ETV Bharat / state

সিঙ্গুরের ফল লজ্জাজনক, হারানো জমি ফেরত চেয়ে নেতাদের কড়া বার্তা মমতার - হুগলি জেলা

প্রকাশ্যে ধমক খেয়েছিলেন কেষ্ট । এবার সিঙ্গুরের ফল নিয়েও নিজের অসন্তোষের কথা জানালেন । পর্যালোচনা বৈঠকে রীতিমতো ধমকালেন হুগলির তাবড় নেতাদের ।

a
author img

By

Published : Jun 7, 2019, 10:11 PM IST

Updated : Jun 7, 2019, 10:43 PM IST

কলকাতা, 7 জুন : বছর দশেক আগে সিঙ্গুরের জমি থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর নতুন ইনিংস । অনিচ্ছুক কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সে দিন দাবি তুলেছিলেন বাংলায় পরিবর্তনের । আর আজ সেই সিঙ্গুরের মানুষই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে সিঙ্গুরের ফল খুবই খারাপ হয়েছে । হুগলি লোকসভা কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের । আজ দলীয় কর্মী-বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে সিঙ্গুর নিয়েই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় । সিঙ্গুরের ফলকে অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য় করলেন মমতা।

লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর জেলাওয়াড়ি পর্যালোচনা শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী । কেন, কীভাবে এমন ফল হল তা নিয়ে দফায় দফায় ময়নাতদন্ত শুরু করেছেন তিনি । খারাপ ফলের জন্য নেত্রীর রোশ থেকে রেহাই পাননি তাঁর অতি সাধের কেষ্টও । প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে । আজ তৃণমূল ভবনে হুগলির নেতাদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মমতা । সেখানেই তিনি সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।

mamata
অতীতের সেদিন । সিঙ্গুরে জমি ফেরানোর দাবিতে ধর্মতলায় প্রতিবাদ মঞ্চে মমতা - ফাইল ফোটো

এ বারের লোকসভা নির্বাচনে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন রত্না দে নাগ । রত্নার মতো নেত্রীর পরাজয়কে মমতা সহজে মেনে নিতে পারছেন না । সূত্রের খবর, আজকের বৈঠকে হুগলির ফলাফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তিনি । কেন হুগলিতে এমন ফল হল, তা জানতে চান মমতা । উপস্থিত নেতা-নেত্রী-কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর বার্তাও দেন ।

একই সঙ্গে, এ দিনের বৈঠকে দলবদলের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে । যে ভাবে ঘাসফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার ঢল নেমেছে তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা গেছে নেত্রীকে । উপস্থিত নেতা-নেত্রীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, গদ্দারদের সঙ্গে কোনও দিনও যোগাযোগ রাখবেন না । দলের অনেকে ভিতর-ভিতর অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও মন্তব্য করতে শোনা গেছে তাঁকে । একই সঙ্গে, তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বিশ্বাসঘাতকদের তিনি কোনও দিনও বরদাস্ত করবেন না । আর যাঁরা দল ছাড়তে চান, তাদের উদ্দেশ্যে নেত্রীর বার্তা, দরজা খোলা আছে চলে যেতে পারেন ।

আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা তৃণমূলের প্রায় সকল নেতাই । যদিও পর্যালোচনা বৈঠকে নেত্রী কী কী বলেছেন, তা নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি কেউই । নাম প্রকাশ্য অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, আজকের বৈঠকে বিশেষ করে সিঙ্গুরের নেতাদের কঠোর বার্তা দিতে শোনা যায় নেত্রীকে । পাশাপাশি, বেশ কয়েক জন দলীয় নেতাদের কাজে ক্ষোভ প্রকাশও করেন সাধারণ কর্মীরা । বিষয়টি শোনার পরই কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস মমতা । বিষয়টি নিয়ে দলীয় কর্মীদের লিখিত অভিযোগ জমা দিতেও নির্দেশ দেন । হুগলির পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমকে জেলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বলেন নেত্রী । নির্দিষ্ট সময়ের অন্তর দলীয় কর্মী-নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেন । তার পর এ বিষয় রিপোর্ট দিতেও নির্দেশ দেন নেত্রী ।

লোকসভা ভোটের ফল বলছে, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে BJP প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় 10 হাজার 429 ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন । লকেট পেয়েছেন 93,177 ভোট (46.06%)। সেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের প্রাপ্ত ভোট 82,748 (41.03%)।

সিঙ্গুরের ফল এতটা খারাপ হওয়ার পর তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ফের নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের নিশ্চয়ই কোথাও ভুল ছিল। পঞ্চায়েত সদস্যদের আচরণ নিয়েও নানা ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের প্রার্থীর হারের সম্ভাব্য কারণ আমার কাছে এখনও পরিষ্কার নয় । আজকের বৈঠকে মাস্টার মশাইয়ের সেই কথাই যেন শোনা গেল নেত্রীর গলায় । বললেন, ''যে কোনও ভাবে হোক সিঙ্গুরের জমি ফেরত পেতে হবে ।'' আজকের বৈঠকে তোলাবাজি-জুলুম-গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মুখ খোলেন নেত্রী । সূত্রের খবর, উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে মমতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ''আজ সবাই সিঙ্গুরের নেতা । আমি সবই খবর রাখি । মনে রাখবেন আমি প্রশাসন চালাই ।'' এর পর রীতিমতো হুমকির সুরে তিনি বলেন, ''এমন কিছু করবেন না যাতে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হয় ।"

পর্যালোচনা বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকেও নীতি আয়োগ-ভোট কারচুপি-সহ একাধিক ইশুতে মোদিকে আক্রমণ করেন মমতা । নীতি আয়োগের কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই বলে ফের একবার সরব হন নেত্রী । আর এ বারের ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে প্রতিবাদ জানানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

কলকাতা, 7 জুন : বছর দশেক আগে সিঙ্গুরের জমি থেকেই শুরু হয়েছিল তাঁর নতুন ইনিংস । অনিচ্ছুক কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে সে দিন দাবি তুলেছিলেন বাংলায় পরিবর্তনের । আর আজ সেই সিঙ্গুরের মানুষই তাঁর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে । সাম্প্রতিক লোকসভা ভোটে সিঙ্গুরের ফল খুবই খারাপ হয়েছে । হুগলি লোকসভা কেন্দ্রটি হাতছাড়া হয়েছে তৃণমূলের । আজ দলীয় কর্মী-বিধায়ক-সাংসদদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে সিঙ্গুর নিয়েই ক্ষোভ উগড়ে দিলেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় । সিঙ্গুরের ফলকে অত্যন্ত লজ্জাজনক বলে মন্তব্য় করলেন মমতা।

লোকসভা ভোটে গেরুয়া শিবিরের কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর জেলাওয়াড়ি পর্যালোচনা শুরু করেছেন তৃণমূল নেত্রী । কেন, কীভাবে এমন ফল হল তা নিয়ে দফায় দফায় ময়নাতদন্ত শুরু করেছেন তিনি । খারাপ ফলের জন্য নেত্রীর রোশ থেকে রেহাই পাননি তাঁর অতি সাধের কেষ্টও । প্রকাশ্যেই ভর্ৎসনা শুনতে হয়েছে অনুব্রত মণ্ডলকে । আজ তৃণমূল ভবনে হুগলির নেতাদের নিয়ে পর্যালোচনা বৈঠকে বসেছিলেন মমতা । সেখানেই তিনি সিঙ্গুরের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ।

mamata
অতীতের সেদিন । সিঙ্গুরে জমি ফেরানোর দাবিতে ধর্মতলায় প্রতিবাদ মঞ্চে মমতা - ফাইল ফোটো

এ বারের লোকসভা নির্বাচনে লকেট চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পরাজিত হয়েছেন রত্না দে নাগ । রত্নার মতো নেত্রীর পরাজয়কে মমতা সহজে মেনে নিতে পারছেন না । সূত্রের খবর, আজকের বৈঠকে হুগলির ফলাফল নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন তিনি । কেন হুগলিতে এমন ফল হল, তা জানতে চান মমতা । উপস্থিত নেতা-নেত্রী-কর্মীদের উদ্দেশে কঠোর বার্তাও দেন ।

