ETV Bharat / state

"সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য স্পেশালাইজ়ড ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন"

বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সমাজে এখনও অনেক সচেতনার প্রয়োজন । ইন্টারন‍্যাশনাল ডে অফ পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিসে এমনই আবেদন রেখেছেন ডক্টর মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়
author img

By

Published : Dec 4, 2019, 4:26 AM IST

কলকাতা, 4 ডিসেম্বর : বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে স্পেশালাইজ়ড ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন । যেখানে তাদের স্পেশাল কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবে । ইন্টারন‍্যাশনাল ডে অফ পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিসে এমনই আবেদন রেখেছেন ডক্টর (PHD) মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি । এর পাশাপাশি পারসন উইথ ডিজ়েবিলিটিদের নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করে চলেছেন । এমন পরিচয়ের পাশাপাশি ২০১৯-এর বেস্ট রিসার্চ ইন দ‍্য এরিয়া অফ ডিজ়েবিলিটি-র জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এম্পাওয়ার্মেন্ট অফ পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিস সম্মানের প্রাপকও তিনি ।

পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিস, পরিস্থিতি এখন কী রকম ?


মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, গত বছর থেকে এ বছর মাঝখানে ৩৬৪ দিন আমরা যাঁরা কাজ করি, অনেক জায়গায় প্রত্যেকদিনই বুঝি কিছু না কিছু ভাবে সবাই একটু একটু করে এগিয়ে আসছে সাহায্যের জন্য । একটু একটু করে হাত বাড়াচ্ছে । যার ফলে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষরা, যাঁরা নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে রয়েছেন, তাঁদের পায়ের তলার মাটি একটু একটু করে শক্ত হচ্ছে । এখনকার পরিস্থিতি একদম ঠিকঠাক আছে, যতটা পাওয়ার ততটাই পাওয়া যাচ্ছে সমাজ থেকে এ কথা বলতে পারব না । কিন্তু, আমরা একটু করে সাহায্যের আশ্বাস পাচ্ছি সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে । এর ফলে যাঁরা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করি, তাঁদের কিছু সুবিধা অবশ্যই হচ্ছে । আগের বছর থেকে এ বছর প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সাহায্যের হাত পেয়েছি, আগামী বছর সবার কাছে থেকে আরও কিছু পাব বলে আশা রাখি । সমাজ, সরকারি স্তরের সাহায্য নয়, একেবারে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আশা করছি ।

প্রতিবন্ধকতা মানে হচ্ছে অন্ধকার । এই বিষয়টি থেকে একেবারে বেরিয়ে আমরা আলো দেখছি । সেই আলো থেকে প্রতিদিন অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ছে । আগে যা ছিল তার থেকে গ্রহণযোগ্যতা যেহেতু বেড়েছে, তাই আরও একটু শক্ত হচ্ছে ভবিষ্যতের মাটি‌ । এই ধরনের মানুষদের কাজের সুযোগ বাড়ছে । রোজকার মেলায় এখন প্লেসমেন্ট দেওয়ার জন্য ব‍্যবস্থা হয়‌ । এখানে কতজনের ঠিকঠাক প্লেসমেন্ট হল বা প্লেসমেন্টেরর জন্য তারা উপযুক্ত কি না, তার থেকে এই উদ্যোগটিই বড় বিষয় । যদি বলি, এদের ভবিষ্যত আর কোনও সমস্যা নেই, তা নয় । বিশেষভাবে যারা সক্ষম তাদের ভবিষ্যৎ একেবারে সুরক্ষিত না হলেও মানুষ আজকাল বোঝে । সাহায্য করে, আগের পরিস্থিতি অনেকটাই পালটেছে ।

তা হলে, সমস্যা কোথায়?


মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর, সমস্যা রয়েছে । এমন বলতে পারি না যে পারসন উইথ ডিজ়েবিলিটিদের প্রতি সমাজের নেগেটিভ অ্যাটিটিউড নেই । প্রতিটি স্কুল-কলেজে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি মানুষকে বোঝানোর যে তারাও আর পাঁচটা মানুষের মতোই । কিন্তু, তার মানে এই নয় যে সমস্যা নেই । পারসন উইথ ডিজ়েবিলিটিদের জন্য সত্যিকারের সেই লেভেলের অ্যাটিটিউড তৈরি হতে আরও অনেকটা এগোতে হবে আমাদের । সমাজের প্রতিটি স্তরেই সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হবে । হাত বাড়ানো বলতে করুণা নয়, সিমপ্যাথি ছাড়া এমপ‍্যাথির হাত বাড়ানো দরকার । যে মানুষটি চলতে পারেন না, তিনি বাকি দু'টি হাত দিয়েও অনেক কিছু করতে পারেন । অনেক কিছু করার সেই অবস্থা পর্যন্ত যেতে পারেন । এর বোধ কিন্তু অন‍্য মহলের থাকা দরকার । সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে আগের থেকে অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ছে । কিন্তু, তার মানে এটা নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে । তাহলে আমাদের আর এই যুদ্ধ করতে হত না ।

ডিজ়েবিলিটি মানে, যার যতটুকু ক্ষমতা ততটুকু দিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, তা কিন্তু আমাদের সমাজে সত্যি হচ্ছে না । যার যতটুকু ক্ষমতা, সেটুকু বোঝার মতো ক্যাপাসিটি বোধ হয় উলটো দিক থেকে নন ডিজ়েবেল পার্সনদের সকলের নেই । সবার পক্ষ থেকে আরও অনেক বেশি সচেতনতা দরকার । ধরুন, অটিজ়ম । অটিজ়মের একটি ছেলে বা মেয়ে কথা বলছে না । কিন্তু, অনায়াসে কাঁথায় অসম্ভব সুন্দর স্টিচ করে দিতে পারছে । তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সেলাই করতে পারবে? সে উত্তর দিল না । সে নাকচ হয়ে গেল । কিন্তু বুঝতে হবে যে, এর মধ্য থেকে হ্যাঁ পারবটা অন্য রকম ভাবে বেরিয়ে আসবে । হয়তো হ্যাঁ পারব বলে নয় । এ রকম উদাহরণ প্রায় সব জায়গায় রয়েছে । ওদের অ্যাক্সেস করার জন্য সঠিকভাবে বোঝার ক্ষমতাটা এখনও কিন্তু সমাজের সব স্তরে হয়নি । আমাদের আরও আরও আরও এমন দরকার, যাতে সবার বন্ধুত্বের হাত আমরা পেতে পারি ।

কীভাবে সম্ভব?


সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ক্যাম্প হচ্ছে‌‌ । আমার মনে হয়, প্রত‍্যেকটি টিভি, রেডিয়ো, মাস মিডিয়ায় বছরের একদিন নয় । প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাওয়া উচিত । কেউ হয়তো সিরিয়াল দেখেন । সেখানেও কিছু সচেতনতা দরকার । যেমন, ডিজ়েবিলিটির একটি চরিত্র দিয়ে হাস‍্যকৌতূকের চরিত্র করা হলে, তার প্রতিবাদ দরকার । এটাও একটি অ্যাওয়ারনেস । অর্থাৎ প্রত্যেক সময়, প্রত্যেক জায়গায় অ্যাওয়ারনেস দরকার । এটার জন্য সরকারের তরফে অনেক বেশি অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্প করতে হবে ।

বিভিন্ন NGO বা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচার যতটা হয়, ততটা কিন্তু প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রচার হয় না । সেখানেও প্রচার বেশিমাত্রায় দরকার । অনেক সময় পুলিশকেও বোঝাতে হয়, ডিজ়েবিলিটির মানে কী? ডিজ়েবিলিটিকে সাপোর্টের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি জায়গায় অনেক বেশি প্রচারের প্রয়োজন ।

স্বাস্থ্য, শিক্ষার বিষয়টি ?


