কলকাতা , 25 অক্টোবর : শুধু খুন নয় । নেতাজিনগরে বৃদ্ধার উপর চালানো হয়েছিল পাশবিক অত্যাচার । মারধরে বৃদ্ধা অজ্ঞান হয়ে গেলে তাঁকে ধর্ষণ করা হয় । তারপর তাঁর গোপনাঙ্গে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় রং করার রোলার । অন্য আর একটি রোলার ঢোকানো হয় তাঁর মুখে । কলকাতা পুলিশের তরফে আদালতে যে চার্জশিট জমা পড়েছে তাতে উল্লেখ করা হয়েছে এমনই । বিষয়টি স্বীকার করে নিয়েছেন গোয়েন্দা প্রধান মুরলীধর শর্মা । সেই সূত্রে পুলিশের তরফে লেখা হয়েছে, এই ঘটনা "রেয়ার অব দা রেয়ারেস্ট" ৷
আরও পড়ুন : নেতাজিনগরে বাড়ি থেকে উদ্ধার বৃদ্ধ দম্পতির মৃতদেহ
90 দিনের আগেই নেতাজিনগর জোড়া খুন এবং ধর্ষণের ঘটনায় ৩০০ পাতার চার্জশিট জমা দিল কলকাতা পুলিশ । গোয়েন্দা বিভাগের হোমিসাইড শাখা সূত্রে খবর, এই ঘটনায় সাক্ষীর সংখ্যা 50-এরও বেশি ।
আরও পড়ুন : বিড়ির প্যাকেট কার ? নেতাজিনগরে দম্পতি খুনে খতিয়ে দেখছে পুলিশ
29 জুলাই । রাত 10 টা থেকে 11 টার মধ্যে খুন হন বৃদ্ধ দম্পতি । বেশ কয়েকটি তত্ত্ব উঠে এলেও ঘটনার পারিপার্শ্বিকতা দেখে পুলিশ প্রথম থেকেই সন্দেহ করছিল টাকা-পয়সা লুটের জন্যই এই খুন । ETV ভারতের খবরে প্রথম প্রকাশ করা হয়েছিল সেই সন্দেহের কথা । যদিও কোনও কোনও মহল থেকে সন্দেহ করা হয়, প্রোমোটিংয়ের জন্য বাড়ি না দেওয়ায় খুন হন বৃদ্ধা দম্পতি । মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেছিলেন, "কারও সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া যাবে না । যদি কেউ মনে করে থাকে একাকী বৃদ্ধ দম্পতিকে খুন করে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে রেহাই পেয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করছে । " যদিও দুঁদে গোয়েন্দাদের বক্তব্য, এই খুনের উদ্দেশ্য টাকা-পয়সা হাতানো ।
নেতাজিনগরের অশোকা অ্যাভিনিউয়ের ওই দম্পতির দোতলা বাড়িতে পৌঁছে, সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে তাঁর স্ত্রী স্বপ্নার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তখন তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল । হোমিসাইড শাখার গোয়েন্দাদের ধারণা ছিল পিছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে । সম্ভবত সেটাই মৃত্যুর কারণ । চাপের কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে । অন্যদিকে দোতলার শোয়ার ঘর থেকে উদ্ধার হয় বৃদ্ধের দেহ । তাঁর মুখে গোঁজা ছিল একটি তোয়ালে ও বালিশ । ঘরে থাকা 10টি আলমারির মধ্যে 9 টিই ছিল খোলা । খোয়া যায় বেশ কিছু গয়না, প্রায় এক লাখ টাকা ও দুটি মোবাইল ফোন ।
আরও পড়ুন :নেতাজিনগর জোড়া খুনে একাধিক দুষ্কৃতীর হাত, আটক 10
অপরাধ বিজ্ঞান বলছে, প্রমোটিং কিংবা অন্য কোনও কারণে খুন হলে এভাবে আলমারি খুলে জিনিসপত্র লুটপাট করা হত না । যদিও সেই সন্দেহ খুব একটা উড়িয়ে দেয়নি পুলিশ । তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করার ক্ষেত্রেও এই কাজ করা হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছিল ৷ পুলিশ জানতে পারে ঘটনার দিন পাঁচেক আগে পর্যন্ত দম্পতির বাড়িতে রঙের এবং ছাদ সারাইয়ের কাজ হয় । এই কাজ করা হয়েছিল এক ঠিকাদারের মাধ্যমে । ওই ঠিকাদার বৃদ্ধের পূর্ব পরিচিত । আসলে ওই বৃদ্ধ একটা সময় রুফ রিপেয়ারিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । সেই সূত্রে এই ধরনের মিস্ত্রি এবং ঠিকাদারদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ছিল তাঁর । তদন্তকারীরা ওই বাড়ির পরিচারিকা লতার সঙ্গে কথা বলে জানতে পারেন, বাড়িতে কাজ করানোর সময়েও অনেকটাই খোলামেলা ভাবে মিশতেন ওই দম্পতি । মিস্ত্রিদের সামনেই আলমারি খুলে টাকাপয়সা বের করতেন ।
আরও পড়ুন : নেতাজিনগরে দম্পতি খুনের কিনারা, বিহার থেকে গ্রেপ্তার রংমিস্ত্রি
তদন্তের শুরুতেই ওই ঠিকাদারের খোঁজ নেয় পুলিশ । তাকে জেরা করে জানা যায়, দম্পতির বাড়িতে কাজের জন্য তিনি ঠিকা মিস্ত্রি ভাড়া করে আনতেন । 6-7 জন ঠিকা মিস্ত্রি এই কাজ করেছিল । পুলিশ তাদের প্রত্যেকের খোঁজ শুরু করে । সেই সূত্রেই বিহার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় ঠিকা মিস্ত্রি মহম্মদ হামরুজকে । এই খুনের ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে ছিল সে । 3 অগাস্ট বিহারের কাটিহার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় তাকে ।