ETV Bharat / state

জীবন বিজ্ঞান : সোশাল মিডিয়ার প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিলল না আসল প্রশ্নপত্র - question paper

পরীক্ষার সপ্তমদিনে ছিল জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা। ছ'দিনের মতো আজও পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে প্রশ্ন সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায়। পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল নেই আসল প্রশ্নপত্রের।

প্রশ্নপত্র
author img

By

Published : Feb 20, 2019, 9:15 PM IST

কলকাতা, ২০ ফেব্রুয়ারি : আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার সপ্তমদিনে ছিল জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা। ছ'দিনের মতো আজও পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে প্রশ্ন সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায়। কিন্তু, পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল নেই আসল প্রশ্নপত্রের। নতুন পাঠ্যক্রম ও পুরাতন পাঠ্যক্রম দুইয়ের সঙ্গেই মেলেনি ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্র।

তাতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রটি কোথা থেকে আসল বা কবেকার? এবিষয়ে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বলেন, "কী ছড়িয়েছে তাই জানি না। যারা ছড়াচ্ছে তাদের প্রশ্ন করুন কী ছড়াচ্ছে। আমায় প্রশ্ন করছেন কেন?" তবে, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ভূগোল, অঙ্ক এবং ভৌত বিজ্ঞানের প্রশ্ন পরীক্ষা চলাকালীন ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়। যা মিলে যায় আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে। ছ'টি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক, পরীক্ষার্থীরা।

মুকুন্দপুর থেকে আসা এক অভিভাবিকা বলেন, " আমরা কলকাতার। ছেলে মেয়েদের বড় স্কুলে পড়াচ্ছি। অনেক টাকা খরচা করছি। কিন্তু, তার বিনিময়ে কি হচ্ছে? আমাদের বাচ্চাগুলো বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। আর সাফার করছে কলকাতার ছেলেমেয়েগুলো। কিন্তু, রেজ়াল্টে দেখা যায় জেলাগুলো ফার্স্ট হয়, কলকাতা ফার্স্ট আসে না। ভালো রেজ়াল্ট করে না। সেটার কারণটা কী? নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে। আমি এরকমও শুনেছি জেলার স্কুলগুলোতে বই খুলে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তো কোন ভরসাই পাচ্ছি না যে আমাদের বাচ্চাগুলো যে এত পড়াশোনা করল, এত কষ্ট করল, পরীক্ষা দিল তার মধ্যে কোনও ভরসাই নেই, মনোবল হারিয়ে ফেলছে।"

undefined
শুনুন বক্তব্য

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের এক পরীক্ষার্থী বলেন, "আমাদের মায়েরা হাজার হাজার টাকা খরচা করছে নোটসের জন্য। আমরা কী পাচ্ছি? আমরা শহরের বাচ্চারা টিউশন নিই, সাজেশন নিই, হাজার একটা জায়গায় পড়তে যাই। তার বদলে আমরা কী পাচ্ছি? আমরা শুনছি গ্রামের ছেলেমেয়েরা তেতুঁল গাছ বেয়ে উত্তরপত্র পেয়ে যাচ্ছে। তার জন্য ওখান থেকে ফার্স্ট হচ্ছে। তার মানে আমাদের টোটাল রেজ়াল্ট জিরো। আমাদের বলা হচ্ছে, পর্ষদের সাজেশন পড়লে আমরা কমন পেয়ে যাব। তা সত্ত্বেও আমরা খুব কম সাজেশন পেয়েছি। এগুলোর ফলে কী হচ্ছে? আমাদের রেজাল্ট তো এর জন্যে খারাপ হবেই।"

সপ্তমদিনে প্রশ্ন না মিললেও বিগত ৬ দিনের প্রশ্ন বেরিয়ে আসার ঘটনায় পর্ষদ ও শিক্ষামন্ত্রীকেই দায়ী করছেন শিক্ষক সংগঠনগুলো। এর জন্য পরোক্ষভাবে শিক্ষকদের দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্তকেই দুষছেন তাঁরা। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, "কী বলব। অতীতের পশ্চিমবাংলার ঐতিহ্য একেবারে লুটপাট হয়ে গেল। এতে পশ্চিমবাংলায় খুব ক্ষতি হয়ে গেল।"

সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়েজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রথম থেকে যেটা শুরু করেছিল, পরীক্ষার আগে থেকে তখনই আমরা বলেছিলাম যে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে যদি সুষ্ঠুভাবে চালাতে হয় তাহলে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর। যেটা তাঁরা একেবারেই করেননি। তাঁরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর আস্থা রাখেননি, তাঁরা তাদের উপর ভরসা করেননি। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে বাইরের লোক দিয়েছেন। একজন অফিসার ইনচার্জ একজন অ্যাডিশনাল সুপারভাইজার। ফলে এবারের পরীক্ষার ভার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর একেবারেই নেই। যেভাবে তাঁরা শিক্ষকদের একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, মোবাইল নিয়ে যাবেন না, মোবাইল ব্যবহার করবেন না, মোবাইল প্রধান শিক্ষকের কাছে রাখুন, মোবাইল সেন্টার ইনচার্জের কাছে রাখুন। কার্যত কোনও পরীক্ষাতেই শিক্ষকরা এটা করেন না। তাঁদের বোধবুদ্ধি আছে। দেখা গেল সেই মোবাইলের ফাঁক দিয়েই প্রতিটি পরীক্ষার শেষ হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়ে যাচ্ছে। কার্যত এটা থেকে বোঝা গেল, সর্ষের ভিতরেই যে ভূত লুকিয়ে নেই তা কে বলবে?"

undefined

কলকাতা, ২০ ফেব্রুয়ারি : আজ মাধ্যমিক পরীক্ষার সপ্তমদিনে ছিল জীবন বিজ্ঞান পরীক্ষা। ছ'দিনের মতো আজও পরীক্ষা শুরুর আধঘণ্টার মধ্যে প্রশ্ন সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে যায়। কিন্তু, পরীক্ষা শেষে মিলিয়ে দেখা যায়, ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রের সঙ্গে মিল নেই আসল প্রশ্নপত্রের। নতুন পাঠ্যক্রম ও পুরাতন পাঠ্যক্রম দুইয়ের সঙ্গেই মেলেনি ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্র।

তাতেই প্রশ্ন উঠছে, তাহলে ছড়িয়ে পড়া প্রশ্নপত্রটি কোথা থেকে আসল বা কবেকার? এবিষয়ে পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়ের বলেন, "কী ছড়িয়েছে তাই জানি না। যারা ছড়াচ্ছে তাদের প্রশ্ন করুন কী ছড়াচ্ছে। আমায় প্রশ্ন করছেন কেন?" তবে, বাংলা, ইংরেজি, ইতিহাস ভূগোল, অঙ্ক এবং ভৌত বিজ্ঞানের প্রশ্ন পরীক্ষা চলাকালীন ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়। যা মিলে যায় আসল প্রশ্নপত্রের সঙ্গে। ছ'টি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় ক্ষুব্ধ অভিভাবক, পরীক্ষার্থীরা।

মুকুন্দপুর থেকে আসা এক অভিভাবিকা বলেন, " আমরা কলকাতার। ছেলে মেয়েদের বড় স্কুলে পড়াচ্ছি। অনেক টাকা খরচা করছি। কিন্তু, তার বিনিময়ে কি হচ্ছে? আমাদের বাচ্চাগুলো বিভ্রান্ত হয়ে যাচ্ছে। পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। আর সাফার করছে কলকাতার ছেলেমেয়েগুলো। কিন্তু, রেজ়াল্টে দেখা যায় জেলাগুলো ফার্স্ট হয়, কলকাতা ফার্স্ট আসে না। ভালো রেজ়াল্ট করে না। সেটার কারণটা কী? নিশ্চয়ই কোনও কারণ আছে। আমি এরকমও শুনেছি জেলার স্কুলগুলোতে বই খুলে পরীক্ষা দিচ্ছে। আমরা তো কোন ভরসাই পাচ্ছি না যে আমাদের বাচ্চাগুলো যে এত পড়াশোনা করল, এত কষ্ট করল, পরীক্ষা দিল তার মধ্যে কোনও ভরসাই নেই, মনোবল হারিয়ে ফেলছে।"

