কলকাতা, 3 এপ্রিল: রামনবমীর শোভাযাত্রাকে কেন্দ্র করে রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষ-অশান্তির ঘটনায় রাজ্য সরকারের রিপোর্ট তলব করল কলকাতা হাইকোর্ট। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম-এর ডিভিশন বেঞ্চ রাজ্যকে 30 মার্চের যাবতীয় সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ আদালতে জমা করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি এলাকায় যাতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয় তাও সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি।
সোমবার মামলাকারীর আইনজীবী সৌম্য মজুমদার এজলাসে জানান, হাওড়া ও ডালখোলা পুলিশের অনুমতি নিয়েই রামনবমীর মিছিল করা হয়েছিল। তা সত্ত্বেও মিছিল লক্ষ্য় করে ব্য়াপক পাথর ছোড়া হয়। একাধিক জায়গায় বোম ছোড়া হয়েছে বলেও অভিযোগ। যার ফলে দ্রুত পরিস্থিতির অবনতি হয়। বাধ্য হয়ে পুলিশ হাওড়া ও হুগলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।
এদিন সওয়ালে গোটা ঘটনার এনআইএ তদন্তের দাবির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তারও জোড়াল দাবি জানিয়েছেন তারা। মামলাকারী আইনজীবীর মতে, "পুলিশ পরিস্থিতির উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। 30 মার্চের ঘটনার পর এখনও পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। পুলিশ হাওড়ার শিবপুর এবং হুগলিতে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেছে।"
অন্য়দিকে, এজলাসে রাজ্যের অ্য়াডভোকেট জেনারেল জানান, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে। তিনি জানান, শুধু হাওড়ার ঘটনাতেই 36 জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। এদিন অ্য়াডভোকেট জেনারেল আরও বলেন, "মিছিলের জন্য যারা আবেদন করেছিল পুলিশ তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলের অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু মিছিল শুরুর কিছুক্ষণের মধ্যেই হিংসাত্মক হয়ে ওঠে এলাকা। বিনাপ্ররোচনায় ভঙচুর করা হয় সাধারণ মানুষের গাড়িতে। 10 জন প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান রেকর্ড করা হয়েছে।"
দু'পক্ষের সওয়াল জবাব শেষে এদিন ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানম জানতে চান, "গত বছর কী ঘটেছিল? যদি এই রকম ঘটনা হয়ে থাকে গত বছরের অভিজ্ঞতার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের অনুমতি দেওয়া উচিত হয়নি ৷" এরপরই রাজ্যকে সিসিটিভি ও ভিডিও ফুটেজ আদালতে জমা করার নির্দেশ দেন তিনি। নিরাপত্তা যাতে সুনিশ্চিত হয় এলাকায় তাও সুনিশ্চিত করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এমনকি, স্কুল, কলেজের পঠন পাঠন যেন স্বাভাবিক থাকে তাও পুলিশকে নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
আরও পড়ুন: রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে এবার উত্তপ্ত রিষড়া, কড়া বিবৃতি রাজ্যপালের
আগামী 5 এপ্রিলের মধ্যে রাজ্যকে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। 6 এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি। পুণরায় যাতে এলাকায় অশান্তির ঘটনা না ঘটে পুলিশকে তা দেখতে নির্দেশ আদালতের। উল্লেখ্য, গত 30 মার্চ রামনবমীর মিছিলকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন জায়গায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উত্তর দিনাজপুরের ডালখোলায় একজনের মৃত্যুও হয় বলে অভিযোগ। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় রামনবমীর মিছিলের উপর আক্রমণ ও বোমা ছোড়া হয়েছে বলে দাবি করেন রাজ্য় বিধানসভার বিরোধী দলনেতা ৷ এই ঘটনার যথাযথ তদন্ত দাবি করে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন বিরোধী দলনেতা।