কলকাতা, 14 অক্টোবর : রোগী ভরতির 24 ঘণ্টা না হলে দুই দিনের বেড চার্জ করা হবে না । এমনই নির্দেশ দিল রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশন অর্থাৎ ওয়েস্ট বেঙ্গল ক্লিনিকাল এস্টাব্লিশমেন্ট রেগুলেটরি কমিশন (WBCERC) ।
বেসরকারি হাসপাতালের বেড চার্জের ক্ষেত্রে 24 ঘণ্টা না হলেও দুই দিনের বেড চার্জ নিয়ে নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ । রাজ্যের স্বাস্থ্য কমিশনে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয় । অভিযোগে দেখা যায়, বেসরকারি একটি হাসপাতালে এক রোগী 19 ঘণ্টা ভরতি ছিলেন । এই সময়ে এই রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে বিল করা হয় 1 লাখ 15 হাজার 478 টাকা । এই মামলায় 65 হাজার 478 টাকা অর্থাৎ ওই বিলের অর্ধেকের বেশি টাকা অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য হাসপাতালকে নির্দেশ দেয় কমিশন ।
এ বিষয়ে কমিশন জানায়, গত 22 অগাস্ট রাত 2টা 40 মিনিট নাগাদ আনন্দপুরের বেসরকারি একটি হাসপাতালে এই রোগীকে ভরতি করানো হয় । COVID-19 টেস্টের জন্য পরের দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ তাঁর নমুনা সংগ্রহ করা হয় । ওই দিন বিকাল 5টা 35 মিনিট নাগাদ রিপোর্ট আসে । রোগীর কোরোনা পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে । এরপরে গত 22 অগাস্ট রাত সাড়ে 9টা নাগাদ এই রোগীকে ওই হাসপাতাল থেকে ছুটি করিয়ে নিয়ে যান তাঁর ছেলে । কমিশন জানায়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দেওয়া হলফনামা অনুযায়ী, 22 অগাস্ট 19 ঘণ্টা হাসপাতালে ছিলেন এই রোগী । এই 22 অগাস্টের জন্য শুধুমাত্র বেড ভাড়া নেওয়া হয়েছে 26 হাজার টাকা ।
এই বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কমিশনে বলে, "হোটেলে যেমন থাকে বেলা 12 টার সময় চেক আউট । ঠিক সেরকমই এখানেও একই নিয়ম রয়েছে । সেই জন্য রাত 2টা 40মিনিট থেকে পরের দিন বেলা 12টা পর্যন্ত একটা দিনের চার্জ । আবার ওই বেলা 12 টা থেকে ওই দিন রাত সাড়ে ন'টা নাগাদ ছুটি হওয়ার সময় পর্যন্ত আরও একটা দিনের চার্জ নেওয়া হয়েছে ।" কমিশনে দায়ের করা অন্য একটি অভিযোগে দেখা যায়, 69 বছর বয়সি এক প্রবীণ ব্যক্তিকে 11 মে বেলা 12টা 54 মিনিট নাগাদ নিউ আলিপুরে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভরতি করানো হয়। ভরতি হওয়ার পরে বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে এই রোগীকে বলা হয়, আগে COVID-19 টেস্ট করাতে হবে । তারপর তাঁর অন্য চিকিৎসা করা হবে । এই রোগীর COVID-19 টেস্টের রিপোর্টে পজ়িটিভ ধরা পড়ে। এর পরে ওই হাসপাতাল থেকে এই রোগীকে অন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয় । কমিশন জানায়, বেসরকারি ওই হাসপাতালে একদিন ভরতি থাকার জন্য এই রোগীর চিকিৎসার খরচ হিসাবে 92 হাজার টাকা বিল করা হয় । এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য 36 হাজার টাকা বিল করা হয় । ওষুধের জন্য বিল করা হয় 15 হাজার টাকা, চিকিৎসকের ফি হিসাবে 12 হাজার টাকা ধরা হয় । এ ভাবে 92 হাজার টাকার বিল করা হয় । এই রোগী 28 ঘণ্টা ভরতি ছিলেন ওই হাসপাতালে । এর জন্য দুই দিনের বেড চার্জ ধরা হয়েছে 22 হাজার টাকা । এই মামলার শুনানির সময় বেসরকারি ওই হাসপাতালের তরফে 50 হাজার টাকা ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয় । এর পরে এই মামলা আর চালাতে চাননি অভিযোগকারী । রাজ্যের এই স্বাস্থ্য কমিশন জানায়, এক সপ্তাহের মধ্যে ওই 50 হাজার টাকা ওই অভিযোগকারীকে ফিরিয়ে দিতে হবে ।
রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে স্বাস্থ্য কমিশনের এক বৈঠকের পরে এই কমিশনের চেয়ারপার্সন জাস্টিস (অবসরপ্রাপ্ত) অসীম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিভিন্ন হাসপাতালের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসছিল । কোনও রোগী রাত 12টার একটু পরে হয়ত ভরতি হচ্ছেন । হয়ত রাত দুটো-আড়াইটের সময় ভরতি হচ্ছেন । পরের দিন বেলা 12টায় চেক আউট টাইম । হয়ত 20 ঘণ্টা থাকছেন রোগী । পরের দিন সন্ধ্যায় ছুটি, এই রোগীর দুই দিনের বেড চার্জ বিল করা হচ্ছে ।" বিভিন্ন বিষয়ে এই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। এই ধরনের ক্ষেত্রে বেড চার্জের বিষয়ে এই স্বাস্থ্য কমিশনের চেয়ারপার্সন বলেন, "রোগী যদি সন্ধ্যা 6টা নাগাদ ভরতি হন, তবে যতক্ষণ না পরের দিন সন্ধ্যা 6টা না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তাঁর পরের দিনের বেড চার্জ করা হবে না । এই কথা বলা হয়েছে।"