কলকাতা, 8 জুন: পঞ্চায়েত ভোটের নির্ঘণ্ট প্রকাশিত হতেই শুরু হয়েছে বিতর্কের ঝড় ৷ বৃহস্পতিবার রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ আর ভোটের দিনক্ষণ প্রকাশ হতে না হতেই বিতর্কের ঝড় তুলেছে বিরোধীরা ৷ স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে বারে বারে বিরোধীদের তরফে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করে ভোট করানোর দাবি জানানো হয়েছিল। তবে এদিন এই বিষয়ে নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা সরাসরি কিছুই জানাননি। তাই এইবার পুলিশ না বাহিনী নিয়ে শুরু হয়েছে তরজা।
দীর্ঘ জল্পনার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে ঘোষণা হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের। আগামী 8 জুলাই রাজ্যে হবে এক দফার ভোট। বিরোধীদের তরফে অভিযোগ উঠেছে যে, 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একাধিক অপ্রীতিকর ঘটনা সামনে আসায় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচন করানো হোক কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করেই। তবে এই বিষয় এখনও স্পষ্ট করে কিছু জানাননি রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজীবা সিনহা। তিনি জানিয়েছেন, যে সবে মাত্র ঘোষণা হয়েছে পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট। তাই এত তাড়াতাড়ি এই বিষয় সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। কারণ রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশন আগে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবে তারপর সিদ্ধান্ত নেবে। পাশাপাশি কমিশনার জানান, যে যাতে শান্তিপূর্ণ এবং স্বচ্ছভাবে নির্বাচন হয় আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে সেই নিয়ে তৎপর রাজ্য সরকার এবং রাজ্য নির্বাচন কমিশনার ৷ তাই পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এই বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত মতামত পেশ করা যাবে।
এই নিয়ে সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিম জানিয়েছে, ভোট ঘোষণা করেছে ভালো কথা। কিন্ত, নির্বাচন কমিশনার এবং প্রশাসনকে অবাধ ও সুষ্ঠু নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ন নির্বাচন করাতে হবে। প্রয়োজনে বামেদের পক্ষ থেকে কমিশনে যওয়া হবে বলেও জানান তিনি। নির্বাচনের সঙ্গে যারা যারা যুক্ত রয়েছেন, তাঁদের সকলের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে কংগ্রেস নেতা প্রদীপ ভট্টাচার্য জানান, এক তরফা নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করা হলো না। এর অর্থ তলে তলে শাসক দল নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিচ্ছিল। আর বিরোধীরা যাতে কোনও রকম প্রস্তুতি না নিতে পারে সেই চেষ্টা চলছে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনার রাজ্য সরকারের তাবেদারী করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
তাঁর অভিযোগ, এক তরফা নির্বাচন ঘোষণা করেছে কমিশন। ফলে, বোমা উদ্ধার, মৃত্যু, মারদাঙ্গার পরিস্থিতিতে যে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হবে না, তা এখন থেকেই স্পষ্ট। পাশাপাশি বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য জানান, যে পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে তামাশা হচ্ছে ৷ এদিন ঘোষণা করে আগামিকাল অর্থাৎ শুক্রবার থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া হবে। ভরা বর্ষায় নির্বাচন হতে চলেছে। মানুষকে বাইরে রেখে দখলদারির নির্বাচনের প্রক্রিয়া চলেছে। রাজনৈতিক দলগুলিকে নিয়ে কোন সর্বদলীয় বৈঠক হয়নি। বিজেপি তাদের দাবিগুলি জানাবে যার মধ্যে অন্যতম সিভিক ভলেন্টিয়ারকে দিয়ে নির্বাচনী কাজ করানো যাবে না। তিন হাজার পুলিশ দিয়ে যেখানে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাগজের ব্যালাটবক্স আটকানো যাচ্ছে না, সেখানে এক দফায় এত বড় পঞ্চায়েত নির্বাচন করা অসম্ভব। নির্লজ্জতার একটা সীমা থাকে তৃণমূল কংগ্রেস সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গেছে। রাজ্য কমিশনের এই কাজ করতে অক্ষম এবং অনভিজ্ঞ। তিনি বলেন, "রাজ্য পুলিশের উপরে কি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের আস্থা আছে যে উনি রাজ্যের মানুষকে রাজ্য পুলিশের উপরে আস্থা রাখতে বলছেন।"
আরও পড়ুন: কমিশনের সিদ্ধান্ত গণতন্ত্রের হত্যা অভিযোগ শুভেন্দুর, পালটা দিলেন রাজীবা
অন্য দিকে, তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বলেন, "পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পুরোপুরি প্রস্তুত আছে। গত পাঁচ বছর বাংলার মানুষ যে পরিষেবা পেয়েছেন তার নিরিখে ভোট হবে। ত্রিস্তর নির্বাচনের জন্য প্রত্যেকটা বুথে তৃণমূল কংগ্রেস প্রস্তুত রয়েছে। বিরোধীদের প্রার্থী সমর্থক কিছুই নেই। যেখানে আছে সেখানে তাদের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব চলছে। আবার কোথাও কোথাও অশুভ আঁতাত হচ্ছে। যারা পুরোপুরিভাবে পরিষেবা পেয়েছেন তারা তৃণমূল কংগ্রেসের পাশে ছিলেন আছেন এবং থাকবেন।"