ETV Bharat / state

বাড়িতে সংগ্রহশালা গড়তে চান কণাদের বাড়িমালিক - Indian Army Officer

টালা ব্রিজের একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টিনের চালের ঘর । একসময় এখানেই থাকতেন কারগিল যুদ্ধে শহিদ কণাদ ভট্টাচার্য । আজ সেই বাড়ি চলে গেছে অন্যের হাতে । তবে, তাঁর সব স্মৃতি সযত্নে লালনপালন করা বাড়ির মালিক চাইছেন সংগ্রহশালা হোক কণাদের ঘর ।

এই সেই বাড়ি
author img

By

Published : Jul 27, 2019, 4:23 AM IST

Updated : Jul 27, 2019, 11:00 PM IST

কলকাতা, 27 জুলাই : টালা ব্রিজের একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টিনের চালের ঘর । এটাই একসময় ছিল কারগিল যুদ্ধে শহিদ কণাদ ভট্টাচার্যের শৈশবের বৃন্দাবন । আদতে এটা ছিল ওঁর মামারবাড়ি । মামা বিমানবিহারী অত্যন্ত ভালোবাসতেন কণাদকে । বলা যেতে পারে, বুকে করে আগলে রাখতেন । সেই বাড়িতেই আজ আস্তানা অন্য কারও । বিমানবিহারীবাবু বেঙ্গালুরুতে থাকেন মেয়ের কাছে । কণাদের বাবাও প্রয়াত । আর ছেলে হারানোর স্মৃতি বুকে নিয়ে মা পূর্ণিমাদেবী এখন থাকেন দিল্লিতে । প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে । কিন্তু উত্তর কলকাতার বুকে আজও দাঁড়িয়ে আছে কণাদের স্মৃতিমাখা এই বাড়িটা । এখন সেই বাড়ির মালিক কল্যাণ চৌধুরি । যিনি আজও সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন কণাদের স্মৃতি । চাইছেন ওই বাড়িতে তৈরি হোক কণাদ সংগ্রহশালা ।

বাড়িতে ঢুকেই বসার ঘর । সেখানে নানা মহাপুরুষের ছবি । তার মধ্যে শোভা পাচ্ছেন কণাদ ভট্টাচার্যও । ডান দিকের ক্যাবিনেটে রাখা কণাদের নানা স্মারক । ঘরের ভেতরে তুলসি থানটা আজও অটুট । ছেলেবেলায় কণাদ না কি দুষ্টুমি করলে এই তুলসি ধরে চক্কর কাটত । আর পিছনে ছুটতেন পূর্ণিমাদেবী । তুলসি থানের পাশেই বাঁদিকের ঘরটায় থাকত কণাদ । এখান থেকেই তাঁর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়া । ক্যাপ্টেন কণাদের বাড়ি বলেই বহু টাকা খরচ করেও এই বাড়িটা কিনেছিলেন কল্যাণবাবু । আর তার জন্য তাঁর গর্বও কম নেই । কণাদ প্রসঙ্গ উঠতেই কল্যাণবাবু বললেন, "অনেক চেষ্টা করে টাকা জোগাড় করেছিলাম এই বাড়িটা কিনব বলে । আসলে মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম কণাদের মামার বাড়িটা আমার হোক । এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন বিমানবিহারীবাবু । সেটা জানার পর থেকেই আমার ইচ্ছেটা শুরু হয় । বাড়িটা কিনে আমি কোনওভাবেই কণাদের স্মৃতি মুছে ফেলতে চাইনি । তাই সযত্নে ওঁর সবকিছু রেখে দিয়েছি । যদি সরকারের সাহায্য পাই এখানে একটা সংগ্রহশালা বানাব ।"

এমনিতে কণাদকে নিয়ে স্মৃতিমেদুর গোটা এলাকা । বিমানবিহারীবাবুর খুব কাছের বন্ধু অরুণ পাল । ছেলেবেলায় খুব কাছ থেকে দেখেছেন কণাদকে । দুষ্টুমি করে কণাদ আশ্রয় নিত তাঁদের বাড়িতেই । একটা জানালায় লুকিয়ে বসে থাকত মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে । কথা বলতে বলতেই অরুণবাবুর স্মৃতির পাতা থেকে উঠে এল ওঁর ছেলেবেলার কথা, "একবার হয়েছিল কী ওঁর মামা বিমান, একটা নতুন সোফা কিনেছিল । ছোট্ট কনাদ ব্লেড দিয়ে সেই সোফা আড়াআড়ি চিরে দিয়েছিল । তারপর সটান আমাদের বাড়ি । কিছুক্ষণ পরে বিমান বিষয়টা বুঝতে পেরে আমাদের বাড়িতে আসে । এমনিতে কোনওদিনই বিমান কণাদকে বকাবকি বা মারধর করত না । কিন্তু সেদিন পিঠে একটা চড় কসিয়েছিল । তারপর কি আপসোস ।"

দেখুন ভিডিয়ো

কণাদের মৃত্যু মানতে পারেননি অরুণবাবু । বলেন, "সত্যি বলতে কি ওঁর মৃত্যুটা আমরা মানতে পারিনি । বড় কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন । তবে ওর বাবা বলেছিল, কেঁদো না কেউ । ও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে ।" বলতে বলতেই চোখটা ছলছল করছিল অরুণবাবুর । এমনই প্রচুর স্মৃতি রয়েছে এলাকায় অনেকরই মনে । বীর কণাদকে ভোলেনি কেউই ।

কলকাতা, 27 জুলাই : টালা ব্রিজের একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টিনের চালের ঘর । এটাই একসময় ছিল কারগিল যুদ্ধে শহিদ কণাদ ভট্টাচার্যের শৈশবের বৃন্দাবন । আদতে এটা ছিল ওঁর মামারবাড়ি । মামা বিমানবিহারী অত্যন্ত ভালোবাসতেন কণাদকে । বলা যেতে পারে, বুকে করে আগলে রাখতেন । সেই বাড়িতেই আজ আস্তানা অন্য কারও । বিমানবিহারীবাবু বেঙ্গালুরুতে থাকেন মেয়ের কাছে । কণাদের বাবাও প্রয়াত । আর ছেলে হারানোর স্মৃতি বুকে নিয়ে মা পূর্ণিমাদেবী এখন থাকেন দিল্লিতে । প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে । কিন্তু উত্তর কলকাতার বুকে আজও দাঁড়িয়ে আছে কণাদের স্মৃতিমাখা এই বাড়িটা । এখন সেই বাড়ির মালিক কল্যাণ চৌধুরি । যিনি আজও সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন কণাদের স্মৃতি । চাইছেন ওই বাড়িতে তৈরি হোক কণাদ সংগ্রহশালা ।

বাড়িতে ঢুকেই বসার ঘর । সেখানে নানা মহাপুরুষের ছবি । তার মধ্যে শোভা পাচ্ছেন কণাদ ভট্টাচার্যও । ডান দিকের ক্যাবিনেটে রাখা কণাদের নানা স্মারক । ঘরের ভেতরে তুলসি থানটা আজও অটুট । ছেলেবেলায় কণাদ না কি দুষ্টুমি করলে এই তুলসি ধরে চক্কর কাটত । আর পিছনে ছুটতেন পূর্ণিমাদেবী । তুলসি থানের পাশেই বাঁদিকের ঘরটায় থাকত কণাদ । এখান থেকেই তাঁর ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়া । ক্যাপ্টেন কণাদের বাড়ি বলেই বহু টাকা খরচ করেও এই বাড়িটা কিনেছিলেন কল্যাণবাবু । আর তার জন্য তাঁর গর্বও কম নেই । কণাদ প্রসঙ্গ উঠতেই কল্যাণবাবু বললেন, "অনেক চেষ্টা করে টাকা জোগাড় করেছিলাম এই বাড়িটা কিনব বলে । আসলে মনেপ্রাণে চেয়েছিলাম কণাদের মামার বাড়িটা আমার হোক । এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন বিমানবিহারীবাবু । সেটা জানার পর থেকেই আমার ইচ্ছেটা শুরু হয় । বাড়িটা কিনে আমি কোনওভাবেই কণাদের স্মৃতি মুছে ফেলতে চাইনি । তাই সযত্নে ওঁর সবকিছু রেখে দিয়েছি । যদি সরকারের সাহায্য পাই এখানে একটা সংগ্রহশালা বানাব ।"

এমনিতে কণাদকে নিয়ে স্মৃতিমেদুর গোটা এলাকা । বিমানবিহারীবাবুর খুব কাছের বন্ধু অরুণ পাল । ছেলেবেলায় খুব কাছ থেকে দেখেছেন কণাদকে । দুষ্টুমি করে কণাদ আশ্রয় নিত তাঁদের বাড়িতেই । একটা জানালায় লুকিয়ে বসে থাকত মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে । কথা বলতে বলতেই অরুণবাবুর স্মৃতির পাতা থেকে উঠে এল ওঁর ছেলেবেলার কথা, "একবার হয়েছিল কী ওঁর মামা বিমান, একটা নতুন সোফা কিনেছিল । ছোট্ট কনাদ ব্লেড দিয়ে সেই সোফা আড়াআড়ি চিরে দিয়েছিল । তারপর সটান আমাদের বাড়ি । কিছুক্ষণ পরে বিমান বিষয়টা বুঝতে পেরে আমাদের বাড়িতে আসে । এমনিতে কোনওদিনই বিমান কণাদকে বকাবকি বা মারধর করত না । কিন্তু সেদিন পিঠে একটা চড় কসিয়েছিল । তারপর কি আপসোস ।"

দেখুন ভিডিয়ো

কণাদের মৃত্যু মানতে পারেননি অরুণবাবু । বলেন, "সত্যি বলতে কি ওঁর মৃত্যুটা আমরা মানতে পারিনি । বড় কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন । তবে ওর বাবা বলেছিল, কেঁদো না কেউ । ও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে ।" বলতে বলতেই চোখটা ছলছল করছিল অরুণবাবুর । এমনই প্রচুর স্মৃতি রয়েছে এলাকায় অনেকরই মনে । বীর কণাদকে ভোলেনি কেউই ।

Intro:কলকাতা, ২৬ জুলাই: টালা ব্রিজের একেবারে ঢিল ছোড়া দূরত্বে টিনের চালের ঘর খানা। এটাই কারগিল শহীদ কণাদ ভট্টাচার্যের শৈশবের বৃন্দাবন! আসলে এটা ওর মামার বাড়ি ছিল। মামা বিমানবিহারী অত্যন্ত ভালবাসতেন কণাদকে। বলতে গেলে, বুকে করে আঁকড়ে ধরে থাকতেন। আজ বাড়িটা বিক্রি হয়ে গেছে। বিমানবিহারীবাবু বেঙ্গালুরুতে থাকেন মেয়ের কাছে। কণাদের বাবা প্রয়াত হয়েছেন। আর ছেলে হারানোর স্মৃতি বুকে নিয়ে মা পূর্ণিমা দেবী থাকেন দিল্লিতে। প্রায় লোকচক্ষুর আড়ালে। কিন্তু উত্তর কলকাতার বুকে আজো দাঁড়িয়ে আছে বাড়িটা। এখন সেই বাড়ির মালিক কল্যাণ চৌধুরী। যিনি আজও সযত্নে রক্ষা করে চলেছেন কণাদের স্মৃতি। চাইছেন ওই বাড়িতে তৈরি হোক কণাদ সংগ্রহশালা।



Body:বাড়িতে ঢুকেই বসার ঘর। সেখানে নানা মনীষীদের ছবি। তারমধ্যে শোভা পাচ্ছেন কণাদ ভট্টাচার্যও। ডান দিকের ক্যাবিনেটে রাখা কণাদের নানা স্মারক। ঘরের ভেতরে তুলসী থানটা আজও অটুট। ছেলেবেলায় কণাদ নাকি দুষ্টুমি করলে এই তুলসি ধরে চক্কর কাটত। আর পিছনে ছুটত মা পূর্ণিমাদেবী। তুলসী থানার পাশেই বাঁদিকের ঘরটায় থাকতো কণাদ। এখান থেকেই তার ভারতীয় সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়া। ক্যাপ্টেন কণাদের বাড়ি বলেই বহু টাকা খরচ করেও এই বাড়িটা কিনেছিলেন কল্যাণ। আর তার জন্য তাঁর গর্ববোধ আছে। কল্যাণ বলছিলেন, “ অনেক চেষ্টা চরিত্র করে টাকা জোগাড় করে এই বাড়িটা কিনে ছিলাম। আসলে মনে প্রাণে চেয়েছিলাম কণাদের মামার বাড়িটা আমার হোক। আসলে এই বাড়িটা বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলেন বিমানবিহারীবাবু। সেটা জানার পর থেকেই আমার ইচ্ছেটা শুরু হয়। বাড়িটা কিনে আমি কোনো ভাবেই কণাদের স্মৃতি মুছে ফেলতে চাইনি। তাই সযত্নে ওর সবকিছু রেখে দিয়েছি। যদি সরকারের সাহায‍্য পাই এখানে একটা সংগ্রহশালা বানাব।"



Conclusion:এমনিতে কণাদকে নিয়ে স্মৃতি মেদুর গোটা এলাকা। বিমানবিহারীর অভিন্ন হৃদয় বন্ধু অরুণ পাল। ছেলেবেলায় কাছ থেকে দেখেছেন কণাদকে। দুস্টূমি করে কণাদ আশ্রয় নিত তাদের বাড়িতেই। একটা জানলায় লুকিয়ে বসে থাকত মায়ের বকুনি থেকে বাঁচতে। অরুণবাবুর গলা আজ কারগিল বিজয় দিবসের দিনে স্মৃতিমেদুর শোনায়। বলছিলেন, “ একবার হয়েছিল কি ওর মামা বিমান, একটা নতুন সোফা কিনেছিল। ছোট্ট কনাদ ব্লেড দিয়ে সেই সোফা আড়াআড়ি চিরে দিয়েছিল। তারপর সটান আমাদের বাড়ি। কিছুক্ষণ পরে বিমান বিষয়টা বুঝতে পেরে আমাদের বাড়িতে আসে। এমনিতে কোনদিনই বিমান কণাদকে বকাবকি বা মারধর করতো না। কিন্তু সেদিন পিঠে একটা চড় কসিয়েছিল। তারপর কি আফসোস।"

কণাদের মানতে পারেননি অরুণ। বলছিলেন, “ সত্যি বলতে কি ওর মৃত্যুটা আমরা মানতে পারিনি। বড় কষ্ট পেয়েছিলাম সেদিন। তবে ওর বাবা বলেছিল, কেঁদো না কেউ। ও দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে।" চোখটা ছল ছল করে ওঠে আজও।
Last Updated : Jul 27, 2019, 11:00 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.