কলকাতা, 18 জুন: বছর কুড়ি আগে মুক্তি পাওয়া বলিউডি মিউজিক্যাল ড্রামা 'ঝংকার বিটস' ছবিটিকে নানা কারণে মনে রেখেছেন দর্শকরা। এই ছবি জীবনের নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও বন্ধুত্বকে জিতিয়ে দিয়েছিল। তা দাগ কেটেছিল অনেকের মনে। অন্যদিকে, ছবিটি যেভাবে সকলের প্রিয় 'পঞ্চমদা'কে গানে গানে শ্রদ্ধা জানিয়েছিল সেটাও ভোলা বেশ কঠিন।
ছবিতে ব্যবহৃত একটি গানের একটি লাইন বিশেষ করে মনে রাখার মতো। সেখানে অসংখ্য ভালো গাইয়েদের মধ্যে আরডি বর্মনকে 'বস' বলা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, "বস কৌন হ্যায় মালুম হ্যায় কেয়া...বস কৌন থা মালুম হ্যায় কেয়া..."। রাজ্য রাজনীতির বর্তমান পরিস্থিতি কিছুটা সেরকম। অভিষেক বন্দ্য়োপাধ্যায় দু'বছর বয়স থেকে রাজনীতি করতেন এমনটা জেনে অনেকেই অবাক হয়েছেন। কিন্তু তিনিই যে তৃণমূলের আগামী তা নিয়ে সংশয় প্রকাশের কোনও কারণ নেই। মানে সেদিক ভাবলে বলাই যায়, অভিষেকের রাজ্যাভিষেক হয়ে গিয়েছে। একসময় লালকৃষ্ণ আডবাণী সম্পর্কে বলা হত, 'পিএম ইন ওয়েটিং'। সেই ভাবনা ধার করে অভিষেক সম্পর্কে বলা যায়, 'সুপ্রিম লিডার ইন ওয়েটিং'।
2006 সালে সপ্তম বামফ্রন্ট সরকার তৈরির আগে শিল্পায়নে জোর দিতে বামেরা একটি স্লোগানের আশ্রয় নিয়েছিল। বলেছিল, "কৃষি আমাদের ভিত্তি, শিল্প আমাদের ভবিষ্যৎ"। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে একটা সময় রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা মজার ছলে একটি নতুন স্লোগানের জন্ম দিয়েছিলেন- 'পিসি আমাদের ভিত্তি, ভাইপো আমাদের ভবিষ্যৎ'। এবার তৃণমূলের দিক থেকে তা বাস্তব রূপ পেতে চলেছে।
গত শুক্রবার নবজোয়ার কর্মসূচির শেষ হয় নামখানায়। সেই শেষ আদতে অনেকগুলো নতুনের শুরু ছিল। 'মমতা সম্রাজ্য়ের' হাতবদল হল। হল অভিষেকের আনুষ্ঠানিক 'রাজ্যাভিষেক'। নেত্রী বুঝিয়ে দিলেন, তিনি তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি খুঁজে পেয়েছেন। দল পেয়েছে তার আগামীর নেতাকে। তৃণমূলের এতদিনের নেতা-কর্মীরা পেয়েছেন তাঁদের স্থায়ী 'অভিভাবক'কে।
-
There could be no better way to culminate my #JonoSanjogYatra.
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) June 16, 2023 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
This moment will stay with me forever.
Thank you, Didi! 🙏🏻 pic.twitter.com/y4H6a5t9FM
">There could be no better way to culminate my #JonoSanjogYatra.
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) June 16, 2023
This moment will stay with me forever.
Thank you, Didi! 🙏🏻 pic.twitter.com/y4H6a5t9FMThere could be no better way to culminate my #JonoSanjogYatra.
— Abhishek Banerjee (@abhishekaitc) June 16, 2023
This moment will stay with me forever.
Thank you, Didi! 🙏🏻 pic.twitter.com/y4H6a5t9FM
আরও পড়ুন: আগামীতে মশাল ধরবেনঅভিষেকই, পারিবারিক স্মৃতিচারণে 'রাজদণ্ড' হস্তান্তর মমতার
রাজনীতিতে রাহুল গান্ধী থেকে শুরু করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা পারিবারিক সূত্রে খানিকটা এগিয়েই শুরু করেন। বিজেপি তা নিয়ে কটাক্ষ করে বটে তবে সে দোষ থেকেও তারাও মুক্ত নয়। পরিবারিক খুঁটিতে ভর করে এঁদের সাংসদ বা অন্য স্তরের জনপ্রতিনিধি হওয়া তুলনায় সোজা। সেটা বাস্তবেও হয়েছে। রাহুল বা অভিষেক দু'জনেই রাজনৈতিক জীবনের কার্যত শুরু থেকেই সাংসদ।
সাংসদ পদ অবশ্য রাজনৈতিক জীবনে চড়াই উতড়াই থেকে রেহাই দেয় না। রাহুল-অভিষেককেও দেয়নি। রাহুলের নেতৃত্বে দু'দুটো লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের ভরাডুবি হয়েছে। তিনি যে পাপ্পু নন গান্ধী, সেই প্রমাণ এখনও দিতে হচ্ছে কংগ্রেসের এই প্রাক্তন সভাপতিকে। অভিষেকের একক নেতৃত্ব এখনও পরীক্ষার মুখে পড়েনি। এবার হয়তো পড়বে । সেখানে তিনি কতটা সফল হবেন তা দেখার বিষয় হতে চলেছে।
শুধু পারিবারিক সূত্রে রাজনীতি করা বা রাজনৈতিক জীবনের শুরুর দিনে সংসদ সদস্য হওয়াই নয়, রাহুল এবং অভিষেকের মধ্যে আরও একটি বিশেষ জায়গায় মিল খুঁজে পাওয়া যায়। এঁদের দু'জনের জীবনেই দুটি যাত্রার বড় ভূমিকা আছে বলে মনে করে রাজনৈতিক মহল। 'ভারত জোড়ো' যাত্রার পরে নেতা হিসেবে রাহুলের ইতিবাচক বদল হয়েছে। কর্ণাটক এবং হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভোটে তার সুফল পেয়েছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যে খুশি কংগ্রেস, কিন্তু এরপর কী ?
