ETV Bharat / state

বিরল হার্নিয়া, মৃত্যুর মুখ থেকে নাবালিকাকে ফিরিয়ে আনলেন চিকিৎসকরা - কলকাতা

পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নাথানা এলাকার বাসিন্দা পরিণীতা দাস (14) ৷ বিরল হার্নিয়া রোগে ভুগছিল সে ৷ ক্ষুদ্রান্ত্রের জেজুনাম অংশ পচে গেছিল তার ৷ অবশেষে SSKM হাসপাতালে চিকিৎসকদের চেষ্টায় মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে ওই নাবালিকা ৷

ছবি
ছবি
author img

By

Published : Jul 27, 2020, 9:59 AM IST

কলকাতা, 27 জুলাই : জন্মগত কারণে প্রথম থেকেই ছিল শারীরিক ত্রুটি । অথচ, 14 বছর বয়স পর্যন্ত রোগীর তেমন কোনও সমস্যা হয়নি, যার কারণে পরিজনরাও কিছু আঁচ করতে পারেননি । এ দিকে, 6 জুন থেকে মাত্র দু'দিনের মধ্যে নাবালিকার শারীরিক অবনতি এতটাই হয়ে পড়ে যে, তা পৌঁছে যায় যমে-মানুষে টানাটানির অবস্থায় । চিকিৎসকরাও বুঝতে পারছিলেন না কোন কারণে এই রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হচ্ছে । শেষ পর্যন্ত তাঁরা পেট কেটে দেখার সিদ্ধান্ত নেন । অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন সমস্যা কোথায় । অবশেষে, মৃত্যুর মুখ থেকে রোগীর জীবন ছিনিয়ে আনেন তাঁরা । তবে, এরপরও সমস্যা দেখা দিয়েছিল । শেষ পর্যন্ত রোগীকে সুস্থ করলেন চিকিৎসকরা । ঘটনাটি SSKM হাসপাতালের ।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পরিণীতা দাস । 14 বছরের এই নাবালিকা পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নাথানা এলাকার বাসিন্দা । তার বাবা গ্রামের হাটে কাপড় বিক্রি করেন । 6 জুন আচমকা অসুস্থ বোধ করে পরিণীতা । প্রথমে পেটে ব্যথা,পরে বমি হয় তার । পরিবারের সদস্যরা তাকে তমলুকের হাসপাতালে নিয়ে যান । তবে হাসপাতাল থেকে রোগীকে কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয় ৷ নাবালিকাকে ভরতি করা হয় বজবজ মেডিকেল কলেজে । সেখান থেকে তাকে আবারও রেফার করা হয় SSKM হাসপাতালে । পরের দিন সকাল সাতটা নাগাদ ভরতি হয় সে । চিকিৎসকরা দেখেন, রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে । কেন এই সমস্যা, তা জানতে পরীক্ষা করা হয় । কিন্তু কোনও সমস্যার কারণই চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি । অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পেটে অস্ত্রোপচারের ৷

পরের দিন অর্থাৎ 8 জুন বিকাল চারটে নাগাদ অপারেশনের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় । ওই দিন বিকাল তিনটে নাগাদ নাবালিকাকে যখন অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হবে, তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয় । ঘণ্টা খানিকের চেষ্টায় চিকিৎসকরা এই কিশোরীর হৃদযন্ত্র সচল করতে পারেন । তবে, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, এই অবস্থার মধ্যেই অস্ত্রোপচার করা হবে । এরপর নাবালিকার পেট কেটে চিকিৎসকরা দেখেন, রোগীর পেটের বাঁদিকে হার্নিয়া রয়েছে । সেখানে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে । রোগীর অন্ত্রে রেয়েছে ফুটো । সেই ফুটো থেকে পরিপাক হওয়া খাবার বেরিয়ে এসে রক্তে মিশেছে । সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে । ওই হার্নিয়া সেপসিস হয়ে গেছে । যার জেরে সেপটিক শক হয় নাবালিকার । এই সেপটিক শকের কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল ।

অপারেশন করে অন্ত্রের যে অংশ জেজুনাম রয়েছে, তার 8 ফুট কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে । জেজুনাম হল ক্ষুদ্রান্ত্রের তিনভাগের মধ্যবর্তী ভাগটির নাম । এটি ডুওডেনাম ও ইলেয়ামের মাঝে অবস্থিত । এই জেজুনামের অংশটি পচে গেছিল তার । সাধারণত জেজুনাম থাকে 9 ফুট ।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার । তবে এরপরও জ্ঞান ফিরছিল না রোগীর । এই অবস্থায় তাকে ITU-তে রাখা হয় । পরের দিন ITU-তে নাবালিকার হৃদযন্ত্রে আবারও সমস্যা দেখা দেয় । তখন কার্ডিয়াক ইলেকট্রিক শক দিয়ে এই রোগীকে বিপদ থেকে মুক্ত করা হয় । অপারেশনের তিন দিনের মাথায় এই রোগীর জ্ঞান ফেরে । চিকিৎসকদের আশঙ্কা ছিল, নাবালিকার ব্রেন হয়তো আর কাজ করবে না । তবে, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, সাইকিয়াট্রি, আন‍্যাস্থেশিয়লজি সহ অন্য বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের চেষ্টায় এই কিশোরীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে । এক মাস ITU-এ রাখা হয়েছিল নাবালিকাকে । এরপর তাকে ওয়ার্ডে দেওয়া হয় । অবশেষে শনিবার, 25 জুলাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় সে । COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে যাতে এই রোগীকে দূরে রাখা যায় তার জন্য SSKM হাসপাতালের দুই চিকিৎসক গাড়িতে করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন ।

চিকিৎসক বিতানকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই অস্ত্রোপচার হয় ৷ এছাড়াও তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক সুনন্দ দে, চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক পবন মণ্ডল, চিকিৎসক দেবতনু হাজরা, চিকিৎসক সৌরভ চক্রবর্তী, চিকিৎসক অর্ণব পাল, চিকিৎসক চন্দ্রিকা ভট্টাচার্য । অ্যানাসথেসিস্ট ছিলেন চিকিৎসক দেবজ্যোতি দাস, চিকিৎসক সোহিনী দত্ত, চিকিৎসক মানসী গান্ধী, চিকিৎসক বাবলু সর্দার ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পেটের মধ্যে এই হার্নিয়া অন্ত্রের মধ্যে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে থাকে । সাধারণত এই হার্নিয়া বাইরে থেকে বোঝা যায় না, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে না । অন্য কোনও অস্ত্রোপচার করার গিয়ে এই ধরনের হার্নিয়া ধরা পড়ে । 1 শতাংশের কম ক্ষেত্রে এই ধরনের হার্নিয়া দেখা যায় । চিকিৎসক বিতানকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এটা আমাদের কাছে বিরলতম এবং বিশাল এক কৃতিত্ব । রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনার মতো ব্যাপার । এখন এই নাবালিকা সম্পূর্ণ সুস্থ ৷ সে স্বাভাবিক পরিমাণে খাবার খেতে পারছে ।"

কলকাতা, 27 জুলাই : জন্মগত কারণে প্রথম থেকেই ছিল শারীরিক ত্রুটি । অথচ, 14 বছর বয়স পর্যন্ত রোগীর তেমন কোনও সমস্যা হয়নি, যার কারণে পরিজনরাও কিছু আঁচ করতে পারেননি । এ দিকে, 6 জুন থেকে মাত্র দু'দিনের মধ্যে নাবালিকার শারীরিক অবনতি এতটাই হয়ে পড়ে যে, তা পৌঁছে যায় যমে-মানুষে টানাটানির অবস্থায় । চিকিৎসকরাও বুঝতে পারছিলেন না কোন কারণে এই রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হচ্ছে । শেষ পর্যন্ত তাঁরা পেট কেটে দেখার সিদ্ধান্ত নেন । অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসকরা বুঝতে পারেন সমস্যা কোথায় । অবশেষে, মৃত্যুর মুখ থেকে রোগীর জীবন ছিনিয়ে আনেন তাঁরা । তবে, এরপরও সমস্যা দেখা দিয়েছিল । শেষ পর্যন্ত রোগীকে সুস্থ করলেন চিকিৎসকরা । ঘটনাটি SSKM হাসপাতালের ।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পরিণীতা দাস । 14 বছরের এই নাবালিকা পূর্ব মেদিনীপুরের ময়নাথানা এলাকার বাসিন্দা । তার বাবা গ্রামের হাটে কাপড় বিক্রি করেন । 6 জুন আচমকা অসুস্থ বোধ করে পরিণীতা । প্রথমে পেটে ব্যথা,পরে বমি হয় তার । পরিবারের সদস্যরা তাকে তমলুকের হাসপাতালে নিয়ে যান । তবে হাসপাতাল থেকে রোগীকে কলকাতায় রেফার করে দেওয়া হয় ৷ নাবালিকাকে ভরতি করা হয় বজবজ মেডিকেল কলেজে । সেখান থেকে তাকে আবারও রেফার করা হয় SSKM হাসপাতালে । পরের দিন সকাল সাতটা নাগাদ ভরতি হয় সে । চিকিৎসকরা দেখেন, রোগীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে । কেন এই সমস্যা, তা জানতে পরীক্ষা করা হয় । কিন্তু কোনও সমস্যার কারণই চিকিৎসকরা বুঝে উঠতে পারেননি । অবশেষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, পেটে অস্ত্রোপচারের ৷

