কলকাতা, 7 মে : একটা ধাক্কা সামলাতে না সামলাতেই এসে পড়ল করোনার দ্বিতীয় ঢেউ । রাজ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকা করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ করেছেন যার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হল লোকাল ট্রেন পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া । একদিকে যেমন লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে কিছুটা হলেও সংক্রমণকে রোখা যাবে ৷ অন্যদিকে কয়েক লক্ষ মানুষ যাঁদের জীবিকা ট্রেনের উপর নির্ভরশীল হকার ও ফেরিওয়ালাদের মাথায় হাত পড়েছে।
দেশে এর আগে 2020 সালে 24 মার্চ থেকে যখন দেশে লকডাউন ঘোষণা করা হয় তখন লক্ষ লক্ষ ছোট-বড় হকার ও ফেরিওয়ালারা কর্মহীন হয়ে পড়েন । দীর্ঘ সাত মাস বন্ধ দেশ জুড়ে বন্ধ ছিল রেল । তখন কেউ না সবজি বিক্রি করে আবার কেউ বা ধার দেনা করে কোনও মতে দিন গুজরান করেছিলেন । আবার সেই দুঃস্বপ্নের দিনগুলির মুখোমুখি তাঁরা আর একবার । অনেকেই এখনও আগের বারের দেনার টাকার এক ভাগও মিটিয়ে উঠতে পারেনি ।
আগের বারের লকডাউনে দেখা গিয়েছিল যে বিভিন্ন স্টেশনে আবার লোকাল ট্রেন চালু করার দাবি তুলে হকাররা জমায়েত করে বারে বারে এবারেও হঠাৎ করে লোকাল ট্রেন বন্ধ করে দেওয়ার ফলে ক্ষোভ জমেছে হকার ও ফেরিওয়ালাদের মধ্যে ।
আরও পড়ুন : শ্রমিকের অভাব, লকডাউনের আতঙ্কে ঘুম ছুটেছে মালদার চাষিদের
বালিগঞ্জ স্টেশনের প্লাটফর্মের তেমনই একজন ছোট হকার ঝন্টু সরকার একরাশ দুঃখের কথা উগরে দিলেন । তিন বলেন যে, "আমার ছোট একটা স্টল । এটাই আমাদের রুজিরুটি। বাড়িতে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ থেকে বয়স্ক মানুষগুলোর চিকিৎসার খরচ সবকিছুই এই হকারি করে চালাই । দিদি (মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) একবারও আমাদের কথা ভাবলেন না এত বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে । আজকে দিদি তৃতীয়বারের জন্য আমাদের জন্যই ওই জায়গাটায় আবার পৌঁছেছেন এবং তিনি আজকে এখানে পৌঁছে যখন এই সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করলেন তখন একবারও আমাদের কথা ভাবলেন না । অন্তত একটু 15 দিন সময় পেলে যবু নিজেদের একটু গুছিয়ে নিতে পারতাম । এবার আমাদের সংসারটা পুরো ভেসে যাবে ।"
আর এক হকার নাড়ু হালদার বলেন যে, "বিস্তর দেনায় ডুবে রয়েছি । এখন যদি স্টলগুলি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আগের টাকাই বা কি করে মেটাবো আর কিই বা খাবো ? ট্রেন যখন বন্ধ করছে তাহলে বাসগুলো চালাচ্ছে কেন ? বাসে কি সংক্রমণ ছড়াবে না ? দিদি ইচ্ছে মতো কাজ করছেন ।"
পশ্চিমবঙ্গ রেলওয়ে হকার্স ইউনিয়নের সেক্রেটারি নেপালদেব ভট্টাচার্য বলেন যে, "আলপিন থেকে রুমাল সবকিছুই এই হকাররা ট্রেনে বা প্লাটফর্মে বিক্রি করে। এতেই হাজার হাজার মানুষের সংসার চলছে। ট্রেন না চললে এই মানুষগুলির সাথে তাঁদের পরিবারের মানুষগুলোরও কষ্টের শেষ থাকবে না। আগের বার অনাহারে ও অনিশ্চিয়তায় তিনজন হকার আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় 50 হাজারেরও বেশি হকার রয়েছে। তাঁরা অন্যান্য কাজের সাথে যুক্ত হলেও সেখানে তাঁরা একেবারে নতুন বলে তাঁদের তেমন একটা লাভ হয় না।"