আবার অভিষেকের হাতে দলের নেতৃত্ব ছাড়া যেতে পারে এটা দেখাতেই নাকি নবজোয়ার যাত্রা শুরু হয়েছিল বলে দাবি রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের একাংশের। এমনই মনে করেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক তথা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী । তিনি জানান, বিধানসভা নির্বাচনে জয়ে পরই অভিষেককে নেতা করার প্রক্রিয়া মমতা শুরু করেন। ত্রিপুরা, গোয়া থেকে শুরু করে মেঘালয়ে তৃণমূলকে 'সাবালক' করার ভার দেওয়া হয় তাঁকে। অভিষেক ছাপ ফেলতে পারেননি সেভাবে। মানে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেবে ব্যর্থ হন অভিষেক। এরপরই নবজোয়ার যাত্রার মাধ্যমে তাঁকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হল।
এখানেই অনেকের মনে পড়ে যাচ্ছে দেড় বছর আগে হওয়া কলকাতা পৌরসভা নির্বাচনের কথা। একাধিক সংবাদমাধ্যমে তৃণমূলের কলহ নিয়ে খবর হয়েছিল। কেউ কেউ এমনও দাবি করেন পৌরসভায় কারা প্রার্থী হবেন তা নাকি নেত্রীর সঙ্গে আলোচনা না করেই অভিষেকের নির্দেশে প্রশান্ত কিশোরের আইপ্যাকের কর্মীরা ঠিক করে ফেলেছিলেন। সামাজিক মাধ্যমে তা ছড়িয়েও পড়ে। শেষমেশ মমতা আসরে নামেন।
মমতার ইচ্ছাতেই আবারও প্রার্থী হন ফিরহাদ হাকিম থেকে শুরু করে মালা রায় বা অতীন ঘোষের মতো পোড়খাওয়া নেতা-নেত্রীরা। ফিরহাদ রাজ্যের হেভিওয়েট মন্ত্রী। মালা দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র থেকে লোকসভার সাংসদ। অতীন কাশিপুর-বেলগাছিয়া কেন্দ্রের বিধায়ক। তাঁদের পৌরসভায় প্রার্থী করাকে রাজনৈতিক মহলের একাংশ 'দলের রাশ মমতা নিজের হাতেই রাখলেন' বলে ব্যাখ্যা করেছিল। শুধু তাই নয়, সবমিলিয়ে আধডজন বিধায়ককে কাউন্সিলর ভোটে দাঁড় করান মমতা। এই ঘটনার দেড় বছর কাটতে না কাটতেই সব বদলে গেল বা বদলের শুরু হল।
আরও পড়ুন: নবজোয়ার যাত্রা শেষে বিশ্ব রক্তদাতা দিবসে রক্তদান অভিষেকের
এই পরিবর্তনের প্রভাব কী ? বিশ্বনাথ চক্রবর্তীর কথায়, "এর একটা বড় প্রভাব তৃণমূলের অন্য নেতাদের উপর পড়বে। দলে থাকতে পারবেন কি না তা নিয়ে তাঁদের চিন্তিত হতে হবে।" এখানেই প্রশ্ন ওঠে তাহলে কি আরও অনেকেই দল ছাড়তে পারেন। তৃণমূল যুবার হাত ধরে 2014 সালে অভিষেকের উথ্বান শুভেন্দু অধিকারীর দল ছাড়ার বড় কারণ বলে মনে করেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তাহলে কি আরও অনেক শুভেন্দু তৈরি হবে তৃণমূলে ? এই প্রশ্নের সরাসরি জবাব অবশ্য দেননি বিশ্বনাথ। আগামী আর কোনও শুভেন্দুর জন্ম দেবে কি না সেই প্রশ্নের উত্তর ছেড়েছেন আগামীর হাতেই।
অন্যদিকে, তৃণমূলের এই পরিবর্তন নিয়ে ভাবিত নন আরেক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ দেবাশিস সরকার। তিনি বলেন, "মানুষের কাছে বেশি দরকারি বিষয় হল রাজনৈতিক বাতাবরণ। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ভোটারার যখন 5 বছরের জন্য কোনও রাজনৈতিক দলকে নির্বাচিত করেন তখন তারা শান্তি চান। কিন্তু এখন রাজ্যের পরিস্থিতি আলাদা। রাজনৈতিক হিংসা থেকে সর্বস্তরের দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে মানুষ ভাবিত। এমতাবস্থায় কে কোন দলের নেতা হলেন সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্টরা ছাড়া আর কেউ চিন্তিত নন।"