কলকাতা, 24 অক্টোবর : জন্মের পরে মা-বাবা তাকে হাসপাতালে ফেলে পালিয়েছিল । সেই থেকে হাসপাতালের ওয়ার্ডই তার ঠিকানা, ঘর-বাড়ি । ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা তার পরম আত্মীয় । আর এই পরম আত্মীয়দের আদরেই বেড়ে উঠছে মিনু । বাঁচার আশা ছিল না কোনওভাবেই । তা সত্ত্বেও, 2 মাস বয়সে পেটের টিউমারে অস্ত্রোপচার করা হয় । দেখা যায় সেটা ক্যানসার । এরপর শুরু হয় কেমোথেরাপি । এখন তার বয়স 2 । এখন সে সম্পূর্ণ সুস্থ । তবে, ছোট্ট মিনুর ঘর-বাড়ি এখনও হাসপাতালই ।
কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল । 2017-র 3 অক্টোবর এই হাসপাতালে মিনুর জন্ম হয় । জন্মের পরে দেখা যায়, তার পেটের ভিতর কোমরের দিকে বিশাল একটা টিউমার রয়েছে । যেটা বিরল । বড় মাপের এই টিউমারে অস্ত্রোপচারের জন্য আলোচনা করেন চিকিৎসকরা । এরপর এই শিশুকন্যার মা-বাবার আর খোঁজ মেলেনি । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি পুলিশকে জানায় । যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছিল, দেখা যায় সেটা ভুয়ো । তখন থেকেই কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগের ওয়ার্ডই এই শিশুকন্যার ঘরবাড়ি হয়ে ওঠে । হাসপাতাল থেকেই তার নাম দেওয়া হয় মিনু ।
এদিকে তার বয়স যখন 2 মাস, তখন অস্ত্রোপচার করা হয় ওই টিউমারে । বায়োপসি রিপোর্টে জানা যায়, ওই টিউমারটি আসলে ক্যানসার । এরপর শুরু হয় কেমোথেরাপি । ইতিমধ্যে তার বয়স যখন ছয় মাস তখন হাসপাতালেই পালন করা হয় অন্নপ্রাশন । হাসপাতালের ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা সকলের চাঁদায় তার ভরণপোষণ চলে । কেমোথেরাপির কোর্স চলার সময় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় । অসুস্থ হয়ে পড়তে থাকে সে । এর ফলে বন্ধ করে দিতে হয় কেমোথেরাপি । তার পেটে আরও একটি টিউমারের খোঁজ পাওয়া যায় । সেটাও ক্যানসার বলে জানা যায় । সূত্রের খবর, চলতি বছরের গোড়ার দিকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা যায় পেটের মধ্যে ওই টিউমারের অস্তিত্ব আর নেই ।
এদিকে, দুই বছরের জন্মদিন পালিত হয়েছে মিনুর । চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ছোট্ট মিনু এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । এবিষয়ে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের MSVP (মেডিকেল সুপারিনটেনডেন্ট কাম ভাইস প্রিন্সিপাল) ইন্দ্রনীল বিশ্বাসের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, "মা-বাবা ফেলে রেখে চলে যায়, এমন অনেক শিশুকেই আমাদের দায়িত্ব নিতে হয় । পরে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয় । এই শিশুকন্যা হাসপাতালের সকলের আদরের । এখন ও সম্পূর্ণ সুস্থ ।" এই হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, "কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, যার জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল । পরে দেখা যায় টিউমার ভ্যানিশ হয়ে গেছে । এই শিশুকন্যা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ । কেমোথেরাপির জন্য হোক বা অন্য যে কোনও কারনেই হোক, চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটা পরীক্ষা সাপেক্ষ ।"