কলকাতা, 18 মে : লোকসভা নির্বাচনে আশ্চর্য ঘটনা ঘটবে বলে মনে করেন CPI(M) নেতা গৌতম দেব। তিনি বলেন, "গতবারের চেয়ে এবার আরও ভালো কাজ করেছে দল ।" লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল, তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব থেকে শুরু করে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে CBI-র ক্লিনচিট দেওয়া নিয়ে নানা কথা উঠে এল Etv Bharat-এর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে।
Etv Bharat : আপনি অসুস্থ। বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যও অসুস্থ। প্রচারে যেতে পারলেন না। এই অবস্থায় কী মনে করছেন আপনার দলের ভালো ফল হবে ?
গৌতম দেব : বুদ্ধদা নেতা। আমিও নেতা। তবে বুদ্ধদার মতো অত বড় মাপের নেতা আমি নই। আমাদের দু'জন কর্মী কমে গেলে ক্ষতি হয় । এক্ষেত্রে দু'জন নেতা কাজ করতে না পারলে সামান্য ক্ষতি হতে পারে । তবে CPI(M) এমন একটি দল যা এটা সহজেই অতিক্রম করতে পারবে । গতবারের চেয়ে এবারে আরও ভালো কাজ হয়েছে । মিটিং, মিছিল সব ভালোই হয়েছে যা শুনছি আমি। নিউটাউনে যেখানে আমি থাকি সেখানে খুব ভালো মিটিং এবং জনসমাবেশ হয়েছে। আশা করছি রেজ়াল্ট ভালো হবে।
Etv Bharat : ছ'দফা নির্বাচন তো দেখলেন। এবার কী মনে হচ্ছে রেজাল্ট কি সত্যি ভালো হবে ?
গৌতম দেব : তৃণমূল কংগ্রেস আরও বেপরোয়া হয়েছে । সমস্ত জায়গায় তৃণমূল কংগ্রেস শক্তি ব্যবহার করতে পারছে না। তারা শক্তি প্রত্যাহার করছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ব্যাপক চাপ। অন্তর্কলহ দেখা দিয়েছে দিকে দিকে। এই মুহূর্তে তৃণমূল কংগ্রেস দ্বিধাভক্ত। আমি তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের সঙ্গে বসেছি। আলোচনা করেছি। কথা বলেছি। তবে 40 জন বিধায়ক যোগ দেবেন কি না BJP-তে তা আমি জানি না। যোগ দিতেও পারে নাও দিতে পারে। ব্যক্তিগতভাবে দুজন তৃণমূল কংগ্রেসের কুখ্যাত বাম বিরোধী নেতা আমায় বলেছে 23 তারিখ দুপুরে তৃণমূল কংগ্রেসের কলকাতার সব পার্টি অফিস ভাঙা হবে। যে বলেছে সে তৃণমূল কংগ্রেসের কার্ড হোল্ডার। আমরা জানি BJP এবং তৃণমূল রিগিং করাবে। সব চেষ্টা করবে মারামারি কাটাকাটি করার। বিরোধীদের ক্ষতি করবে। 42 এ 42 আসন পুরো ফালতু কথা। আমাদের রেজ়াল্ট ভালো হবে।
Etv Bharat : আপনাদের কটা আসন হবে?
গৌতম দেব : পলিটবিওরোর মিটিং,কেন্দ্রীয় কমিটির মিটিং,স্টেট কমিটির মিটিংয়ে আলোচনা হবে। এরই মাঝে দুবার আমরা রিভিউ করেছি। পর্যালোচনা করেছি। কটা আসন পাব, আর কটা পাব না, তার যুক্তি ব্যাখ্যা এখনই খাটবে না। ওইভাবে রিভিউ না করে আমি বলেছি, প্রশ্নপত্র করে নেতৃত্বের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। তারা সেই প্রশ্নের উত্তর লিখে পূরণ করে স্টেট কমিটির কাছে পাঠাক। গতবারের দুটি আসন নয়। আবার 42-এ 42-এর কোনও কথা নেই। BJP-র 23 এরও কোনও কথাই নেই। আশ্চর্য ঘটনা ঘটবে। অত্যাশ্চর্য ঘটনা ঘটবে এবার নির্বাচনে। ব্যারাকপুরে কী হবে? দমদমে কী হবে এখনই বলা যাচ্ছে না। বারাসতের থেকে বসিরহাটের অবস্থা খুব ভালো নয়। তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এবং BJP-র অন্তর্ঘাত সেই সঙ্গে BJP-র সঙ্গে তৃণমূলের গোপন আঁতাত, এসবই প্রভাব ফেলবে লোকসভা নির্বাচনে।
সৌমিত্র খাঁ, মুকুল রায়, অর্জুন সিংয়েই সীমাবদ্ধ থাকবে না তৃণমূলের দলের ভাঙন। ব্যাপারটা অনেকটা প্রসারিত। কর্মীরা হতাশাগ্রস্ত। মুখ্যমন্ত্রী ভাইপোকে নিয়ে ছুটছে। শুভেন্দুকে টাইট দিতে পারছে না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তার অন্যতম কারণ হল শুভেন্দুর জনসমর্থন। এই মমতা ভোটের পর কী করবে সেটা শুভেন্দু জানেন। শুভেন্দু একাধিকবার তৎকালীন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে আলোচনা করেছে। আমিও রাষ্টপতির কাছে গেছি। আলোচনা করেছি। রাহুল গান্ধির সঙ্গেও আলোচনা করেছি। প্রণববাবু সব বলেছেন আমাকে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব জানে। যা এই মুহূর্তে বলা যাবে না। তৃণমূলের মধ্যে বিরোধই হবে দলের ভাঙনের মূল কারণ। বাহিনী দিয়ে মারামারি কাটাকাটি করবে তৃণমূল কংগ্রেস।
Etv Bharat : CBI প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে ক্লিনচিট দিয়েছে, তৎকালীন রাজ্যের প্রধান বিরোধী নেত্রী বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী তিনি সেদিন সিঙ্গুরের ঘটনায় কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে । কী বলবেন ?
গৌতম দেব : CBI সব দেখে বুদ্ধদাকে ক্লিনচিট দিয়েছে। ফলস কেস দেওয়ার চেষ্টা হয়েছিল বুদ্ধদাকে। তাপসী মালিককে খুন করেছিল। মমতার উচিত ছিল দুঃখপ্রকাশ করা। মমতার কোনও বিবৃতি নেই। আমি যদি এখন মমতার বিরুদ্ধে CBI করতে চাই। নিউটাউন নিয়ে কিছু প্রমাণ করতে পেরেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পারেনি। ক্ষমতা নেই । এই জমি আমি কার কাছ থেকে কত টাকায় কিনেছি, সব তথ্য ফাইলে রয়েছে। মমতার ক্ষমতা নেই কিছু করার। বুদ্ধদার ইমেজ নষ্ট করার জন্য সেদিন এই ষড়যন্ত্র হয়েছে। বুদ্ধদা আমাদের মাসকট। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ব্যক্তিগত ইমেজে চলেন। তৃণমূল কংগ্রেসের নাম একবারও না বলে ওর দলের বক্তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম বলে দেয়। এটাই ওর ব্যক্তিগত ইমেজ। বুদ্ধদাকে বদনাম করার জন্য মমতা সেদিন ষড়যন্ত্র করেছিল। ও সবার সঙ্গে বোঝাপড়া করেছে । কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়া করেছে । মায়ের কাছে নিয়ে গিয়ে বাজপেয়িকে মালপো খাইয়েছে । মোদির সঙ্গে আবার এখন গন্ডগোল । ও সব পারে।"