কলকাতা, 12 জুন : NRS হাসপাতালে জুনিয়র ডাক্তারদের কর্মবিরতির জেরে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে রোগী ও পরিজনরা । হাসপাতালের বাইরে খোলা আকাশের নিচেই প্রচণ্ড গরমের মধ্যেই মাটিতে পড়ে রইলেন কোনও রোগী । কান্নায় ভেঙে পড়লেন পরিবারের সদস্যরা । রাজ্য সরকারের কাছে দ্রুত এই সমাস্যা সমাধানের আর্জি জানাল রোগীদের পরিবার।
মিনাখাঁর বাসিন্দা মহম্মদ রেজাউল শেখ অভিযোগ করেন, "আমার মেয়ে আসমা খাতুন। অটোর ধাক্কায় পা ভেঙে চুরমার । যন্ত্রণায় ছটপট করছে । প্রথমে চিত্তরঞ্জন ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল নিয়ে যাই । সেখানে আমার মেয়েকে ভরতি নেয়নি। তারপর NRS হাসপাতালে আসি । কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখি প্রচুর গন্ডগোল । তারপর আমি আমার মেয়েকে নিয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসি । কিন্তু এই হাসপাতালে এসেও দেখি একই অবস্থা । সকাল সাড়ে দশটায় এসেছি । জুনিয়র ডাক্তাররা আমাকে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছে । বলে, এখান থেকে নার্সিংহোমে চলে যাও । আমরা গরিব মানুষ । ৫০ হাজার টাকা খরচ । আমি কোথায় পাব? ওটা আমরা বলতে পারব না । খোলা আকাশের নিচে গরমের মধ্যেই বাইরে আমি পড়ে আছি আমার মেয়েকে নিয়ে । মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ, আমার মেয়ের চিকিৎসার একটা দ্রুত ব্যবস্থা করলে খুবই ভালো হয় ।"
মুর্শিদাবাদের বেকডাঙার বাসিন্দা মানসুরা বিবি বলেন, "আমার শওহর শেখ সিরাজুল শেখ । আমি 3-4 বার আমার স্বামীকে নিয়ে এমারজেন্সিরতে ডাক্তার দেখাতে গিয়েছি । আমাকে দূর দূর বলে তাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে । আমার স্বামীর ইউরিনের সমস্যা । সকাল থেকেই এই গাছের তলায় আমরা এইভাবেই পড়ে আছি । আমি গরিব মানুষ । কী করব বলুন । জুনিয়র ডাক্তাররা বলছে, আমাদের সমস্য যতক্ষণ না মিটবে আমরা রোগী দেখব না ।"
শম্পা বসাক নামে এক মহিলা বলেন, "কলকাতার জোড়াবাগানে আমাদের বাড়ি । বাবা অসীম দত্ত এক মাস ধরে মেডিসিন বিভাগে ভরতি । ওয়ার্ডের মধ্যেই বুকের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন । কোনও ডাক্তার নেই । জুনিয়র ডাক্তাররা ভিতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না । জল পর্যন্ত দেওয়ার কোনও লোক নেই । আমাদের নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার কোনও সামর্থ্য নেই । আমি মানছি, একজন জুনিয়র ডাক্তার গুরুতর আহত হয়েছেন । কিন্ত তার জন্য তো সব রোগী মারা যাবে । আমার বাড়িতে একটি ছোটো মেয়ে আছে । তাকে পাশের বাড়িতে রেখে আমি হাসপাতালে এসেছি । কিন্তু বাবাকে চিকিৎসা যে কী ভাবে করাব । সেটাই বুঝতে পারছি না ।"