কলকাতা, 31 জুলাই : নেতাজিনগরের দম্পতি খুনের ঘটনায় উদ্বিগ্ন মুখ্যমন্ত্রী । আজ নবান্নে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন তিনি । তাঁর ইঙ্গিত, এই খুনের পিছনে থাকতে পারে প্রোমোটারের চোখ । তিনি বলেন, "যদি কেউ মনে করে থাকে, বৃদ্ধ দম্পতি খুন করে তাঁদের সম্পত্তি দখল করে রেহাই পেয়ে যাবে, তাহলে তারা ভুল করছে । কারও সম্পত্তি জোর করে দখল করে নেওয়া যাবে না ।"
নেতাজিনগরের অশোকা অ্যাভিনিউয়ের দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের দোতলা বাড়িতে পৌঁছে, গতকাল সিঁড়ির মাঝের দরজার সামনে দিলীপবাবুর স্ত্রী স্বপ্নার দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ তাঁর নাকে রক্তের দাগ ছিল । হোমিসাইড শাখার দুঁদে গোয়েন্দাদের জহুরি চোখ বলছে পেছন থেকে তাঁর গলায় চাপ দেওয়া হয়েছে । সম্ভবত সেটাই মৃত্যুর কারণ । চাপের কারণেই তাঁর নাক দিয়ে রক্ত বেরিয়ে এসেছে । মাথার পিছন থেকে আঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না পুলিশ । ইতিমধ্যে ময়নাতদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট পেয়েছেন তদন্তকারীরা । তবে সেই রিপোর্ট কী বলছে তা এখনই প্রকাশ্যে আনতে রাজি নয় লালবাজার । অন্যদিকে, ঘটনায় 10 জনকে আটক করেছে পুলিশ ।
এই ঘটনাই পুলিশকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী । তিনি বলেন, "দ্রুত এই ঘটনার তদন্ত শেষ করতে হবে ।" তিনি নেতাজিনগরের পাশাপাশি নরেন্দ্রপুরের জোড়া খুনের ঘটনার তদন্তের কাজ শেষ করার কথাও বলেন । পাশাপাশি, পৌরসভা এবং পঞ্চায়েতগুলিকেও নির্দেশ দেন, এলাকায় এই ধরনের দম্পতি থাকলে তাঁদের নিরাপত্তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "যে বাড়িগুলিতে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে, সেগুলিতে স্তম্ভ বসিয়ে দেওয়া হবে । স্তম্ভগুলিতে খুন হওয়া ব্যাক্তিদের নাম লেখা থাকবে । অসৎ প্রমোটাররা যাতে ওই ধরনের জমি বা বাড়িগুলি দখল করে নিতে না পারে, তার জন্য আরও কড়া নজর রাখা হবে ।"
জানা গেছে, দিন চারেক আগে বাড়ির ছাদ সারাই ও ডাইনিং রুমের রঙের কাজ শেষ হয়েছে । মিস্ত্রিদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল দিলীপবাবুর ৷ কারণ, একটা সময় দিলীপবাবু রুফ ট্রিটমেন্টের কাজ করতেন । ৪-৫ বছর আগে তাঁর ভারত ওয়াটার প্রুফিং কম্পানিটির বেশ রমরমা ছিল । সম্প্রতি এই কম্পানি বন্ধ হয়ে গেছে । কয়েকদিন আগেই স্ট্রোক হয় দিলীপবাবুর । তারপর তিনি সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারতেন না । ছাদ সারাই এবং রংয়ের কাজের জন্য এক পরিচিত ব্যক্তিকে বরাত দিয়েছিলেন । তিনি এক এক দিন এক এক লেবার নিয়ে কাজ করতেন । বিভিন্ন জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই মিস্ত্রিদের সঙ্গে যথেষ্ট খোলামেলাভাবে মিশতেন দিলীপবাবু । তাদের সামনেই আলমারি থেকে বের করা হত টাকা । এদিকে সিঁড়ির তলায় থাকা কলিংবেল টিপলে দিলীপবাবু নিজে দেখতেন ৷ তবেই দরজার চাবি খুলতেন স্বপ্না । সেই সূত্রেই তদন্তকারীদের ধারণা, এই খুনে রয়েছে পরিচিত কেউ । গতকালই ঘর রং ও ছাদ সারাইয়ের কাজে যুক্ত থাকা এক ব্যক্তির নাম পায় পুলিশ । পাওয়া যায় একটি CCTV ফুটেজ় । সেই সূত্র ধরে আজ 10 জনকে আটক করেছে লালবাজার । পুলিশের ধারণা, এই খুনে দুই থেকে তিনজন সশরীরে উপস্থিত ছিল ।