একই সঙ্গে, এ দিনের বৈঠকে দলবদলের প্রসঙ্গটিও উঠে আসে । যে ভাবে ঘাসফুল ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যাওয়ার ঢল নেমেছে তা নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা গেছে নেত্রীকে । উপস্থিত নেতা-নেত্রীদের উদ্দেশে মমতার বার্তা, গদ্দারদের সঙ্গে কোনও দিনও যোগাযোগ রাখবেন না । দলের অনেকে ভিতর-ভিতর অন্য দলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে বলেও মন্তব্য করতে শোনা গেছে তাঁকে । একই সঙ্গে, তাঁর স্পষ্ট বার্তা, বিশ্বাসঘাতকদের তিনি কোনও দিনও বরদাস্ত করবেন না । আর যাঁরা দল ছাড়তে চান, তাদের উদ্দেশ্যে নেত্রীর বার্তা, দরজা খোলা আছে চলে যেতে পারেন ।

আজকের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন হুগলি জেলা তৃণমূলের প্রায় সকল নেতাই । যদিও পর্যালোচনা বৈঠকে নেত্রী কী কী বলেছেন, তা নিয়ে সরাসরি মুখ খুলতে চাননি কেউই । নাম প্রকাশ্য অনিচ্ছুক এক নেতা জানান, আজকের বৈঠকে বিশেষ করে সিঙ্গুরের নেতাদের কঠোর বার্তা দিতে শোনা যায় নেত্রীকে । পাশাপাশি, বেশ কয়েক জন দলীয় নেতাদের কাজে ক্ষোভ প্রকাশও করেন সাধারণ কর্মীরা । বিষয়টি শোনার পরই কার্যকর পদক্ষেপের আশ্বাস মমতা । বিষয়টি নিয়ে দলীয় কর্মীদের লিখিত অভিযোগ জমা দিতেও নির্দেশ দেন । হুগলির পর্যবেক্ষক ফিরহাদ হাকিমকে জেলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে বলেন নেত্রী । নির্দিষ্ট সময়ের অন্তর দলীয় কর্মী-নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা বলেন । তার পর এ বিষয় রিপোর্ট দিতেও নির্দেশ দেন নেত্রী ।

লোকসভা ভোটের ফল বলছে, হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত সিঙ্গুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে BJP প্রার্থী লকেট চট্টোপাধ্যায় 10 হাজার 429 ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছেন । লকেট পেয়েছেন 93,177 ভোট (46.06%)। সেখানে তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল প্রার্থী রত্না দে নাগের প্রাপ্ত ভোট 82,748 (41.03%)।

সিঙ্গুরের ফল এতটা খারাপ হওয়ার পর তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য বলেছিলেন, ফের নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের নিশ্চয়ই কোথাও ভুল ছিল। পঞ্চায়েত সদস্যদের আচরণ নিয়েও নানা ক্ষেত্রে নানা প্রশ্ন রয়েছে। আমাদের প্রার্থীর হারের সম্ভাব্য কারণ আমার কাছে এখনও পরিষ্কার নয় । আজকের বৈঠকে মাস্টার মশাইয়ের সেই কথাই যেন শোনা গেল নেত্রীর গলায় । বললেন, ''যে কোনও ভাবে হোক সিঙ্গুরের জমি ফেরত পেতে হবে ।'' আজকের বৈঠকে তোলাবাজি-জুলুম-গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মুখ খোলেন নেত্রী । সূত্রের খবর, উপস্থিত নেতাদের উদ্দেশে মমতা ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, ''আজ সবাই সিঙ্গুরের নেতা । আমি সবই খবর রাখি । মনে রাখবেন আমি প্রশাসন চালাই ।'' এর পর রীতিমতো হুমকির সুরে তিনি বলেন, ''এমন কিছু করবেন না যাতে কাউকে গ্রেপ্তার করতে হয় ।"

পর্যালোচনা বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকেও নীতি আয়োগ-ভোট কারচুপি-সহ একাধিক ইশুতে মোদিকে আক্রমণ করেন মমতা । নীতি আয়োগের কোনও আর্থিক ক্ষমতা নেই বলে ফের একবার সরব হন নেত্রী । আর এ বারের ভোটে কারচুপির অভিযোগ তুলে নির্বাচন কমিশনের অফিসের সামনে প্রতিবাদ জানানো উচিত বলেও মন্তব্য করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।

sample description
Last Updated : Jun 7, 2019, 10:43 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.