undefined
শুনুন বক্তব্য

যাদবপুর বিদ্যাপীঠের এক পরীক্ষার্থী বলেন, "আমাদের মায়েরা হাজার হাজার টাকা খরচা করছে নোটসের জন্য। আমরা কী পাচ্ছি? আমরা শহরের বাচ্চারা টিউশন নিই, সাজেশন নিই, হাজার একটা জায়গায় পড়তে যাই। তার বদলে আমরা কী পাচ্ছি? আমরা শুনছি গ্রামের ছেলেমেয়েরা তেতুঁল গাছ বেয়ে উত্তরপত্র পেয়ে যাচ্ছে। তার জন্য ওখান থেকে ফার্স্ট হচ্ছে। তার মানে আমাদের টোটাল রেজ়াল্ট জিরো। আমাদের বলা হচ্ছে, পর্ষদের সাজেশন পড়লে আমরা কমন পেয়ে যাব। তা সত্ত্বেও আমরা খুব কম সাজেশন পেয়েছি। এগুলোর ফলে কী হচ্ছে? আমাদের রেজাল্ট তো এর জন্যে খারাপ হবেই।"

সপ্তমদিনে প্রশ্ন না মিললেও বিগত ৬ দিনের প্রশ্ন বেরিয়ে আসার ঘটনায় পর্ষদ ও শিক্ষামন্ত্রীকেই দায়ী করছেন শিক্ষক সংগঠনগুলো। এর জন্য পরোক্ষভাবে শিক্ষকদের দায়িত্ব থেকে সরানোর সিদ্ধান্তকেই দুষছেন তাঁরা। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, "কী বলব। অতীতের পশ্চিমবাংলার ঐতিহ্য একেবারে লুটপাট হয়ে গেল। এতে পশ্চিমবাংলায় খুব ক্ষতি হয়ে গেল।"

সেকেন্ডারি টিচার্স অ্যান্ড এমপ্লয়েজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ মিত্র বলেন, "মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রথম থেকে যেটা শুরু করেছিল, পরীক্ষার আগে থেকে তখনই আমরা বলেছিলাম যে মাধ্যমিক পরীক্ষাকে যদি সুষ্ঠুভাবে চালাতে হয় তাহলে সম্পূর্ণভাবে নির্ভর করতে হবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর। যেটা তাঁরা একেবারেই করেননি। তাঁরা বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের উপর আস্থা রাখেননি, তাঁরা তাদের উপর ভরসা করেননি। প্রতিটি কেন্দ্রে দুজন করে বাইরের লোক দিয়েছেন। একজন অফিসার ইনচার্জ একজন অ্যাডিশনাল সুপারভাইজার। ফলে এবারের পরীক্ষার ভার বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উপর একেবারেই নেই। যেভাবে তাঁরা শিক্ষকদের একের পর এক হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন, মোবাইল নিয়ে যাবেন না, মোবাইল ব্যবহার করবেন না, মোবাইল প্রধান শিক্ষকের কাছে রাখুন, মোবাইল সেন্টার ইনচার্জের কাছে রাখুন। কার্যত কোনও পরীক্ষাতেই শিক্ষকরা এটা করেন না। তাঁদের বোধবুদ্ধি আছে। দেখা গেল সেই মোবাইলের ফাঁক দিয়েই প্রতিটি পরীক্ষার শেষ হওয়ার অনেক আগেই বেরিয়ে যাচ্ছে। কার্যত এটা থেকে বোঝা গেল, সর্ষের ভিতরেই যে ভূত লুকিয়ে নেই তা কে বলবে?"

undefined
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.