সরকারি-বেসরকারি সব বড় হাসপাতালগুলিতে, এই বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য বেড রাখা যাবে না, যদি কিছু করে । এই ধরনের মানুষকে যে একটু অন্যভাবে চিকিৎসা করতে হবে, সেই অ্যাওয়ারনেস নেই । হাসপাতালগুলিতে একটি সেক্টর রাখা উচিত, যেখানে এদের জন্য স্পেশাল কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবে । যারা একটু সচেতন, যারা বুঝতে পারবেন, কোন ধরনের ডিজ়েবিলিটিতে, কীভাবে সামলাতে হবে । এর জন্য একটা সেকশন রাখা দরকার ।


আর এদের মেইনস্ট্রিমের এডুকেশন নেওয়ার ক্ষমতা যদি থাকে, সেটা খুঁজে নেওয়ার জন্য সঠিক লোকের প্রয়োজন । এটা করে যাতে মেইনস্ট্রিমের এডুকেশনের সুযোগ দেওয়া হয় । যদি মেইনস্ট্রিমে খানিকটা যেতে পারে, যদি সে এইট পাস করতে পারে, স্কুল ফাইনাল পাস করতে পারে, তা হলে ভবিষ্যৎ সুগম হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে । যদি এভাবে সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য কোনওভাবে ভবিষ্যৎ সুগম হয়ে উঠতে পারে । মেইনস্ট্রিম এডুকেশনের জন্য সমস্ত লেভেলে একেবারে স্পষ্টভাবে সঠিক অ্যাটিটিউড চাই, যাতে বিশেষভাবে সক্ষম এমনটা বুঝে নিয়ে, তাদের জন্য বাকি সুবিধা দেওয়া যায় ।

সরকারের এই ক্ষেত্রে পলিসি রয়েছে, কাউকে ফেরাতে পারবে না‌ । এই পলিসি কতটা ভালো, আমি জানি না যতক্ষণ না আমরা নিজেদের সেই ভাবে তৈরি করতে পারছি । আটকে রাখার জন্য নয়, সঠিক হোমের দরকার । যেখানে মা-বাবা নিশ্চিন্তে তার সন্তানকে রেখে থাকতে পারবেন ।

কলকাতা, 4 ডিসেম্বর : বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য সরকারি- বেসরকারি হাসপাতালে স্পেশালাইজ়ড ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন । যেখানে তাদের স্পেশাল কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবে । ইন্টারন‍্যাশনাল ডে অফ পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিসে এমনই আবেদন রেখেছেন ডক্টর (PHD) মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায় । কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি । এর পাশাপাশি পারসন উইথ ডিজ়েবিলিটিদের নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করে চলেছেন । এমন পরিচয়ের পাশাপাশি ২০১৯-এর বেস্ট রিসার্চ ইন দ‍্য এরিয়া অফ ডিজ়েবিলিটি-র জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এম্পাওয়ার্মেন্ট অফ পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিস সম্মানের প্রাপকও তিনি ।

পারসন্স উইথ ডিজ়েবিলিটিস, পরিস্থিতি এখন কী রকম ?


মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, গত বছর থেকে এ বছর মাঝখানে ৩৬৪ দিন আমরা যাঁরা কাজ করি, অনেক জায়গায় প্রত্যেকদিনই বুঝি কিছু না কিছু ভাবে সবাই একটু একটু করে এগিয়ে আসছে সাহায্যের জন্য । একটু একটু করে হাত বাড়াচ্ছে । যার ফলে বিশেষভাবে সক্ষম মানুষরা, যাঁরা নানান প্রতিবন্ধকতা নিয়ে রয়েছেন, তাঁদের পায়ের তলার মাটি একটু একটু করে শক্ত হচ্ছে । এখনকার পরিস্থিতি একদম ঠিকঠাক আছে, যতটা পাওয়ার ততটাই পাওয়া যাচ্ছে সমাজ থেকে এ কথা বলতে পারব না । কিন্তু, আমরা একটু করে সাহায্যের আশ্বাস পাচ্ছি সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে । এর ফলে যাঁরা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করি, তাঁদের কিছু সুবিধা অবশ্যই হচ্ছে । আগের বছর থেকে এ বছর প্রতিদিন কোথাও না কোথাও সাহায্যের হাত পেয়েছি, আগামী বছর সবার কাছে থেকে আরও কিছু পাব বলে আশা রাখি । সমাজ, সরকারি স্তরের সাহায্য নয়, একেবারে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আশা করছি ।

প্রতিবন্ধকতা মানে হচ্ছে অন্ধকার । এই বিষয়টি থেকে একেবারে বেরিয়ে আমরা আলো দেখছি । সেই আলো থেকে প্রতিদিন অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ছে । আগে যা ছিল তার থেকে গ্রহণযোগ্যতা যেহেতু বেড়েছে, তাই আরও একটু শক্ত হচ্ছে ভবিষ্যতের মাটি‌ । এই ধরনের মানুষদের কাজের সুযোগ বাড়ছে । রোজকার মেলায় এখন প্লেসমেন্ট দেওয়ার জন্য ব‍্যবস্থা হয়‌ । এখানে কতজনের ঠিকঠাক প্লেসমেন্ট হল বা প্লেসমেন্টেরর জন্য তারা উপযুক্ত কি না, তার থেকে এই উদ্যোগটিই বড় বিষয় । যদি বলি, এদের ভবিষ্যত আর কোনও সমস্যা নেই, তা নয় । বিশেষভাবে যারা সক্ষম তাদের ভবিষ্যৎ একেবারে সুরক্ষিত না হলেও মানুষ আজকাল বোঝে । সাহায্য করে, আগের পরিস্থিতি অনেকটাই পালটেছে ।

তা হলে, সমস্যা কোথায়?


মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উত্তর, সমস্যা রয়েছে । এমন বলতে পারি না যে পারসন উইথ ডিজ়েবিলিটিদের প্রতি সমাজের নেগেটিভ অ্যাটিটিউড নেই । প্রতিটি স্কুল-কলেজে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি মানুষকে বোঝানোর যে তারাও আর পাঁচটা মানুষের মতোই । কিন্তু, তার মানে এই নয় যে সমস্যা নেই । পারসন উইথ ডিজ়েবিলিটিদের জন্য সত্যিকারের সেই লেভেলের অ্যাটিটিউড তৈরি হতে আরও অনেকটা এগোতে হবে আমাদের । সমাজের প্রতিটি স্তরেই সেক্ষেত্রে আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হবে । হাত বাড়ানো বলতে করুণা নয়, সিমপ্যাথি ছাড়া এমপ‍্যাথির হাত বাড়ানো দরকার । যে মানুষটি চলতে পারেন না, তিনি বাকি দু'টি হাত দিয়েও অনেক কিছু করতে পারেন । অনেক কিছু করার সেই অবস্থা পর্যন্ত যেতে পারেন । এর বোধ কিন্তু অন‍্য মহলের থাকা দরকার । সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে আগের থেকে অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ছে । কিন্তু, তার মানে এটা নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে । তাহলে আমাদের আর এই যুদ্ধ করতে হত না ।

ডিজ়েবিলিটি মানে, যার যতটুকু ক্ষমতা ততটুকু দিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, তা কিন্তু আমাদের সমাজে সত্যি হচ্ছে না । যার যতটুকু ক্ষমতা, সেটুকু বোঝার মতো ক্যাপাসিটি বোধ হয় উলটো দিক থেকে নন ডিজ়েবেল পার্সনদের সকলের নেই । সবার পক্ষ থেকে আরও অনেক বেশি সচেতনতা দরকার । ধরুন, অটিজ়ম । অটিজ়মের একটি ছেলে বা মেয়ে কথা বলছে না । কিন্তু, অনায়াসে কাঁথায় অসম্ভব সুন্দর স্টিচ করে দিতে পারছে । তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সেলাই করতে পারবে? সে উত্তর দিল না । সে নাকচ হয়ে গেল । কিন্তু বুঝতে হবে যে, এর মধ্য থেকে হ্যাঁ পারবটা অন্য রকম ভাবে বেরিয়ে আসবে । হয়তো হ্যাঁ পারব বলে নয় । এ রকম উদাহরণ প্রায় সব জায়গায় রয়েছে । ওদের অ্যাক্সেস করার জন্য সঠিকভাবে বোঝার ক্ষমতাটা এখনও কিন্তু সমাজের সব স্তরে হয়নি । আমাদের আরও আরও আরও এমন দরকার, যাতে সবার বন্ধুত্বের হাত আমরা পেতে পারি ।

কীভাবে সম্ভব?


সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ক্যাম্প হচ্ছে‌‌ । আমার মনে হয়, প্রত‍্যেকটি টিভি, রেডিয়ো, মাস মিডিয়ায় বছরের একদিন নয় । প্রতিনিয়ত সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাওয়া উচিত । কেউ হয়তো সিরিয়াল দেখেন । সেখানেও কিছু সচেতনতা দরকার । যেমন, ডিজ়েবিলিটির একটি চরিত্র দিয়ে হাস‍্যকৌতূকের চরিত্র করা হলে, তার প্রতিবাদ দরকার । এটাও একটি অ্যাওয়ারনেস । অর্থাৎ প্রত্যেক সময়, প্রত্যেক জায়গায় অ্যাওয়ারনেস দরকার । এটার জন্য সরকারের তরফে অনেক বেশি অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্প করতে হবে ।

বিভিন্ন NGO বা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচার যতটা হয়, ততটা কিন্তু প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রচার হয় না । সেখানেও প্রচার বেশিমাত্রায় দরকার । অনেক সময় পুলিশকেও বোঝাতে হয়, ডিজ়েবিলিটির মানে কী? ডিজ়েবিলিটিকে সাপোর্টের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি জায়গায় অনেক বেশি প্রচারের প্রয়োজন ।

স্বাস্থ্য, শিক্ষার বিষয়টি ?


সরকারি-বেসরকারি সব বড় হাসপাতালগুলিতে, এই বিশেষভাবে সক্ষমদের জন্য বেড রাখা যাবে না, যদি কিছু করে । এই ধরনের মানুষকে যে একটু অন্যভাবে চিকিৎসা করতে হবে, সেই অ্যাওয়ারনেস নেই । হাসপাতালগুলিতে একটি সেক্টর রাখা উচিত, যেখানে এদের জন্য স্পেশাল কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবে । যারা একটু সচেতন, যারা বুঝতে পারবেন, কোন ধরনের ডিজ়েবিলিটিতে, কীভাবে সামলাতে হবে । এর জন্য একটা সেকশন রাখা দরকার ।


আর এদের মেইনস্ট্রিমের এডুকেশন নেওয়ার ক্ষমতা যদি থাকে, সেটা খুঁজে নেওয়ার জন্য সঠিক লোকের প্রয়োজন । এটা করে যাতে মেইনস্ট্রিমের এডুকেশনের সুযোগ দেওয়া হয় । যদি মেইনস্ট্রিমে খানিকটা যেতে পারে, যদি সে এইট পাস করতে পারে, স্কুল ফাইনাল পাস করতে পারে, তা হলে ভবিষ্যৎ সুগম হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে । যদি এভাবে সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য কোনওভাবে ভবিষ্যৎ সুগম হয়ে উঠতে পারে । মেইনস্ট্রিম এডুকেশনের জন্য সমস্ত লেভেলে একেবারে স্পষ্টভাবে সঠিক অ্যাটিটিউড চাই, যাতে বিশেষভাবে সক্ষম এমনটা বুঝে নিয়ে, তাদের জন্য বাকি সুবিধা দেওয়া যায় ।

সরকারের এই ক্ষেত্রে পলিসি রয়েছে, কাউকে ফেরাতে পারবে না‌ । এই পলিসি কতটা ভালো, আমি জানি না যতক্ষণ না আমরা নিজেদের সেই ভাবে তৈরি করতে পারছি । আটকে রাখার জন্য নয়, সঠিক হোমের দরকার । যেখানে মা-বাবা নিশ্চিন্তে তার সন্তানকে রেখে থাকতে পারবেন ।

Intro:কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর: পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের জন্য সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে স্পেশালাইজড ডিপার্টমেন্টের প্রয়োজন। যেখানে তাদের জন্য স্পেশাল কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবে। ইন্টারন‍্যাশনাল ডে অফ পারসন্স উইথ ডিজেবিলিটিস-এ এমনই আবেদন রেখেছেন ডক্টর (পিএইচডি) মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। এর পাশাপাশি পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের নিয়ে বহু বছর ধরে কাজ করে চলেছেন। এমন পরিচয়ের পাশাপাশি ২০১৯-এর বেস্ট রিসার্চ ইন দ‍্য এরিয়া অফ ডিজেবিলিটি-র জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এম্পাওয়ার্মেন্ট অফ পারসন্স উইথ ডিজেবিলিটিস সম্মানের প্রাপক তিনি।


Body:পারসন্স উইথ ডিজেবিলিটিস, পরিস্থিতি এখন কী রকম?
অনেক জায়গায়, প্রত্যেকদিন গত বছর থেকে এ বছর মাঝ খানে ৩৬৪ দিন আমরা যাঁরা কাজ করি, যাঁদের নিয়ে আছি, প্রত্যেক দিনই বুঝি কিছু না কিছু ভাবে সবাই, সমাজ সব মিলিয়ে একটু একটু করে এগিয়ে আসছে। একটু একটু করে হাত বাড়াচ্ছে। হাত বাড়ানোতে পারসন উইথ ডিজেবিলিটির মানুষ, যাঁরা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে রয়েছেন, তাঁদের পায়ের তলার মাটি একটু একটু করে শক্ত হচ্ছে। এখনকার পরিস্থিতি একদম ঠিকঠাক আছে, যতটা পাওয়ার ততটা পাচ্ছে, এ কথা বলতে পারব না। কিন্তু, আমরা আর একটু করে হাত বাড়ানোর আশ্বাস পাচ্ছি সমাজের বিভিন্ন স্তর থেকে। এর ফলে আমরা যাঁরা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে কাজ করি, তাঁদের কিছু সুবিধা অবশ্যই হচ্ছে। আগের বছর থেকে এ বছর প্রতিদিন আশা করা যায়, আগামী বছর সবার কাছে থেকে আরও কিছু পাব। সমাজ, সরকারি স্তরের সাহায্য নয়, একেবারে বন্ধুত্বের হাত বাড়ি দেওয়া হবে বলে আশা করছি।

প্রতিবন্ধকতা মানে হচ্ছে অন্ধকার। আর, বাড়ি, পরিবার সব মিলিয়ে ভবিষ্যৎ। সেখান থেকে আমরা আলো দেখছি। সেই আলো থেকে প্রতিদিন অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ছে। আগে যা ছিল তার থেকে অ্যাকসেপ্টট‍্যান্স যেহেতু বেড়েছে, তাই আরও একটু শক্ত হচ্ছে ভবিষ্যতের মাটি‌। রোজগার মেলায় এখন প্লেসমেন্ট দেওয়ার জন্য ব‍্যবস্থা হয়‌। এখানে কতজনের ঠিকঠাক প্লেসমেন্ট হল বা প্লেসমেন্টেরর জন্য তারা উপযুক্ত কি না, তার থেকে এই প্রয়াসটিই বড় বিষয়ে। যদি বলি, ভবিষ্যতে কোনও সমস্যা নেই, তা নয়। পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের ভবিষ্যত অন্ধকারে নেই, সুগম হওয়ার পথে এগোচ্ছে।

তা হলে, সমস্যা কোথায়?
সমস্যা রয়েছে। এমন বলতে পারি না পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের প্রতি সমাজের নেগেটিভ অ্যাটিটিউড নেই। প্রতিটি স্কুল-কলেজে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি। কিন্তু, তার মানে এই নয় যে সমস্যা নেই। পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের জন্য সত্যিকারের সেই লেভেলের অ্যাটিটিউড তৈরি হতে আরও অনেকটা আমাদের এগোতে হবে। সমাজের প্রতিটি স্তর থেকে আমাদের অনেক যুদ্ধ করতে হবে। হাত বাড়ানো বলতে করুণা নয়, সিমপ্যাথি ছাড়া এমপ‍্যাথির হাত বাড়ানো। যে মানুষটি চলতে পারেন না, তিনি বাকি দুটি হাত দিয়েও অনেক কিছু করতে পারেন। অনেক কিছু করার সেই অবস্থা পর্যন্ত যেতে পারেন। এর বোধ কিন্তু অন‍্য মহলের থাকা দরকার। সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে আগের থেকে অ্যাক্সেসিবিলিটি বাড়ছে। কিন্তু, তার মানে এটা নয় যে সব সমস্যার সমাধান হয়ে গিয়েছে। তাহলে আমাদের আর এই যুদ্ধ করতে হতো না।

ডিজেবিলিটি মানে, যার যতটুকু ক্ষমতা ততটুকু দিয়ে ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারবে, তা কিন্তু সত্যি হচ্ছে না।
যার যতটুকু ক্ষমতা, সেটুকু বোঝার মতো ক্যাপাসিটি বোধ হয় উল্টো দিক থেকে নন ডিজেবেল পার্সনদের সকলের নেই। সবার পক্ষ থেকে আরও অনেক বেশি অ্যাওয়ারনেস দরকার। ধরুন, অটিজম। অটিজমের একটি ছেলে বা মেয়ে কথা বলছে না। কিন্তু, অনায়াসে কাঁথায় অসম্ভব সুন্দর স্টিচ করে দিতে পারছে। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল, সেলাই করতে পারবে? সে উত্তর দিল না। সে নাকচ হয়ে গেল। কিন্তু বুঝতে হবে যে, এর মধ্য থেকে হ্যাঁ পারবটা অন্য রকম ভাবে বেরিয়ে আসবে। হয়তো হ্যাঁ পারব বলে নয়। এ রকম উদাহরণ প্রায় সব জায়গায় রয়েছে। ওদের অ্যাক্সেস করার জন্য সঠিকভাবে বোঝার ক্ষমতাটা এখনও কিন্তু সমাজের সব স্তরে হয়নি। আমাদের আরও আরও আরও এমন দরকার, যাতে সবার বন্ধুত্বের হাত আমরা পেতে পারি।

কীভাবে সম্ভব?
অ‌্যাওয়ারনেসের জন্য বিভিন্ন ক্যাম্প হচ্ছে‌‌। আমার মনে হয়, প্রত‍্যেকটি টিভি, রেডিও, মাস মিডিয়ায় বছরের একদিন নয়। কনটিনিওয়াস যদি প্রচারের ব‍্যবস্থা হয়, তা হলে অ্যাওয়ারনেস বাড়বে। কেউ হয়তো সিরিয়াল দেখেন। সেখানেও কিছু অ্যাওয়ারনেস দরকার। যেমন, ডিজেবিলিটির একটি চরিত্র দিয়ে হাস‍্যকৌতূকের চরিত্র করা হলে, তার প্রতিবাদ দরকার। এটাও একটি অ্যাওয়ারনেস। অর্থাৎ, প্রত্যেক সময়, প্রত্যেক জায়গায় অ্যাওয়ারনেস দরকার। এটার জন্য সরকারের তরফে অনেক বেশি অ্যাওয়ারনেস ক্যাম্প করতে হবে।

