ETV Bharat / state

নেতাজি নগরের দম্পতির খুনিকে ধরিয়ে দিল ফোন ও CCTV ফুটেজ

author img

By

Published : Aug 6, 2019, 5:09 AM IST

Updated : Aug 6, 2019, 6:22 AM IST

বৃদ্ধার ফোন আর CCTV ফুটেজ ৷ এই সূত্র ধরেই নেতাজি নগরে দম্পতি খুনে বিহার থেকে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ৷

ধৃত

কলকাতা, 6 অগাস্ট: যা ভাবা হয়েছিল তা নয় । দুই থেকে তিনজন নেতাজি নগর জোড়া খুনে জড়িত বলে কলকাতা পুলিশের সন্দেহ ছিল । ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আপাতত কলকাতা পুলিশের মনে হচ্ছে খুনি একজনই । নেতাজি নগরে মৃত দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে কাজ করার সময়ই সে খুনের ছক কষেছিল । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা বলেন, "এখনও পর্যন্ত ধৃতকে জেরা করে যা মনে হচ্ছে, তাতে সে ঠিক কথাই বলছে । তবে এখনও জেরার প্রয়োজন আছে । তারপরই বোঝা যাবে আসল ঘটনা ।"

30 জুলাই নেতাজি নগরে বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ 29 জুলাই রাত 10টা থেকে 11টার মধ্যে দিলীপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায়কে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের ৷ সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল । হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, পিছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে । সম্ভবত সেটাই মৃত্যুর কারণ । সেই কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে । দোতলার শোবার ঘরে উদ্ধার হয়েছিল দিলীপবাবুর দেহ । তাঁর মুখে গোঁজা ছিল বালিশের একটি তোয়ালে । চাপা দেওয়া ছিল একটি বালিশ । ঘরে থাকা 10 টি আলমারির মধ্যে ন'টাই খোলা ছিল । খোয়া যায় বেশ কিছু গয়না, নগদ প্রায় এক লাখ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন । একাধিক তত্ত্ব উঠে এলেও টাকা-পয়সা লুটের জন্যই খুন করা হয়েছে বলে অনুমান করছিল পুলিশ ৷ কারণ, অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, প্রোমোটিং কিংবা অন্য কোনও কারণে খুন হলে এভাবে আলমারি খুলে জিনিসপত্র লুটপাট করা হত না । তবে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে তা হতে পারে বলেও একটা সন্দেহ ছিল ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরে বাড়ি থেকে উদ্ধার বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ

যদিও কোনও কোনও মহলের সন্দেহ ছিল, প্রোমোটিংয়ের জন্য বাড়ি না দেওয়ার জেরেই এই খুন । সন্দেহ গতি পায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর । তিনি বলেন, “কারও সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া যাবে না । যদি কেউ মনে করে থাকে একাকী বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে রেহাই পেয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করছে ।" যদিও দুঁদে গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, টাকা পয়সা হাতানোর জন্যই খুন করা হয়েছে ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজি নগর খুনের নেপথ্যে রং মিস্ত্রি? জোরদার হচ্ছে সন্দেহ

খুনের ঘটনায় একযোগে তদন্ত নামে কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি রবারি এবং হোমিসাইড শাখা । সঙ্গে গোয়েন্দা প্রধানের প্রত্যক্ষ সক্রিয়তা ছিল । পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন পাঁচেক আগে পর্যন্ত দেবাশিসবাবুর বাড়িতে রং এবং ছাদ সারাইয়ের কাজ হয়েছিল । তা হয়েছিল এক ঠিকাদারের মাধ্যমে । ওই ঠিকাদার বৃদ্ধের পূর্ব পরিচিত । দেবাশিসবাবু একটি সময় ছাদ সারানোর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সেই সূত্রে এই ধরনের মিস্ত্রি এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর । তদন্তকারীরা ওই বাড়ির পরিচারিকা লতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বাড়িতে কাজ করানোর সময়ও অনেকটাই খোলামেলা ভাবে মিশতেন ওই দম্পতি । মিস্ত্রিদের সামনেই আলমারি খুলে টাকাপয়সা বের করতেন ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজি নগরে খুনের জের, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রবীণদের ডেটাবেস তৈরির কাজ শুরু

তদন্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ছিল স্বপ্নার মোবাইল ফোন । সেটির টাওয়ার লোকেশন শেষ পাওয়া গেছিল বাঁশদ্রোণী এলাকায় ৷ পুলিশ নিশ্চিত ছিল, মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে খুনি । সেই সূত্রেই রং এবং ছাদ সারানোর কন্ট্রাক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জানতে চাওয়া হয়, বাঁশদ্রোণী এলাকায় তাঁর কোনও শ্রমিক থাকে কি না । ভাড়াটে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোয় সঠিক তথ্য দিতে পারেননি ওই কন্ট্রাক্টর ৷ তবে জানা যায়, কাজের খোঁজে সকালে বাঁশদ্রোণী এলাকায় জমায়েত হয় অনেক শ্রমিক ৷ সেখান থেকেই সাতজন ঠিকা শ্রমিককে কাজের বরাত দিয়েছিলেন ৷ খুনের পরদিন সেখানে নজরদারি চালায় পুলিশ । প্রথম দিন পাওয়া যায় তিনজনকে । ঘটনার দিন তারা কোথায় ছিল তা বিস্তারিতভাবে জানে পুলিশ ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঠিক বলছে তারা । পরদিন খোঁজ পাওয়া যায় আরও দু'জনের । তদন্তে জানা যায়, তারাও ঠিক কথা বলছে । আরও দুজনের খোঁজ চলছিল ৷ কন্ট্রাকটরের বয়ানের ভিত্তিতে ক্যানিং থেকে এক ঠিকা শ্রমিককে আটক করে পুলিশ । তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত হয়, সপ্তমজনই খুনের ঘটনায় জড়িত ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরের বৃদ্ধ দম্পতি খুনে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশকে বিশেষ নির্দেশ

শুরু হয় সপ্তমজনের খোঁজ ৷ খতিয়ে দেখা হয় CCTV ফুটেজ ৷ কিন্তু, ওই চত্বরে কলকাতা পুলিশের কোনও CCTV নেই ৷ কিন্তু , অনেকে নিজের বাড়িতে লাগিয়েছেন CCTV ৷ সেখান থেকে ঘটনার দিনের ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ । এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় । স্থানীয় এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংমিস্ত্রি হিসেবে এলাকার বহু বাড়িতেই কাজ করেছে সে । নানা সূত্রে খোঁজখবর দিয়ে দেখা যায়, তার আসল বাড়ি বিহারে ৷ তবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাঁশদ্রোণীতে থাকত । সেখানে হানা দেয় পুলিশ ৷ কিন্তু, খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ তবে তার একটি ছবি পায় পুলিশ ৷ কারণ, বিহারের কাটিহারের ঠিকানা সহ তার ফোন নম্বর দিয়েছিল সেখানকার একজন ৷ এরপরই বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তদন্তকারীরা ৷ তাদের মাধ্যমেই খোঁজ পাওয়া যায় হামরুজ় আলমের । পুলিশকে দেখে হকচকিয়ে যায় সে ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : বিড়ির প্যাকেট কার ? নেতাজিনগরে দম্পতি খুনে খতিয়ে দেখছে পুলিশ

ইতিমধ্যেই হামরুজ় খুনের কথা স্বীকার করছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে 37 হাজার টাকা, বৃদ্ধার মোবাইল ফোন সহ আরও কিছু সামগ্রী । হামরুজ় কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছে, এই খুন সে নিজেই করেছে । আসলে সে জানত, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিঁড়ির দরজা খোলা থাকে ওই বাড়ির । রাত ন'টা নাগাদ বন্ধ করা হয় সেটি । বিষয়টি নিশ্চিত করতে দু'বার রেইকি করেও এসেছিল । আর ঘটনার দিন সে দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই ঢুকে পড়ে ঘরে । তারপর অপেক্ষা করতে থাকে । আর তখনই তার পকেট থেকে পড়ে যায় বিড়ির প্যাকেট । যেটি খুঁজে বের করে পুলিশ কুকুর । তারপর বৃদ্ধা নিচে দরজা বন্ধ করতে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর । শাড়ি গলায় জড়িয়ে খুন করে তাঁকে । তখন টের পাননি দেবাশিসবাবু । কিছুক্ষণ পর সোজা উপরে চলে যায় হামরুজ় ৷ দেবাশিসবাবু তখন সবে রাতের খাবার শেষ করে এসে খাটে বসেছিলেন । প্রথমেই বালিশের তোয়ালে কভার দিয়ে তাঁর মুখ বেঁধে ফেলে হামরুজ় ৷ তারপর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরে দম্পতি খুনের কিনারা, বিহার থেকে গ্রেপ্তার রংমিস্ত্রি

