমর্থন করতে চান না তিনি । এমন কারণেও সরিয়ে দেওয়া হয়ে থাকতে পারে তাঁকে ।
সম্প্রতি NRS মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির প্রভাব রাজ্যজুড়ে পড়েছিল । জুনিয়র ডাক্তারদের কী ভাবে কর্মবিরতিতে থেকে সরিয়ে আনা সম্ভব হয়, সেই বিষয়ে প্রদীপকুমার মিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন বলে মনে করেন স্বাস্থ্য দপ্তরের অনেকে । এরপরও কী ভাবে আচমকা তাঁকে DME-র পথ থেকে সরিয়ে দেওয়া হল, তা নিয়ে বিস্মিত তাঁরা ।
গতবছরের জুলাইয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পড়ুয়াদের অনশন আন্দোলনের শেষের দিকে DME-র পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছিল দেবাশিস ভট্টাচার্যকে । তখন এই পদে আনা হয় প্রদীপকুমার মিত্রকে । গতকালের নোটিশে দেবাশিস ভট্টাচার্যকে আবার DME-র পদে ফিরিয়ে আনা হয়েছে । স্বাস্থ্য দপ্তরের অনেকেই আবার এমন মনে করছেন, প্রদীপকুমার মিত্রকে রিসার্চের দায়িত্বে আনা হয়েছে । এটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখন রিসার্চের কাজ অনেক বেড়ে গেছে।
2015-য় এক পোষ্য কুকুরের ডায়ালিসিসের চেষ্টা হয়েছিল SSKM হাসপাতালে । বিষয়টি প্রকাশ্যে আসায়, শেষ পর্যন্ত ওই কুকুরের ডায়ালিসিস করানো সম্ভব হয়নি । এই ঘটনায় সংবাদমাধ্যমে বক্তব্য পেশ করেছিলেন SSKM হাসপাতাল তথা কলকাতার ইনস্টিটিউট অফ পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (IPGMER)-এর তৎকালীন অধিকর্তা প্রদীপকুমার মিত্র । 2015-র জুনের শেষের দিকে তিনি যখন স্বাস্থ্য ভবনে শিক্ষক-চিকিৎসকদের প্রশিক্ষণের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, তখন তৎকালীন DME সুশান্তকুমার বন্দোপাধ্যায় ফোনে প্রদীপকুমার মিত্রকে জানিয়েছিলেন, SSKM হাসপাতালের অধিকর্তার পদ থেকে সরিয়ে কামারহাটির কলেজ অফ মেডিসিন অ্যান্ড সাগর দত্ত হাসপাতালে অধ্যক্ষের পদে তাঁকে আনা হচ্ছে । ওই দিনই তাঁর বদলির নির্দেশ ইশু হয়েছিল । এই ঘটনায় বিস্মিত হয়েছিলেন প্রদীপকুমার মিত্র । এই অধ্যক্ষের পদে যোগদান করতে অস্বীকার করেন তিনি । তিনি তখন জানিয়েছিলেন, এই বদলি তাঁর কাছে অসম্মানের । পরে, রাজ্যজুড়ে যে সব সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল চালু হচ্ছে, তাঁর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল প্রদীপকুমার মিত্রকে ।