পরের দিন অর্থাৎ 8 জুন বিকাল চারটে নাগাদ অপারেশনের জন্য সময় নির্ধারণ করা হয় । ওই দিন বিকাল তিনটে নাগাদ নাবালিকাকে যখন অপারেশন থিয়েটারে ঢোকানো হবে, তখন তার হার্ট অ্যাটাক হয় । ঘণ্টা খানিকের চেষ্টায় চিকিৎসকরা এই কিশোরীর হৃদযন্ত্র সচল করতে পারেন । তবে, তাঁরা সিদ্ধান্ত নেন, এই অবস্থার মধ্যেই অস্ত্রোপচার করা হবে । এরপর নাবালিকার পেট কেটে চিকিৎসকরা দেখেন, রোগীর পেটের বাঁদিকে হার্নিয়া রয়েছে । সেখানে গ্যাংগ্রিন হয়ে গেছে । রোগীর অন্ত্রে রেয়েছে ফুটো । সেই ফুটো থেকে পরিপাক হওয়া খাবার বেরিয়ে এসে রক্তে মিশেছে । সেখান থেকে রক্তক্ষরণ হচ্ছে । ওই হার্নিয়া সেপসিস হয়ে গেছে । যার জেরে সেপটিক শক হয় নাবালিকার । এই সেপটিক শকের কারণেই হার্ট অ্যাটাক হয়েছিল ।

অপারেশন করে অন্ত্রের যে অংশ জেজুনাম রয়েছে, তার 8 ফুট কেটে বাদ দেওয়া হয়েছে । জেজুনাম হল ক্ষুদ্রান্ত্রের তিনভাগের মধ্যবর্তী ভাগটির নাম । এটি ডুওডেনাম ও ইলেয়ামের মাঝে অবস্থিত । এই জেজুনামের অংশটি পচে গেছিল তার । সাধারণত জেজুনাম থাকে 9 ফুট ।

প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে চলে অস্ত্রোপচার । তবে এরপরও জ্ঞান ফিরছিল না রোগীর । এই অবস্থায় তাকে ITU-তে রাখা হয় । পরের দিন ITU-তে নাবালিকার হৃদযন্ত্রে আবারও সমস্যা দেখা দেয় । তখন কার্ডিয়াক ইলেকট্রিক শক দিয়ে এই রোগীকে বিপদ থেকে মুক্ত করা হয় । অপারেশনের তিন দিনের মাথায় এই রোগীর জ্ঞান ফেরে । চিকিৎসকদের আশঙ্কা ছিল, নাবালিকার ব্রেন হয়তো আর কাজ করবে না । তবে, কার্ডিওলজি, নিউরোলজি, সাইকিয়াট্রি, আন‍্যাস্থেশিয়লজি সহ অন্য বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসকদের চেষ্টায় এই কিশোরীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব হয়েছে । এক মাস ITU-এ রাখা হয়েছিল নাবালিকাকে । এরপর তাকে ওয়ার্ডে দেওয়া হয় । অবশেষে শনিবার, 25 জুলাই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায় সে । COVID-19-এর সংক্রমণ থেকে যাতে এই রোগীকে দূরে রাখা যায় তার জন্য SSKM হাসপাতালের দুই চিকিৎসক গাড়িতে করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন ।

চিকিৎসক বিতানকুমার চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে এই অস্ত্রোপচার হয় ৷ এছাড়াও তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিকিৎসক সুনন্দ দে, চিকিৎসক রুদ্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, চিকিৎসক পবন মণ্ডল, চিকিৎসক দেবতনু হাজরা, চিকিৎসক সৌরভ চক্রবর্তী, চিকিৎসক অর্ণব পাল, চিকিৎসক চন্দ্রিকা ভট্টাচার্য । অ্যানাসথেসিস্ট ছিলেন চিকিৎসক দেবজ্যোতি দাস, চিকিৎসক সোহিনী দত্ত, চিকিৎসক মানসী গান্ধী, চিকিৎসক বাবলু সর্দার ।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, পেটের মধ্যে এই হার্নিয়া অন্ত্রের মধ্যে জড়িয়ে-পেঁচিয়ে থাকে । সাধারণত এই হার্নিয়া বাইরে থেকে বোঝা যায় না, পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে না । অন্য কোনও অস্ত্রোপচার করার গিয়ে এই ধরনের হার্নিয়া ধরা পড়ে । 1 শতাংশের কম ক্ষেত্রে এই ধরনের হার্নিয়া দেখা যায় । চিকিৎসক বিতানকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এটা আমাদের কাছে বিরলতম এবং বিশাল এক কৃতিত্ব । রোগীকে মৃত্যুর হাত থেকে ছিনিয়ে আনার মতো ব্যাপার । এখন এই নাবালিকা সম্পূর্ণ সুস্থ ৷ সে স্বাভাবিক পরিমাণে খাবার খেতে পারছে ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.