কলকাতা, 6 অগাস্ট: যা ভাবা হয়েছিল তা নয় । দুই থেকে তিনজন নেতাজি নগর জোড়া খুনে জড়িত বলে কলকাতা পুলিশের সন্দেহ ছিল । ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আপাতত কলকাতা পুলিশের মনে হচ্ছে খুনি একজনই । নেতাজি নগরে মৃত দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে কাজ করার সময়ই সে খুনের ছক কষেছিল । কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধান মুরলিধর শর্মা বলেন, "এখনও পর্যন্ত ধৃতকে জেরা করে যা মনে হচ্ছে, তাতে সে ঠিক কথাই বলছে । তবে এখনও জেরার প্রয়োজন আছে । তারপরই বোঝা যাবে আসল ঘটনা ।"

30 জুলাই নেতাজি নগরে বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ 29 জুলাই রাত 10টা থেকে 11টার মধ্যে দিলীপবাবু এবং তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায়কে খুন করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান পুলিশের ৷ সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে বৃদ্ধার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল । হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, পিছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে । সম্ভবত সেটাই মৃত্যুর কারণ । সেই কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে । দোতলার শোবার ঘরে উদ্ধার হয়েছিল দিলীপবাবুর দেহ । তাঁর মুখে গোঁজা ছিল বালিশের একটি তোয়ালে । চাপা দেওয়া ছিল একটি বালিশ । ঘরে থাকা 10 টি আলমারির মধ্যে ন'টাই খোলা ছিল । খোয়া যায় বেশ কিছু গয়না, নগদ প্রায় এক লাখ টাকা, দুটি মোবাইল ফোন । একাধিক তত্ত্ব উঠে এলেও টাকা-পয়সা লুটের জন্যই খুন করা হয়েছে বলে অনুমান করছিল পুলিশ ৷ কারণ, অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, প্রোমোটিং কিংবা অন্য কোনও কারণে খুন হলে এভাবে আলমারি খুলে জিনিসপত্র লুটপাট করা হত না । তবে তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে তা হতে পারে বলেও একটা সন্দেহ ছিল ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরে বাড়ি থেকে উদ্ধার বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ

যদিও কোনও কোনও মহলের সন্দেহ ছিল, প্রোমোটিংয়ের জন্য বাড়ি না দেওয়ার জেরেই এই খুন । সন্দেহ গতি পায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর । তিনি বলেন, “কারও সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া যাবে না । যদি কেউ মনে করে থাকে একাকী বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে রেহাই পেয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করছে ।" যদিও দুঁদে গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল, টাকা পয়সা হাতানোর জন্যই খুন করা হয়েছে ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজি নগর খুনের নেপথ্যে রং মিস্ত্রি? জোরদার হচ্ছে সন্দেহ

খুনের ঘটনায় একযোগে তদন্ত নামে কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি রবারি এবং হোমিসাইড শাখা । সঙ্গে গোয়েন্দা প্রধানের প্রত্যক্ষ সক্রিয়তা ছিল । পুলিশ জানতে পারে, ঘটনার দিন পাঁচেক আগে পর্যন্ত দেবাশিসবাবুর বাড়িতে রং এবং ছাদ সারাইয়ের কাজ হয়েছিল । তা হয়েছিল এক ঠিকাদারের মাধ্যমে । ওই ঠিকাদার বৃদ্ধের পূর্ব পরিচিত । দেবাশিসবাবু একটি সময় ছাদ সারানোর ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সেই সূত্রে এই ধরনের মিস্ত্রি এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর । তদন্তকারীরা ওই বাড়ির পরিচারিকা লতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বাড়িতে কাজ করানোর সময়ও অনেকটাই খোলামেলা ভাবে মিশতেন ওই দম্পতি । মিস্ত্রিদের সামনেই আলমারি খুলে টাকাপয়সা বের করতেন ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজি নগরে খুনের জের, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে প্রবীণদের ডেটাবেস তৈরির কাজ শুরু

তদন্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সূত্র ছিল স্বপ্নার মোবাইল ফোন । সেটির টাওয়ার লোকেশন শেষ পাওয়া গেছিল বাঁশদ্রোণী এলাকায় ৷ পুলিশ নিশ্চিত ছিল, মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে খুনি । সেই সূত্রেই রং এবং ছাদ সারানোর কন্ট্রাক্টরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় । জানতে চাওয়া হয়, বাঁশদ্রোণী এলাকায় তাঁর কোনও শ্রমিক থাকে কি না । ভাড়াটে শ্রমিক দিয়ে কাজ করানোয় সঠিক তথ্য দিতে পারেননি ওই কন্ট্রাক্টর ৷ তবে জানা যায়, কাজের খোঁজে সকালে বাঁশদ্রোণী এলাকায় জমায়েত হয় অনেক শ্রমিক ৷ সেখান থেকেই সাতজন ঠিকা শ্রমিককে কাজের বরাত দিয়েছিলেন ৷ খুনের পরদিন সেখানে নজরদারি চালায় পুলিশ । প্রথম দিন পাওয়া যায় তিনজনকে । ঘটনার দিন তারা কোথায় ছিল তা বিস্তারিতভাবে জানে পুলিশ ৷ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঠিক বলছে তারা । পরদিন খোঁজ পাওয়া যায় আরও দু'জনের । তদন্তে জানা যায়, তারাও ঠিক কথা বলছে । আরও দুজনের খোঁজ চলছিল ৷ কন্ট্রাকটরের বয়ানের ভিত্তিতে ক্যানিং থেকে এক ঠিকা শ্রমিককে আটক করে পুলিশ । তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ মোটামুটি নিশ্চিত হয়, সপ্তমজনই খুনের ঘটনায় জড়িত ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরের বৃদ্ধ দম্পতি খুনে উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশকে বিশেষ নির্দেশ

শুরু হয় সপ্তমজনের খোঁজ ৷ খতিয়ে দেখা হয় CCTV ফুটেজ ৷ কিন্তু, ওই চত্বরে কলকাতা পুলিশের কোনও CCTV নেই ৷ কিন্তু , অনেকে নিজের বাড়িতে লাগিয়েছেন CCTV ৷ সেখান থেকে ঘটনার দিনের ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ । এক ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয় । স্থানীয় এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংমিস্ত্রি হিসেবে এলাকার বহু বাড়িতেই কাজ করেছে সে । নানা সূত্রে খোঁজখবর দিয়ে দেখা যায়, তার আসল বাড়ি বিহারে ৷ তবে বাড়ি ভাড়া নিয়ে বাঁশদ্রোণীতে থাকত । সেখানে হানা দেয় পুলিশ ৷ কিন্তু, খোঁজ পাওয়া যায়নি ৷ তবে তার একটি ছবি পায় পুলিশ ৷ কারণ, বিহারের কাটিহারের ঠিকানা সহ তার ফোন নম্বর দিয়েছিল সেখানকার একজন ৷ এরপরই বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে তদন্তকারীরা ৷ তাদের মাধ্যমেই খোঁজ পাওয়া যায় হামরুজ় আলমের । পুলিশকে দেখে হকচকিয়ে যায় সে ৷

এই সংক্রান্ত আরও খবর : বিড়ির প্যাকেট কার ? নেতাজিনগরে দম্পতি খুনে খতিয়ে দেখছে পুলিশ

