কলকাতা, 3 এপ্রিল : কোরোনার বিরুদ্ধে আর দেশগুলোর মতো ভারতও যুদ্ধ ঘোষণা করেছে । আর সেই যুদ্ধের প্রথম সারির সৈনিক হিসেবে দাঁড়িয়ে রয়েছেন চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীরা । প্রতিনিয়ত তাঁরা প্রাণপণ চেষ্টা করে চলেছেন কোরোনা আক্রান্তদের সুস্থ করে তুলতে । অথচ তাঁদেরকে বার বার হেনস্থা হতে হচ্ছে । কারণ হল মানুষকে সেবা করার তাঁদের যে গুণ, সেটাই এখন দোষে পরিণত হয়েছে । তাই শিশু হাসপাতালের নার্স হওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশীদের চাপে ছাড়তে হল ভাড়াবাড়ি ।
মাসখানেক আগে জলপাইগুড়ি থেকে বদলি হয়ে কলকাতায় আসেন ওই নার্স । একটি শিশু হাসপাতালে কর্মরত । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে জামাইবাবুর ভাড়া বাড়িতে এসে ওঠেন তিনি । অভিযোগ, প্রথমে আপত্তি তোলেন ওই বাড়ির মালিকের ভাইপো-ভাইঝি ও তাদের পরিবার । তাদের দেখাদেখি অন্য প্রতিবেশীরাও আপত্তি করেন । তিনি যে শিশু হাসপাতালে কর্মরত তা বোঝানোর অনেক চেষ্টা করেছিলেন প্রতিবেশীদের । জানিয়ছিলেন যে, শিশু হাসপাতালে কোরোনা রোগীর কোনও চিকিৎসা হচ্ছে না । এমনকী, সংক্রমণের আশঙ্কা থাকা কারও চিকিৎসাও হচ্ছে না । কিন্তু কেউ বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করেনি । বরং, ওই নার্সকে বলা হয়, বাড়িতে কারও কোরোনা হলে সে দায়িত্ব তাঁর তা যেন কোর্ট পেপারে লিখে দেন তিনি । এরপরই আর কোনও কথা বাড়াননি ওই নার্স । ওই বাড়ির কেয়ারটেকারের মধ্যস্থতায় একই মালিকের অন্য একটি বহুতলে গতকাল উঠে যান । ওই নার্স জানান, লন্ডন প্রবাসী বাড়ির মালিকের অসুবিধা না থাকলেও শুধুমাত্র প্রতিবেশীদের আপত্তিতে গতকাল ভাড়া বাড়ি ছাড়তে হয় তাঁকে ।
মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী বার বার বলেছেন, কোরোনা মোকাবিলায় জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের হেনস্থা করলে প্রশাসন কড়া ব্যবস্থা নেবে । মানুষের কাছে তাঁরা আবেদনও করেছেন, এই সময়ে কারও সঙ্গে দুর্ব্যবহার করতে না । কিন্তু তাঁদের আবেদনের যে মানুষের কাছে কোনও দাম নেই যাদবপুরের এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করল । এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষকে যারা প্রথম সারিতে দাঁড়িয়ে নিরাপত্তা দিয়ে চলেছেন তাঁদের নিরাপত্তা কোথায় ? মানুষের তাঁদের প্রতি এই অমানবিক ব্যবহার এই প্রশ্নটাই বার বার তুলছে ।