কলকাতা, 19 জুলাই : রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে দীর্ঘদিন দিল্লি যেতে পারেননি । এর মাঝে ভোটের বিপুল ঝক্কি ৷ ভাঙা পায়ে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপ দৌঁড়ে বেড়িয়েছেন তিনি । এমনকি, ডেইলি প্যাসেঞ্জার হয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও সামলেছেন নিজের ক্যারিশমায় । মমতার কথায় প্রত্যেকবার তিনি নির্বাচনের পর দিল্লি যান ৷ কিন্তু, করোনা পরিস্থিতিতে এবার যাওয়া হয়নি ৷ এতদিনে তিনি সময় পেয়েছেন ৷ তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হয়ে দিল্লি যাচ্ছেন মমতা । আগে ঠিক ছিল 25 জুলাই দিল্লি যাবেন তিনি । তবে সেই সূচিতে বদল করে এক দিন বাদে অর্থাৎ 26 জুলাই দিল্লি যাচ্ছেন তৃণমূল নেত্রী ৷ বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজেই জানিয়েছিলেন, তিনি জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে দিল্লি যাবেন । প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে দেখা করার পরিকল্পনা রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর ।
এবারের সফরে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধির সঙ্গে দেখা করতে পারেন তৃণমূল সুপ্রিমো । দিল্লি সফর প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, 'নির্বাচনের পর প্রত্যেকবার দিল্লি যাই । এবার কোভিডের জন্য যাওয়া হয়নি । সংসদের অধিবেশনের সময় যাব । অনেক বন্ধুর সঙ্গে দেখা হবে ৷' প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও তাঁর দেখা করার পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন, মোদির হোম গ্রাউন্ডে খেলবেন মমতা, একুশের ভার্চুয়াল গুজরাতের 32 জেলায়
একুশের নির্বাচনে মোদি বাহিনীকে পরাজিত করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে তৃণমূল কংগ্রেস । তৃতীয়বারের জন্য রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসেছেন মমতা । একুশের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্যের পর এবার 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে দিল্লি দখলের লড়াইকে পাখির চোখ করেছে তৃণমূল । একুশের ফল ঘোষণার পরপরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে প্রধানমন্ত্রী করার দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে । টুইটারে এ নিয়ে ট্রেন্ডও হয় । বিজেপি বিরোধী জোট তৈরিতে সলতে পাকানোর কাজে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন তৃণমূলের ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরও ৷ এমনটাই পর্যবেক্ষণ রাজনৈতিক মহলের একাংশের । এই প্রেক্ষাপটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিল্লি সফর রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে ।
দিল্লিতে বসে বিরোধী শিবির যখন মহাজোটের পরিকল্পনা করছে, তখনই দিল্লিতে হাজির থাকতে চলেছেন মমতা । গতকালই জানা যায়, দিল্লি সফরে মমতার সঙ্গী হতে পারেন মুকুল রায় । আগে কিংবা পরে দিল্লিতে জাতীয় স্তরের নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় মমতার সঙ্গী হিসেবে থাকতে পারেন মুকুল রায় । এদিকে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আগেই দিল্লি উড়ে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ 22 তারিখ রাতেই দিল্লির উদ্দেশে রওনা হবেন তিনি ৷ তার আগে রয়েছে 21 জুলাই শহিদ দিবস পালনের কর্মসূচি ৷
আরও পড়ুন, এবার ত্রিপুরা-অসম-পঞ্জাব-উত্তরপ্রদেশ-দিল্লিতেও দিদি, জায়েন্ট স্ক্রিনে একুশে জুলাই
একুশে জুলাই এবার কলকাতার রাজপথে হচ্ছে না । ভার্চুয়াল মাধ্যমে দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন । করোনা পরিস্থিতিতে দল সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ভার্চুয়াল মাধ্যমে ব্লকে ব্লকে, পাড়ায় পাড়ায় পৌঁছে দেওয়া হবে একুশে জুলাইকে ৷ বড় স্ক্রিনে সোশ্যাল মিডিয়া তথা ইন্টারনেটের সাহায্যে তৃণমূল সমর্থকদের কাছে পৌঁছে যাবে দলনেত্রীর কণ্ঠ । একই সময় তা প্রচারিত হবে কোচবিহার থেকে কাকদ্বীপে । ঠিক হয়েছে, দলের সবকটি সোশ্যাল মাধ্যম, যেমন ফেসবুক, ইউটিউব, টুইটার থেকে সরাসরি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাষণ প্রচারিত হবে । এছাড়া বিধায়ক, সাংসদদের ফেসবুক প্রোফাইল থেকেও সরাসরি দেখা যাবে একুশের অনুষ্ঠান । আর একটা বিষয়, 21 জুলাইকে কেন্দ্রে করে এবার প্রত্যেকের নজরে যেটা থাকবে তা হল, অন্য রাজ্য থেকে এবার সরাসরি দেখা যাবে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠান ৷ ত্রিপুরা-অসম-পঞ্জাব-উত্তরপ্রদেশ-দিল্লির মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে দিদির কন্ঠস্বর ৷
21 জুলাইয়ের পর্ব মিটলেই পরের দিন অভিষেক দিল্লি যাচ্ছেন ৷ আর তার চারদিন পর যাচ্ছেন মমতা ৷ এই পরিস্থিতিতে 2024 নিয়ে তৃণমূলের লড়াই স্পষ্ট ৷ আর মমতার দিল্লি যাত্রা সেটারই সূচনা করবে ৷