ইতিমধ্যেই হামরুজ় খুনের কথা স্বীকার করছে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ ৷ তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে 37 হাজার টাকা, বৃদ্ধার মোবাইল ফোন সহ আরও কিছু সামগ্রী । হামরুজ় কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছে, এই খুন সে নিজেই করেছে । আসলে সে জানত, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিঁড়ির দরজা খোলা থাকে ওই বাড়ির । রাত ন'টা নাগাদ বন্ধ করা হয় সেটি । বিষয়টি নিশ্চিত করতে দু'বার রেইকি করেও এসেছিল । আর ঘটনার দিন সে দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই ঢুকে পড়ে ঘরে । তারপর অপেক্ষা করতে থাকে । আর তখনই তার পকেট থেকে পড়ে যায় বিড়ির প্যাকেট । যেটি খুঁজে বের করে পুলিশ কুকুর । তারপর বৃদ্ধা নিচে দরজা বন্ধ করতে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তাঁর উপর । শাড়ি গলায় জড়িয়ে খুন করে তাঁকে । তখন টের পাননি দেবাশিসবাবু । কিছুক্ষণ পর সোজা উপরে চলে যায় হামরুজ় ৷ দেবাশিসবাবু তখন সবে রাতের খাবার শেষ করে এসে খাটে বসেছিলেন । প্রথমেই বালিশের তোয়ালে কভার দিয়ে তাঁর মুখ বেঁধে ফেলে হামরুজ় ৷ তারপর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন করে ।

এই সংক্রান্ত আরও খবর : নেতাজিনগরে দম্পতি খুনের কিনারা, বিহার থেকে গ্রেপ্তার রংমিস্ত্রি

Intro:কলকাতা, 6 অগাস্ট: যেমনটা ভাবা হয়েছিল সেটা নয়। কলকাতা পুলিশের সন্দেহ ছিল দুই থেকে তিনজন নেতাজি নগর জোড়া খুনে জড়িত। ধৃতকে জিজ্ঞাসাবাদের পর আপাতত কলকাতা পুলিশের মনে হচ্ছে দু-তিনজন নয়, খুনি একজনই। নেতাজি নগরে দেবাশীষ মুখোপাধ্যায়ের বাড়িতে কাজ করার সময়েই সে ছকে ফেলে পরিকল্পনা। আর তারপরেই রহস্যজনক সেই খুন! কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দাপ্রধান মুরলীধর শর্মা বলছেন, “ এখনো পর্যন্ত ধৃতকে জেরা করে যা মনে হচ্ছে, তাতে সে ঠিক কথাই বলছে। তবে এখনো জেরার প্রয়োজন আছে। তারপরেই বোঝা যাবে আসল ঘটনা।"Body:কিন্তু রহস্যজনক এই খুনের পুলিশ কিনারা করলো কি করে?

এই ঘটনার একযোগে তদন্ত করে কলকাতা পুলিশের অ্যান্টি ডাকাতি এবং হোমিসাইড শাখা। সঙ্গে গোয়েন্দা প্রধানের প্রত্যক্ষ সক্রিয়তা ছিলই। এই তদন্তে বিশেষ সাহায্য করেছে খুন হওয়া স্বপ্নাদেবীর মোবাইল ফোন। খুনের পরে জানা যায় এই মোবাইলের টাওয়ার লোকেশন শেষ পাওয়া গেছে বাঁশদ্রোণী এলাকায়। প্রসঙ্গত, খুনের পর খোয়া গিয়েছিল এই মোবাইল ফোনটিও। পুলিশের স্পষ্ট ধারণা ছিল, মোবাইল ফোনটি নিয়ে গেছে খুনি। মোবাইল ফোনের টাওয়ার লোকেশনের বিষয়টি ইটিভি ভারত আগেই জানত। কিন্তু তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করার হয়নি তা। সেই সূত্রেই রং এবং ছাদ সাহেবের কন্ট্রাকটরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জানতে চাওয়া হয়, বাঁশদ্রোণী এলাকায় তার কোন লেবার থাকে। ভাড়াটে লেবার দিয়ে কাজ করানোয় সঠিক তথ্য দিতে পারেনি ওই কন্ট্রাকটর। তার থেকেই পুলিশ জানতে পারে, কাজের খোঁজে সাত সকালে বাঁশদ্রোনী এলাকায় জমায়েত হওয়া লেবারদের থেকেই তিনি মিস্ত্রী খুঁজে নিয়েছিলেন। খুনের পর দিন সকালেই সেখানে নজরদারি চালায় পুলিশ। প্রথম দিন পাওয়া যায় তিন জনকে। তারা ওই দিন ওই সময় কোথায় ছিল সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেয়। পুলিশ খোঁজ নিয়ে দেখো ঠিক বলছে তারা। পরের দিন খোঁজ পাওয়া যায় আরও দু'জনের। তারাও বলছে ঠিক কথা। পুলিশের কাছে ওই কন্ট্রাক্টর জানিয়েছিলেন, মোট সাতজন ঠিকা শ্রমিককে দিয়ে কাজ করেছিলেন তিনি‌। পুলিশের তদন্তে বাকি থেকে যায় দুজন। আর এখানেই বাধে গন্ডগোল। ওই কন্ট্রাকটরের কথার ভিত্তিতে পুলিশ ক্যানিং থেকে আটক করে এক ঠিকা শ্রমিককে। সেই সূত্রেই গত শুক্রবার কলকাতা পুলিশের ধারণা হয় ব্রেক থ্রু হয়েছে খুনের। তাকে নানাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে বোঝা যায় খুনী ওই ব্যক্তি নয়। এবার সপ্তম লোকের খোঁজে নামে পুলিশ। শুরু হয় CCTVর খোঁজ। পুলিশ জানতে পারে, ওই চত্বরে কলকাতা পুলিশের কোন সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেক ব্যক্তি বাড়িতে লাগিয়েছেন সিসিটিভি। সেই ফুটেজ সংগ্রহ করে পুলিশ। চিহ্নিত করা যায় এক ব্যক্তিকে। স্থানীয় এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রংমিস্ত্রি হিসেবে এলাকায় বহু বাড়িতেই কাজ করেছে সে। নানা সূত্রে খোঁজখবর দিয়ে দেখা যায় ওই ব্যক্তির বাড়ি বাঁশদ্রোনীতে। এবার খোঁজ খবর নামে পুলিশ। নেতৃত্ব দেন স্বয়ং গোয়েন্দা প্রধান। পুলিশ আগেই জেনেছিল ওই ব্যক্তি বিহারের। খোঁজখবর দিয়ে তার ভাড়া বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, বেপাত্তা রয়েছে হামরুজ আলম। এবার বিশেষ পদ্ধতিতে বের করা হয় তার ছবি। কারণ, বিহারের কাটিহারের তার ঠিকানা সহ ফোন নম্বর এক ব্যক্তি দিয়েছিল ওই এলাকায়। এবার বিহার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে কলকাতা পুলিশ। তাদের মাধ্যমেই খোঁজ মেলে হামরুজের। তখন সে বাজারে গিয়েছিল। কলকাতা পুলিশকে দেখে হতচকিত হয়ে যায় হামরুজ।

29 জুলাই। রাত 10 টা থেকে 11 টার মধ্যে খুন হন বৃদ্ধ দম্পতি দিলীপ মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী স্বপ্না মুখোপাধ্যায়। বেশ কয়েকটি তত্ত্ব উঠে এলেও, ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা দেখে পুলিশ প্রথম থেকেই সন্দেহ করছিল টাকা পয়সা লুঠের জন্যই এই খুন। ইটিভি ভারতের খবরে প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল সেই সন্দেহের কথা। যদিও কোনো কোনো মহল থেকে সন্দেহ করা হয়, প্রোমোটিংয়ের জন্য তার বাড়ি না দেওয়ার জেরে এই খুন। সন্দেহ গতি পায় মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পর। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “কারোর সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া যাবে না। যদি কেউ মনে করে থাকে, একাকী বৃদ্ধ দম্পতি খুন করে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে রেহাই পেয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করছে।" যদিও দুঁদে গোয়েন্দাদের লম্বা নাক এবং পোড় খাওয়া চোখ বলছিল, এই খুনের উদ্দেশ্য টাকা পয়সা হাতানো।