বিভিন্ন NGO বা প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রচার যতটা হয়, ততটা কিন্তু প্রতিবন্ধকতা নিয়ে প্রচার হয় না। অনেক বেশি আওয়‍্যারনেস দরকার। ক্যাম্প শুধুমাত্র নয়। একদিনের জন্য বড় একটি ক্যাম্প, সেমিনার করলে আওয়ার্নেস হবে না।
অনেক সময় পুলিশকেও বোঝাতে হয়, ডিজেবিলিটির, মানে কী? ডিজেবিলিটিকে সাপোর্টের জন্য প্রতিটি মুহূর্তে প্রতিটি জায়গায় অনেক বেশি প্রচারের প্রয়োজন।
পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের মধ্য থেকে তাঁদের সক্ষমতা খুঁজে বের করতে হবে। তবেই তাঁদের ভবিষ্যৎ সত্যি সুগম হবে। প্রতিটি মানুষের মধ্যে কিছু না কিছু করার ক্ষমতা থাকে। সেই করার ক্ষমতা দিয়ে কিছু না কিছু সমাজে কন্ট্রিবিউট করতে পারে। কিন্তু, সমাজের নিতে পারার ক্ষমতা, বুঝতে পারার ক্ষমতা? এই বুঝতে পারার ক্ষমতা বাড়াতে হবে, যাতে পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের দিতে পারার ক্ষমতা আমরা নিতে পারি।



Conclusion:স্বাস্থ্য, শিক্ষার বিষয়টি?
সরকারি-বেসরকারি সব বড় হাসপাতালগুলিতে, পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের কারও কিছু হলে এমনও বলা হয়, ওরে বাবা, ওর জন্য তো বেড রাখা যাবে না, যদি কিছু করে। এই ধরনের মানুষকে যে একটু অন্যভাবে চিকিৎসা করতে হবে, সেই অ্যাওয়ারনেস নেই। অ্যাওয়ারনেস প্রতিটি জায়গায় দরকার। হাসপাতালগুলিতে একটি সেক্টর রাখা উচিত, যেখানে পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের জন্য স্পেশাল কেয়ার নেওয়া সম্ভব হবে। যাঁরা একটু সচেতন, যাঁরা বুঝতে পারবেন, কোন ধরনের ডিজেবিলিটিতে, কীভাবে সামলাতে হবে। এর জন্য একটা সেকশন রাখা দরকার। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলির কাছে আমার আবেদন, মানসিক স্বাস্থ্যের, শারীরিক স্বাস্থ্যের চিকিৎসার জন্য সেক্টর নেই। আমাদের খুব অসুবিধা হচ্ছে। এর জন্য স্পেশালাইজড ডিপার্টমেন্ট দরকার।

পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের মেইনস্ট্রিমের এডুকেশন নেওয়ার ক্ষমতা যদি থাকে, সেটা খুঁজে নেওয়ার জন্য সঠিক লোকের প্রয়োজন। এটা করে যাতে মেইনস্ট্রিমের এডুকেশনের সুযোগ দেওয়া হয়। যদি মেইনস্ট্রিমে খানিকটা যেতে পারে, যদি সে এইট পাস করতে পারে, স্কুল ফাইনাল পাস করতে পারে, তা হলে ভবিষ্যৎ সুগম হওয়ার পথে এগিয়ে যাবে। যদি এভাবে সম্ভব না হয়, তাহলে অন্য কোনওভাবে ভবিষ্যৎ সুগম হয়ে উঠতে পারে। মেইনস্ট্রিম এডুকেশনের জন্য সমস্ত লেভেলে একেবারে স্পষ্টভাবে সঠিক অ্যাটিটিউড চাই, যাতে পারসন উইথ ডিজেবিলিটিদের বুঝে নিয়ে, তাদের জন্য বাকি সুবিধা দেওয়া যায়।

সরকারের পলিসি রয়েছে, কাউকে ফেরাতে পারবে না‌। এই পলিসি কতটা ভালো, আমি জানি না যতক্ষণ না আমরা নিজেদের সেই ভাবে তৈরি করতে পারছি। আটকে রাখার জন্য নয়, সঠিক হোমের দরকার। যেখানে মা-বাবা নিশ্চিন্তে তার সন্তানকে রেখে থাকতে পারবেন।
_______



বাইট:
wb_kol_01a_international_day_of_persons_with_disabilities_bite_7203421
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইকোলজি বিভাগের প্রাক্তন অধ‍্যাপিকা, ডক্টর (পিএইচডি) মল্লিকা বন্দ্যোপাধ্যায়।



ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.