কলকাতা, 17 নভেম্বর : মেলেনি পুলিশের অনুমতি । তবু দাবি আদায়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে সকাল থেকে দলে দলে এসে উপস্থিত হন রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের অনুমোদনহীন মাদ্রাসার শিক্ষকরা । পুলিশি বাধা আসতে পারে সেই আশঙ্কায় প্রথমে চেতলা পার্কে জমায়েত করা হবে বললেও আসলে বালিগঞ্জ স্টেশনে টিকিট কাউন্টারের বাইরে এসে জমায়েত শুরু করেন তাঁরা । কিন্তু, জমায়েত শুরু করতেই পুলিশ গাড়িতে করে তুলে নিয়ে যান তাঁদের । তারপর থেকে সময়ে সময়ে মিছিলে অংশগ্রহণ করতে আসা মানুষরা স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসতেই তাঁদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ । রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মাদ্রাসা শিক্ষকরা গাড়িতে করে এলে তাঁদেরও একইভাবে পুলিশি ভ্যানে বা বাসে করে নিয়ে যাওয়া হয় । কেউ শান্তিপূর্ণভাবে যেতে না চাইলে তাঁকে টেনেহিঁচড়ে, পাঁজাকোলা করেও নিয়ে যেতে দেখা গেছে এদিন ।
পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের শাখা সংগঠন পশ্চিমবঙ্গ অনুমোদনহীন মাদ্রাসা শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী কল্যাণ সমিতির তরফে আজ মিছিলের ডাক দেওয়া হয়েছিল । চেতলা পার্ক থেকে হাজরা পর্যন্ত মিছিল করে হাজরা মোড় অবরোধ করার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের । কিন্তু, লালবাজার ও চেতলা থানায় অনুমতি চাওয়া হলেও অনুমতি দেয়নি পুলিশ । তার পরেও কর্মসূচি করা হবে বলে দৃঢ়বদ্ধ ছিলেন মাদ্রাসা শিক্ষকরা । এমনকী অতর্কিত আক্রমণের জন্য সকালের আগে জমায়েতের স্থানও জানানো হয়নি সংগঠনের তরফে । সকালে জানা যায়, বালিগঞ্জ স্টেশনের টিকিট কাউন্টারের বাইরে জমায়েত করে করা হবে মিছিল । কিন্তু, পুলিশও প্রস্তুত ছিল ।
এদিন সকালে জমায়েত শুরু হতেই মাঠে নামে পুলিশ । জমায়েতকারী অনুমোদনহীন মাদ্রাসার শিক্ষকদের তুলে নিয়ে যায় । প্রথমদিকে অনেকেই যেতে রাজি হননি পুলিশের সঙ্গে । তাঁদের মধ্যে ছিলেন শিক্ষক ঐক্য মুক্তমঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মইদুল ইসলামও । তিনি মাটিতে পড়ে গেলে তাঁকে কখনও টানতে টানতে, কখনও পাঁজাকোলা করে তোলা হয় পুলিশের প্রিজ়ন ভ্যানে । তারপর থেকেই মিছিলে অংশগ্রহণ করতে এসেছে সন্দেহ হলেই তাঁদের তুলে নিয়ে যায় পুলিশ । স্টেশন চত্বরের আশপাশে জমায়েত করতে দেখলে তাঁদেরও নিয়ে যাওয়া হয় । মিছিলের জন্য রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গাড়িতে করে আসা মাদ্রাসা শিক্ষকদেরও আটক করে পুলিশ । এমনকী এদিন স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসা মানুষদের মধ্যে কাউকে দেখে মাদ্রাসা শিক্ষক মনে হলেই তিনি কোথা থেকে এসেছেন, কোথায় যাচ্ছেন, কেন যাচ্ছেন, এভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করতে দেখা যায় পুলিশকে । সন্দেহ না মিটলে তাঁকেও তোলা হচ্ছিল গাড়িতে । এদিন বেলা প্রায় সাড়ে 12টা পর্যন্ত এভাবে অনুমোদনহীন মাদ্রাসা শিক্ষকদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় লালবাজারে ।
ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে শিক্ষার বিস্তারে দশ হাজার মাদ্রাসাকে অনুমোদন দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । কিন্তু, এখনও পর্যন্ত রাজ্যে মাত্র 235টি মাদ্রাসা অনুমোদন পেয়েছে । 2013 সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি পূরণের দাবি জানিয়ে অনেকবার আন্দোলন হয়েছে । হয়েছে অনশনও। কিন্তু, দাবি পূরণের বদলে মিলেছিল আরও প্রতিশ্রুতি । সেগুলিও পূরণ হয়নি বলে অভিযোগ । তাই দ্রুত অনুমোদনহীন মাদ্রাসাগুলিকে অনুমোদন দেওয়া হোক এবং সরকারি আর্থিক সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হোক । এই ধরনের একাধিক দাবিতে আজকের কর্মসূচির ডাক দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু, শেষ পর্যন্ত মিছিল করা সম্ভব হল না পুলিশের বাধায় ।