কলকাতা, 9 অক্টোবর: এক সময়ের জনপ্রিয় এবং সচল ট্রাম এখন উঠে যাওয়ার মুখে ৷ বর্তমানে ট্রাম পরিবহণ (Eco Friendly Tram Transport) রুগ্ন মাধ্যমে পরিণত হয়েছে । তাই ট্রাম বাঁচাতে এবার জনস্বার্থ মামলা দায়ের হল কলকাতা হাইকোর্টে । এই মামলাটি দায়ের করলেন কলকাতারই আইনজীবী সুলগ্না মুখোপাধ্যায় ।
দুর্গাপুজোর ছুটির আগে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব এবং বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের বেঞ্চে এই জনস্বার্থ মামলাটি দায়ের করা হয় । আইনজীবী সুলগ্না মুখোপাধ্যায় মামলাটি দায়ের করলেও তাঁর হয়ে একদল সম-মনোভাবাপন্ন আইনজীবী মামলাটি লড়ছেন । অন্যদিকে রাজ্যের পক্ষে রয়েছেন অ্যাডভোকেট জেনারেল এসএন মুখোপাধ্যায় । ইতিমধ্যে ট্রামের ভবিষ্যৎ নিয়ে রাজ্য সরকারের নীতি এবং পরিকল্পনা সম্বলিত একটি রিপোর্ট আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
এই প্রসঙ্গে আইনজীবী বলেন, "আদালত মামলাটি গ্রহণ করেছে । ট্রাম নিয়ে রাজ্য সরকারের বর্তমান এবং ভবিষৎ পরকল্পনা ও নীতিগুলি ঠিক কী তা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে একটি রিপোর্ট আকারে আদালতে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী 16 ডিসেম্বর ।"
আরও পড়ুন: ট্রাম বাঁচাতে সমীক্ষা, আশার আলো দেখছেন গবেষকরা
হঠাৎ তিনি ট্রাম নিয়ে এই জনস্বার্থ মামলা কেন দায়ের করলেন ? এর উত্তরে সুলগ্নাদেবী বলেন, "আমি দক্ষিণ কলকাতায় থাকি । তাই ছোট থেকে ট্রাম আমার জীবনের একটা অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ । বর্তমানে পৃথিবীর প্রথম সারির শহরগুলিতে ট্রাম ফিরে আসছে এবং রমরম করে চলছে ৷ তখন আমাদের শহরে ট্রামের নেটওয়ার্ক থাকা সত্ত্বেও তা আজ ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে । বর্তমানে দু'টি রুট ছাড়া বাকিগুলোতে লাল বাতি জ্বলেছে ।" স্বাভাবিকভাবে, তাই যত ট্রামের সংখ্যা কমছে, ততই গুরুত্ব কমছে ট্রাম ডিপোগুলিরও । একের পর এক ট্রাম কোম্পানির জমি হয় বিক্রি হচ্ছে, নাহলে বিভিন্ন হাব তৈরি করতে অধিগ্রহণ করা হচ্ছে । আবার কোথাও ব্রিজের ক্ষতি হওয়ার দোহাই দিয়ে উপড়ে ফেলা হচ্ছে ট্রাম ট্র্যাক । কখনও ট্রাম যানজটের সৃষ্টি করে বলে বন্ধ করা হয়েছে ট্রাম চলাচল । বর্তমান পরিস্থিতিতে ট্রামের প্রাসঙ্গিকতা যে এতটুকুও হারিয়ে যায়নি এবং পুনরায় ট্রামকে সচল করা উচিত, সেই উদ্দেশ্যে এই জনস্বার্থ মামলা, জানালেন আইনজীবী ৷
ট্রাম বাঁচাতে আদালতের কাছে সুলগ্নাদেবী এবং তাঁর সতীর্থদের আবেদন- ট্রামের রুটগুলিকে আবার ঠিকঠাক করে ট্রাম চালু করতে হবে ৷ ট্রাম ডিপোর যেসব জমি বিক্রি হয়ে গিয়েছে, সেই বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করতে হবে ৷ সেই জমি বিক্রির অর্থ কোন খাতে ব্যয় করা হয়েছে, তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য আদালতে জানাতে হবে ৷ ট্রাম ডিপোর জমি বিক্রি বা সেই জমিকে শিল্প হাবের জন্য ব্যবহার করা যাবে না ।
আরও পড়ুন: খিদিরপুর থেকে ধর্মতলা রুটের ট্রাম পরিষেবা চালু 'বিশ বাঁও জলে'
ট্রাম গবেষক ও ট্রামপ্রেমী ডঃ দেবাশিস ভট্টাচার্য ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশন-এর (Calcutta Tram Users Association) সঙ্গে যুক্ত ৷ তিনি বললেন, "আইনজীবী সুলগ্না মুখোপাধ্যায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে ট্রাম নিয়ে এই জনস্বার্থ মামলাটি করেছেন । আমাদের পক্ষ থেকে মামলাটি করতে যা যা তথ্যের প্রয়োজন ছিল তা দিয়েছি । কলকাতায় ট্রামকে স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে আমরা দীর্ঘ দিন ধরে লড়াই করে চলেছি । তাই ট্রামের মতো পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ বাঁচাতে তিনি নিজের উদ্যোগে এই মামলাটি করছেন ৷ আমরা আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে তাঁকে স্বাগত জানাই । ভবিষ্যতেও সব রকম সাহায্য করে আমরা সুলগ্নাদেবীর পাশে থাকার চেষ্টা করব ।"