কলকাতা, 14 জুলাই : জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে শিক্ষা মহলের মতামত জানতে আগামীকাল রাজ্যের স্বীকৃত শিক্ষক সংগঠনগুলির সঙ্গে বৈঠক করতে চলেছেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। শিক্ষক সংগঠনগুলির পাশাপাশি বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার, নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি ও অরুণ কুমার চট্টোপাধ্যায়কে । শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার আজ জানান, তিনি উপস্থিত থাকবেন আগামীকালের বৈঠকে। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ে ভাষাশিক্ষার বিষয়ে মতামত দেবেন ।
আগামীকাল বিকাশ ভবনে মোট 16টি শিক্ষক সংগঠনকে নিয়ে এই বৈঠক হবে । তাঁদের প্রতিনিধিসহ বৈঠকে থাকবেন প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ, মধ্যশিক্ষা পর্ষদ, উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের সভাপতিরা । এছাড়াও থাকবেন সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারসহ শিক্ষা দপ্তরের অন্য আধিকারিকরা । এই বৈঠকে মূলত জাতীয় শিক্ষা নীতি নিয়ে রাজ্যের শিক্ষামহলের মতামত নেওয়া হবে । আগামীকালের বৈঠকে যাওয়া নিয়ে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার বলেন, "এর আগেরবারও এই বৈঠকে আমি উপস্থিত ছিলাম এবারেও যাব । আমি মূলত ভাষা শিক্ষার উপর বক্তব্য রাখব । এছাড়াও মাধ্যমিক এডুকেশন পর্যায়ে, স্কুল এডুকেশন পর্যায়ে জাতীয় শিক্ষানীতি যে সুপারিশগুলো করেছে সেগুলো নিয়ে কথা বলব।"
প্রায় প্রতিটি আমন্ত্রিত শিক্ষক সংগঠনই আগামীকালের এই বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন । তাঁরা জাতীয় শিক্ষানীতির কোন কোন বিষয়ে মত প্রকাশ করবেন তা ইতিমধ্যেই ঠিক করে নিয়েছেন তাঁরা।
নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সুকুমার পাইন বলেন, "প্রথমত, ভারতবর্ষে যে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা সংবিধানে আছে শিক্ষাতে এটা খুব গুরুত্বপূর্ণ । এটা একদম বাদ চলে গেছে। এটাকে যুক্ত করতে হবে। সিলেবাসে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা, ঐক্য ও সংহতি কথা, সেগুলোকে সংযুক্ত করতে হবে। পরিকাঠামোর বিষয়টা আছে । প্রেপ টু ফাইভ ইউনিট করতে হবে। এই বিষয়গুলোই আমরা তুলে ধরব। আমরা বলছি প্রেপটা প্রাথমিকের সঙ্গে যুক্ত করতে। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত একটা ইউনিট হোক। ABPTA-র ব্যক্তিগত একটা বক্তব্য হচ্ছে যে, আগে বামফ্রন্ট সরকারের আমলেই ছিল 5+ ছিল ক্লাস ওয়ানে । সেটা করা উচিত।"
মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সভাপতি বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "প্রথমত, কালকে ন্যাশনাল এডুকেশন ড্রাফ্ট পলিসি 2019-এর উপর আমাদের মতামত জানার জন্য শিক্ষা দপ্তর থেকে শিক্ষামন্ত্রীর উদ্যোগে একটি সভা ডাকা হয়েছে। সেই সভায় শিক্ষা বিভাগের আধিকারিকদের ডাকা হয়েছে, প্রাথমিক মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক স্তরের বোর্ডের প্রেসিডেন্টদের ডাকা হয়েছে । এই খসড়া প্রকাশিত হওয়ার পর আমরা আমাদের মতামত MHRD-কে জানিয়েছিলাম । এটা একটা 484 পাতার খসড়া । যেখানে স্কুল এডুকেশনের উপর 192 পাতা দেওয়া আছে । 9টি পর্যায়ে সেটা বিভক্ত করা আছে । আমরা এই খসড়া তন্নতন্ন করে দেখেছি যে, এই নীতি যদি নেওয়া যায়, তাহলে আমাদের দেশের সাধারণ একেবারে নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্তদের ক্ষেত্রে শিক্ষাটা অত্যন্ত সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে। এটার মধ্যে দিয়ে আমরা যেটা দেখেছি যে, শিক্ষার জ্ঞানের মূলধারা বদলে যান্ত্রিক একটা শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে যেনতেন প্রকারে চাকরি পাইয়ে দেওয়াই এটার মূল লক্ষ্য । এটা জ্ঞান জগতের চিন্তাধারার সঙ্গে সম্পূর্ণ বিরোধী । আমরা এটা স্বীকার করতে পারছি না ।"
আগামীকালের বৈঠকে জাতীয় শিক্ষানীতিতে স্কুল শিক্ষার চারটি ভাগ এবং তার প্রথম অর্থাৎ প্রাইমারি স্তরে অঙ্গনওয়ারিদের ভূমিকা, 9-12 শ্রেণিতে সেমিস্টার ব্যবস্থা, সেমিস্টার ব্যবস্থা ন্যূনতম 24টার বেশি ও সর্বোচ্চ 40টা বিষয়ে পড়ানোর দিকটি নিয়ে আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্বজিৎবাবু।