কলকাতা , 18 অগাস্ট : 2018-র 17 অগাস্ট রাতে ব্রেন ডেথ ঘোষিত সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাতার খোঁজ পাওয়া গিয়েছিল । তার ঠিক দুই বছর পর গতকাল সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ পাওয়া গেল । গতরাতে ব্রেন ডেথ ঘোষিত এক রোগীর হার্ট তার শরীরে প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে । কাকতলীয় হলেও এখনও পর্যন্ত কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ দাতার খোঁজ পাওয়ার ঠিক দুই বছরের মাথায় কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ এক অঙ্গ (হার্ট) গ্রহীতার খোঁজও মিলল । দুই জনই কিশোরী । এদিকে কোরোনা পরিস্থিতির নধ্যে কলকাতা তথা পূর্ব ভারতে অঙ্গপ্রতিস্থাপন থমকে গিয়েছিল । অবশেষে সোমবার অর্থাৎ গতকাল থেকে কলকাতা তথা পূর্ব ভারতে অঙ্গ প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছে । গতকাল ব্রেন ডেথ ঘোষিত 32 বছরের এক যুবকের হার্ট , লিভার এবং দুই কিডনি অন্য চার রোগীদের শরীরে প্রতিস্থাপিত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে ।
SSKM হাসপাতালে 2018-র 17 অগাস্ট 15 বছরের এক কিশোরীর ব্রেন ডেথ ঘোষণার পর তার কিডনি প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল SSKM হাসপাতালের অন্য দুই রোগীর শরীরে । আর লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল বেসরকারি হাসপাতালের এক রোগীর শরীরে । দুই কিডনি গ্রহীতা এই রাজ্যের বাসিন্দা হলেও লিভার গ্রহীতা ছিলেন হায়দরাবাদের বাসিন্দা । তখন জানা গিয়েছিল, ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই কিশোরীর হার্ট প্রতিস্থাপনযোগ্য ছিল । তবে তার হার্ট প্রতিস্থাপনের জন্য কোনও গ্রহীতার খোঁজ পাওয়া যায়নি । কিশোরী এখনও পর্যন্ত কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের মধ্যে ব্রেন ডেথ ঘোষিত সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গদাতা ।
ঠিক দুই বছর পর গতরাতে ব্রেন ডেথ ঘোষিত এক রোগীর হার্ট হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালের 17 বছরের এক কিশোরীর শরীরে প্রতিস্থাপিত করা হয় । এখনও পর্যন্ত এই কিশোরী কলকাতা তথা পূর্ব ভারতের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ অঙ্গগ্রহীতা (হার্ট)। হাওড়ার বেসরকারি ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, 17 অগাস্ট সোমবার রাতে পূর্ব ভারতের মধ্যে এই প্রথম কোনও শিশুর শরীরে ব্রেন ডেথ ঘোষিত এক রোগীর হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয় । ওই অঙ্গ গ্রহীতা পূর্ব মেদিনীপুরের বাসিন্দা । দুই বছর ধরে এই বেসরকারি হাসপাতালে তার চিকিৎসা চলছে । কোরোনা পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতা তথা পূর্ব ভারতে থমকে গিয়েছিল ব্রেন ডেথ ঘোষিত কোনও রোগীর অঙ্গ প্রতিস্থাপন প্রক্রিয়া । বেশ কয়েক মাস পর ফের অঙ্গ প্রতিস্থাপন সম্ভব হচ্ছে । এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক প্লাবন মুখোপাধ্যায় বলেন , "কোরোনার কারণে এভাবে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া থেমে গিয়েছিল । আবার শুরু হল । এই যে শুরু হল এটা খুব ভালো বিষয় ।"
14 অগাস্ট রাতে কল্যাণী থেকে ফেরার সময় পথ দুর্ঘটনায় মারাত্মকভাবে জখম হন ভাটপাড়ার বাসিন্দা 32 বছরের সংগ্রাম ভট্টাচার্য । পেশায় তিনি একজন মেডিকেল রিপ্রেজ়েন্টেটিভ ছিলেন । মাথায় হেলমেট থাকা সত্ত্বেও হেলমেটের ব্যান্ড লাগানো ছিল না । ফলে দুর্ঘটনায় তাঁর মাথায় চোট লাগে । দুর্ঘটনার পর তাঁকে কল্যাণীর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখান থেকে 15 অগাস্ট ভোরে তাঁকে উলটোডাঙার কাছে EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে নিয়ে আসা হয় । শেষ পর্যন্ত তাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি । এরপর 16 অগাস্ট ওই যুবকের ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয় । পরিবারের তরফে তাঁর অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় । শুরু হয় অঙ্গগ্রহীতার খোঁজ । অবশেষে তাঁর হার্ট প্রতিস্থাপন করা হয় হাওড়ার বেসরকারি হাসপাতালের 17 বছরের এক কিশোরীর শরীরে । EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি হাসপাতালের দুই রোগীর শরীরে লিভার ও কিডনি প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে । লিভার গ্রহীতার বয়স 59 বছর । তিনি ত্রিপুরার বাসিন্দা । কিডনি গ্রহীতার বয়স 29 বছর । তিনি হাওড়ার বাসিন্দা । ব্রেন ডেথ ঘোষিত এই যুবকের অন্য একটি কিডনি এবং ত্বক দান করা হয়েছে SSKM হাসপাতালে । কিডনি SSKM হাসপাতালের এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হচ্ছে । বেসরকারি একটি চক্ষু হাসপাতালে যুবকের কর্নিয়া দান করা হয়েছে ।
সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতাল থেকে দুটি গ্রিন করিডোর গড়ে ব্রেন ডেথ ঘোষিত যুবকের হার্ট এবং একটি কিডনি আর ত্বক হাওড়ার ওই বেসরকারি হাসপাতাল এবং SSKM হাসপাতালে পৌঁছে দেওয়া হয় । শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত SSKM হাসপাতাল, হাওড়ার বেসরকারি ওই হাসপাতাল এবং উল্টোডাঙার কাছে EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি ওই হাসপাতালে অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে ।