কলকাতা, 26 ডিসেম্বর: সংবাদপত্র খুললেন তো ছোট্ট কোণায় নজরে আসে, ছেলে বাবা-মাকে দেখে না ৷ খবরে আসে, অসহায় বৃদ্ধ-মাকে ফেলে রেখে 'সন্তান' বিদেশে ৷ আবার কোনও কোনও বাবা-মাকে সন্তানের বাড়ির বদলে আশ্রয় নিতে হয় বৃদ্ধাশ্রমে ৷ এই সবই সমাজের চালচিত্রে প্রায়শই নজরে পড়ে ৷ তাহলে রাজ চক্রবর্তীর 'সন্তান' ছবিতে পার্থক্য কোথায় ?
এই সিনেমা দেখে কেঁদে ফেলেছিলেন অভিনেত্রী কৌশানি মুখোপাধ্যায়। তবে, শুধু কৌশানি নয়, সিনেমা দেখে চোখে জল আমজনতারও ৷ তার কারণ ছবিটা না দেখলে উপলব্ধি করা অসম্ভব । ছবির অন্দরে ঢুঁ মারার পর কখন যে নিজের মনের আয়নার মুখোমুখি হয়ে যাবেন বুঝতেও পারবেন না ৷ আর এখানেই পরিচালক হিসাবে সফল রাজ ৷
সিনেমা দেখতে দেখতে একটা কথা মনে হতে বাধ্য, রাজ চক্রবর্তী বাবা-মায়ের মন বোঝেন, কষ্ট বোঝেন। আর কোনও না কোনও দুষ্টু সন্তানকেও চেনেন খুব ভালোভাবে। না হলে এমন একজন সোনায় মোড়া ছেলেকে পেতেন না। এদের নিয়েই রাজের 'সন্তান'। যা দেখে সিনেমা হল থেকে চোখের জল নিয়ে ফিরছেন দর্শক।
ছবিতে মেঘমালা বসুর চরিত্রে অনসূয়া মজুমদারকে খুব চেনা মনে হবে। সংলাপ মনে ধরার মতো। সহজভাবে বলতে গেলে বুকে বিঁধবে গিয়ে। অনসূয়া মজুমদারের সাবলীল অভিনয়ে একবারও মনে হবে না সিনেমা চলছে। মিঠুন চক্রবর্তীকে নিয়ে বলতে নেই, তাঁকে প্রাণ ভরে দেখতে হয়। এখানেও সেই কাজটা করলেই দর্শকের লাভ। তাঁর সংলাপ, "যতবড় ভুল, ততজোরে স্যরি বলতে হয়।" ছাপোষা এক বাঙালির লুকে সবসময়ের মতো ন্যাচরাল তিনি।
আদালতের বাইরে মেঘমালা বসুর সংলাপ "My Husband is not for sale" শুনে করতালিতে ভরিয়ে দিয়েছে দর্শক। একইসঙ্গে ছেলেকে সপাটে চড় মারার দৃশ্যটিতে দর্শক আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। এর আগে 'হাবজি গাবজি'-তে বাবা-মায়ের ছেলেমেয়ের হাতে মোবাইল ধরিয়ে দেওয়ার পরিণতি দেখিয়েছেন রাজ চক্রবর্তী। এবার ছেলেমেয়েদের ভুলের পাশাপাশি সন্তানকে অন্ধস্নেহে বড় করা আর তারপরে সেই সন্তানের দিনে দিনে শত্রু হয়ে ওঠার কাহিনি দেখিয়েছেন রাজ।যার সঙ্গে কেউ নিজেকে মেলাতে পেরেছেন কেউ বা খুঁজে পেয়েছেন পরিচিত কারোকে৷
ঋত্বিক চক্রবর্তী একইরকমের সাবলীল অভিনয়ে। সন্তান হিসাবে ঋত্বিককে কি সত্যই দুষ্টু বলা যায় ? নাকি তার পিছনেও রয়েছে কোনও মানসিক বিষয় ৷ প্রশ্নের উত্তর পরতে পরতে বুঝিয়েছেন রাজ ৷ অন্যদিকে আইনজীবীর চরিত্রে শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়ও বেশ সিরিয়াস। দিব্যি মানিয়েছে আইনজীবী হিসাবে ৷ পাশাপাশি, দর্শকদের কাছে একটা উপরি পাওনা মেহুল-বাবাইদাকে অন্যরকমভাবে আবিষ্কার করতে পারা ৷ আসলে 'পরিণীতা' ছবিতে ঋত্বিক-শুভশ্রী যেভাবে মনে দাগ কেটেছেন, সেই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে পর্দার জনপ্রিয় দুই চরিত্র ৷
ঋত্বিকের স্ত্রী'র চরিত্রে অভিনেত্রী অহনা দত্তও যথাযথ। দক্ষিণী ছায়া থেকে বেরিয়ে একেবারে অন্য পথে অনেকদিন ধরেই হাঁটছেন রাজ। 'সন্তান' তারই আরেকটি। ইতিমধ্যেই দর্শক মনে ছাপ ফেলার পাশাপাশি বক্সঅফিসেও উপচে পড়ছে ভালোবাসা ৷ বছর শুরুতেও সেই রেশ থাকে কি না, তা সময় বলবে ৷