নেতাজিনগরের অশোকা অ্যাভিনিউয়ের দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের দোতলা বাড়িতে পৌঁছে, সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে দিলীপবাবুর স্ত্রী স্বপ্নার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল। হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল পেছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে। সম্ভবত সেটাই মৃত্যুর কারণ । চাপের কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে। দোতলার সবার ঘরে উদ্ধার হয় দীলিপ বাবুর দেহ। তার মুখে গোঁজা ছিল বালিশের কভার দেওয়ার একটি তোয়ালে। চাপা দেওয়া ছিল একটি বালিশ। ঘরে থাকা 10 টি আলমারির মধ্যে ন'টাই খোলা ছিল। খোয়া যায় বেশ কিছু গয়না, প্রায় এক লাখ টাকা নগদ, দুটি মোবাইল ফোন। অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, প্রমোটিং কিংবা অন্য কোনও কারণে খুন হলে এভাবে আলমারি খুলে জিনিসপত্র লুটপাট করা হতো না। যদিও সেই সন্দেহ খুব একটা উড়িয়ে দেয়নি পুলিশ। তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রে এ কাজ করা হয়ে থাকতে বলেও একটা সন্দেহ ছিলই।

পুলিশ জানতে পারে ঘটনার দিন পাঁচেক আগে পর্যন্ত দেবাশিষবাবুর বাড়িতে রং এবং ছাদ সারাইয়ের কাজ হয়। এই কাজ করা হয়েছিল এক ঠিকাদারের মাধ্যমে। ওই ঠিকাদার বৃদ্ধের পূর্ব পরিচিত। আসলে দেবাশিসবাবু একটা সময় রুফ রিপেয়ারিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। সেই সূত্রে এই ধরনের মিস্ত্রি এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর। তদন্তকারীরা ওই বাড়ির পরিচারিকা লতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারে, বাড়িতে কাজ করানোর সময়েও অনেকটাই খোলামেলা ভাবে মিশতেন ওই দম্পতি। মিস্ত্রিদের সামনেই আলমারি খুলে টাকাপয়সা বের করতেন। Conclusion:কলকাতা পুলিশের দাবি, ইতিমধ্যেই হামরুজ স্বীকার করছে খুনের কথা। তার বাড়ি থেকে উদ্ধার হয়েছে 37 হাজার টাকা, বৃদ্ধার মোবাইল ফোন সহ আরো কিছু সামগ্রী। হামরুজ কলকাতা পুলিশকে জানিয়েছে, এই খুন সে নিজেই করেছে। আসলে সে জানত, একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সিড়ির দরজা খোলা থাকে ওই বাড়ির। রাত ন'টা নাগাদ বন্ধ করা হয় সেটি। বিষয়টি বুঝতে ঘটনার আগে দুবার রেইকি করে এসেছিল হামরুজ। আর ঘটনার দিন সে দরজা বন্ধ হওয়ার আগেই ঢুকে পড়ে ঘরে। তারপর শিকারির মতো অপেক্ষা করতে থাকে। আর তখনই তার পকেট থেকে পড়ে যায় বিড়ির প্যাকেট। যেটি খুঁজে বের করে পুলিশ কুকুর। তারপর বৃদ্ধা নিচে দরজা বন্ধ করতে এলেই ঝাঁপিয়ে পড়ে তার ওপর। বৃদ্ধার শাড়ি গলায় জড়িয়ে খুন করে তাকে। তখন টের পাননি দেবাশিসবাবু। কিছুক্ষণ পরে সোজা ওপরে চলে যায় হামরুজ। দেবাশীষবাবুকে জিজ্ঞাসা করে কোথায় গেছে টাকা পয়সা। তিনি তখন সবে রাতের খাবার শেষ করে এসে বসেছিলেন খাটে। প্রথমেই বালিশের তোয়ালে কভার দিয়ে তাঁর মুখ বেঁধে ফেলে হামরুজ। তারপর মুখে বালিশ চাপা দিয়ে খুন। পরের ঘটনা ইতিহাস। কলকাতার সাম্প্রতিক সময়ের সবথেকে রহস্যজনক খুন।



Last Updated : Aug 6, 2019, 6:22 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.