কলকাতা, ১৪ ফেব্রুয়ারি : গর্ভবতী স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন মহম্মদ জাহাঙ্গির খান (৩৮)। স্ত্রী'র বাঁ পায়ে যন্ত্রণা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত চিকিৎসা না করেই ফিরে গেলেন হাসপাতাল থেকে। যাওয়ার আগে, উগরে দিলেন ক্ষোভ। অভিযোগ, চিকিৎসা করাতে এসে হেনস্থার শিকার হয়েছেন তাঁরা। গতকালের এই ঘটনাটি কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের।
তবে ঘটনার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ জানাননি জাহাঙ্গির। এই বিষয়ে হাসপাতালের মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট ও ভাইস প্রিন্সিপাল ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি আমার জানা নেই।" জাহাঙ্গির বলেন, "তিনদিন হয়ে গেল যন্ত্রণা সেরে যাওয়ার মতো একটা ওষুধও পড়ল না। স্ত্রীর পায়ে এখনও যন্ত্রণা হচ্ছে। সেই সকাল পাঁচটা থেকে ঘুরেছি মেডিকেল কলেজের বিভিন্ন জায়গায়। স্ত্রী হাঁটতে পারছিল না। রিকশা করে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় গিয়েছি। কিছুতেই কিছু হয়নি। দিনটাই নষ্ট হয়ে গেল। এবার NRS বা SSKM-এ যাওয়ার কথা ভাবছি।"
মগরাহাটের বাসিন্দা জাহাঙ্গিরের স্ত্রী নার্গিস খান (২৫) পাঁচমাসের গর্ভবতী। এই অবস্থায় তাঁর চিকিৎসা চলছে বারুইপুর হাসপাতালে। এরই মধ্যে বাঁ পায়ের শিরায় দিনকয়েক আগে টান লেগে যায়। তারপর থেকেই যন্ত্রণা শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জাহাঙ্গির। গত রবিবার রাতে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনো বিভাগের ইমারজেন্সিতে নার্গিসকে নিয়ে যাওয়া হয়। জাহাঙ্গির বলেন, "দুটো ইনজেকশন দেওয়ার পর যন্ত্রণা কমে যায়। আমরা মনে করি, সেরে যাবে। বাড়িতে নিয়ে চলে যায়। পরদিন সকাল থেকে ধীরে ধীরে যন্ত্রণা বাড়তে থাকে। আমরা যখন এই হাসপাতালে এসে পৌঁছলাম তখন দুপুর দুটো কুড়ি বাজে। বহির্বিভাগ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এরপর ইমারজেন্সিতে যায়। দুটো ট্যাবলেট আর একটা ইঞ্জেকশন লিখে দেওয়া হল। পরদিন বহির্বিভাগে আসতে বলা হল।"
জাহাঙ্গিরের অভিযোগ, এরপর একবার অর্থোপেডিকের বহির্বিভাগ একবার গাইনোর বহির্বিভাগে নার্গিসকে নিয়ে ঘুরতে হয় তাঁকে। কিন্তু কোথাও চিকিৎসা মিলছিল না। ঘুরে আসতে হয় ইমারজেন্সি থেকেও। কোথায় চিকিৎসা করাবেন তা জানার জন্য এক নিরাপত্তারক্ষীর পরামর্শে অনুসন্ধান অফিসে যোগাযোগ করেন তিনি। অনুসন্ধান অফিস থেকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের কথা বলা হয়। জাহাঙ্গিরের কথায়, "আমরা সুপার ম্যাডামের কাছে যায়। সুপার ম্যাডাম ফোন করে দিলে আমরা তখন আবার মহিলা বিভাগে যায়। গিয়ে দেখি রেগে আছেন ডাক্তার। আমার স্ত্রী'কে ভিতরে নিয়ে গিয়ে একটা মেশিন দিয়ে পেটে জোরে চাপ দেন। পা ধরে জোরে টান মারেন। লাগল জোরে। কাঁদছিল নার্গিস। ওখান থেকে বলা হল, এটা তাঁদের বিভাগ নয়, তাঁরা দেখবেন না। আমরা বললাম, আপনারা দেখবেন না, সেটা বলতে পারতেন। বলতে পারতেন কোথায় যেতে হবে। কিন্তু এত ঘোরাচ্ছেন কেন? হেনস্থা করছেন কেন?"
একইসঙ্গে জাহাঙ্গিরের অভিযোগ, "সকালে যখন এখান থেকে ওখানে ঘুরে বেড়াচ্ছি তখন একটা ট্রলি চেয়েছি। বলেছি আমাদের কাছে পরিচয়পত্র রয়েছে। আর কী পরিচয়পত্র লাগবে বলুন, একটা ট্রলি দিন অন্তত।" কিন্তু ট্রলি পাওয়া যায়নি। এরপর রিকশা ভাড়া করে হাসপাতালের এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় স্ত্রী'র চিকিৎসার জন্য ঘুরে বেরিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগ। গতকাল বিকেলে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে জাহাঙ্গির বলেন, "স্ত্রী'র পায়ের শিরায় টানের চিকিৎসার জন্য অর্থোপেডিক বিভাগে গিয়েছিলাম। অর্থোপেডিক বিভাগ থেকে বলা হল আগে গাইনো বিভাগে যান। সেখানে গেলে আগে অর্থোপেডিকে যাওয়ার কথা বলা হয়। এই রকম টানাপোড়েন চলেছে। আমরা এখন হাসপাতাল থেকে চলে যাচ্ছি।"
তাঁর আরও অভিযোগ, "সকাল থেকে হেনস্থা করছে। ৪-৫ জন ডাক্তার দেখলেন। কোনও ডাক্তার বলতে পারছেন না এটা কীসের সমস্যা। রোগীর অবস্থা খারাপ। আমরা চাইছি রোগীর আগে চিকিৎসা হোক। অবস্থা বুঝে পড়ে তখন ভরতির ব্যবস্থা হবে। হেনস্থা করা হচ্ছে। ডাক্তারবাবুরা দেখে বুঝতে পারছেন না কোন ডাক্তারের কাছে যেতে হবে?" একই সঙ্গে তিনি বলেন, "সরকারি হাসপাতালের উপর ভরসা আছে। কিন্তু এখানকার ডাক্তারদের উপর ভরসা নেই।"