কলকাতা, 19 মার্চ: ওএমআর শিটের পর এবার পৌরসভার নিয়োগপত্র ৷ রাজ্য়ে শিক্ষক নিয়োগ (Teacher Recruitment Scam) দুর্নীতি তদন্তের মাঝেই চাকরি সংক্রান্ত নয়া দুর্নীতির হদিশ পেল ইডি ৷ এসএসসির পর এবার সরকারের অন্য়ান্য় বিভাগেও নিয়োগের ক্ষেত্রে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-ঘনিষ্ঠ অয়ন শীলের ভূমিকা এখন ইডির আতস কাঁচের তলায় ৷ নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্তে নেমে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ এই অয়ন শীলের খোঁজ পায় ইডি আধিকারিকরা ৷ তাকে আটকও করা হয় ৷ এবার অয়ন শীলের বাড়ি থেকেই উদ্ধার হল রাজ্যের একাধিক পৌরসভার নিয়োগ পত্র এবং নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি সহ বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি।
প্রাথমিকভাবে অয়ন শীলের বাড়িতে তল্লাশি চালানোর পর কার্যত কপালে ভাঁজ পড়েছে ইডির আধিকারিকদের ৷ অয়নের বাড়ি থেকে উদ্ধার হওয়া নথি যাচাইয়ের পর ইডি আধিকারিকরা মনে করছেন, রাজ্যে যেভাবে এসএসসির নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ড সংগঠিত হয়েছে, ঠিক সেইভাবে রাজ্যের একাধিক পৌরসভাগুলিতেও টাকার বিনিময়ে চাকরি দেওয়া হয়েছিল। ইতিমধ্যেই রাজ্য তোলপাড় হয়ে উঠেছে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায়। এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একদিকে যেমন রাজ্যের তৎকালীন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হাতে গ্রেফতার হয়েছেন, ঠিক তেমনই জেলে আছে তাঁর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ও। সঙ্গে উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা, সোনা, যা এর আগে খুব কমই দেখেছে পশ্চিমবঙ্গ।
শুধু পার্থ-অর্পিতা নয়, নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় এই মুহূর্তে গরাদের পিছনে আছেন পর্ষদের সভাপতি থেকে শুরু করে একাধিক আধিকারিক ৷ রাজ্য সরকার যখন এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় অনেকটাই ব্য়াকফুটে, তখনই রাজ্যে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডের তদন্তে নেমে একাধিক পৌরসভাতেও নিয়োগ দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য পেল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। জানা গিয়েছে, সদ্য তৃণমূল থেকে বহিষ্কৃত হুগলির প্রাক্তন যুব তৃণমূল নেতা এবং প্রোমোটার অয়ন শীলের সল্টলেকের বাড়িতে গতকাল তল্লাশি অভিযান চালায় ইডি। সূত্রের খবর, এখনও পর্যন্ত ইডির এই তল্লাশি অভিযানে উঠে এসেছে একাধিক তথ্য। জানা গিয়েছে, অয়নের সল্টলেকের ফ্ল্যাট এবং অফিস থেকে উদ্ধার হয়েছে এসএসসির একাধিক ওএমআর শিট সহ একাধিক নথিপত্র এবং চাকরিপ্রার্থীদের রোল নাম্বার লেখা খাতা। তদন্তকারীদের দাবি, ঘরের মধ্যে বিভিন্ন আলমারিতে থাকে থাকে সাজানো ছিল এই ওএমআর শিট সহ একাধিক নথিপত্রগুলি।
আরও পড়ুন: প্রযোজনা ব্যবসায় যুক্ত হয়ে টলিউডে পসার জমিয়েছিল অয়ন, দাবি ইডি'র
অয়ন শীলের অফিসের একটি কম্পিউটারের হার্ডডিস্ক থেকেও মিলেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ইডি সূত্রে খবর, ওই হার্ডডিস্ককে রয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলার একাধিক পুরসভার নিয়োগ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি এবং নিয়োগ সংক্রান্ত একাধিক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। অর্থাৎ রাজ্য যখন এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তোলপাড়, ঠিক সেই সময় পুরসভাতেও দুর্নীতি হয়েছে বলে চাঞ্চল্য়কর অভিযোগ কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারীকদের।
এই ঘটনায়, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে যে একজন প্রোমোটারের ফ্ল্যাট এবং অফিসে কীভাবে চাকরি প্রার্থীদের তথ্য এসে পৌঁছোল? কীভাবে এল এসএসসির ওএমআর শিট এবং পুরসভার নিয়োগপত্র? ইডির তদন্তকারীদের দাবি, উদ্ধার হওয়া ওএমআর শিট যে সকল ছাত্র-ছাত্রীদের নাম লেখা রয়েছে সেখানে অনেকেই বর্তমানে চাকরি করছেন। শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে মোটা অংকের টাকার বিনিময়েই এই সকল চাকরি প্রার্থীরা নিজেদের চাকরিগুলি আদায় করেছিলেন।
অন্য়দিকে অয়নের বাড়ি এবং অফিস থেকে পাওয়া নথি যাচাই করে ইতিমধ্যেই সেই সকল পুরসভার তথ্য জোগাড় করতে শুরু করেছেন তদন্তকারীরা। প্রাথমিক ভাবে ইডির দাবি, শুধু এসএসসি নয়, শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে রাজ্যের একাধিক জেলার পুরসভাতেও চাকরি পেয়েছেন অযোগ্য চাকরি প্রার্থীরা। অর্থাৎ নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নতুন একটি দুর্নীতির পর্দা ফাঁস হওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা !