কলকাতা, 10 জানুয়ারি: ঝাঁ চকচকে অফিস ছেড়ে ফুটপাথে বাবার হোটেলের হাল ধরেছেন ফ্যাশন ডিজাইনিং পাশ নন্দিনী গঙ্গোপাধ্যায় (Lady Running a Hotel on the Pavement With Her Father) ৷ ডাক নাম মমতা ৷ তাঁর হাতের খাবার খেতে লাইন দিচ্ছেন সকলে । জায়গা ছোট তাই দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়ানোর পর মিলছে অর্ডার মতো ভাত, ডাল, সবজি, চারাপোনা/রুই/মটন অথবা চিকেন ৷ সঙ্গে 'মমতা' ফ্রি । অর্থাৎ, হাসিমুখে বাড়ির মতো আতিথেয়তায় বাবা-মেয়ের এই হোটেলে পেটপুরে খাচ্ছেন সকলে ।
বিল মিটিয়ে সকলের বক্তব্য, "মেয়েটি বড্ড মিষ্টি । হাসি মুখে সব সামলাচ্ছে ।" বিবাদী বাগ এলাকায় কলকাতা জিপিওর উলটো দিকে 3 নম্বর কয়লঘাট স্ট্রিট । বছর চারেক আগে এই ঠিকানাতেই ফুটপাথে কালো ত্রিপলের তলায় দশ আসনের হোটেল চালু করেন বেলেঘাটার চক্রধারী গঙ্গোপাধ্যায় । সঙ্গ দিতেন স্ত্রী বীনা ৷ তাঁদের তিন মেয়ে । এর মধ্যে বড় ও ছোট মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার আর মেজ মেয়ে নন্দিনী ওরফে মমতা বাড়ির অমতে ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে কলকাতার এক নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করেন । কিন্তু কাজ না-পেয়ে দীর্ঘদিন ঘরে বসে থাকার পর তিন বছর আগে গুজরাতের আমেদাবাদের এক হোটেলে কাজ করতে চলে যান । এরপর মায়ের অসুস্থতার কথা জানিয়ে বাবার কথায় বাড়ি ফিরে আসেন ৷ এই অবস্থায় বাবার পাশে দাঁড়াতেই ফুটপাথের ওই হোটেলে খাবার পরিবেশন করা শুরু করেন জিন্স-টপ পরিহিতা নন্দিনী (Hotel of Father and Daughter in Kolkata) ৷
আরও পড়ুন : বর্ষার আহ্বানে 'পান্তা উৎসব' চুঁচুড়ায়
গত দু'বছরে ফুটপাথের কাঠ-কয়লার উনুনে সমস্ত রান্না শিখে নিয়েছেন । পাকা রাঁধুনির মতো একাই কুড়িজনের ভাতের ফ্যান ঝরাচ্ছেন নন্দিনী । সমানতালে আগত খরিদ্দারদের সঙ্গে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে কথা বলে চলেছেন এক নাগাড়ে । যা দেখে ফেয়ারলি প্লেসের পথচলতি মানুষও দু'মিনিট দাঁড়িয়ে তাঁকে দেখছেন ৷ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । ফ্যাশন ডিজাইন নিয়ে পড়াশোনা করা নন্দিনীর ডাক নামও মমতা । খাবারের সঙ্গে ক্রেতারা আদৌ নন্দিনী গঙ্গোপাধ্যায়ের মমতা পাচ্ছেন ?
একগাল হেসে মমতার উত্তর, "যাঁরা খাচ্ছেন তাঁদেরকেই না হয় জিজ্ঞেস করুন । নিজের বড়াই তো নিজের মুখে করা যায় না । কোনও কাজই ছোট নয় । মা-বাবার জন্য সন্তানের যা করণীয় তাই করছি । এটা লজ্জার কোনও ব্যাপার নয় ।" মেয়ের এই কাজে বাবা চক্রধারী গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, "তিন মেয়েকে পড়াশোনা শিখিয়েছি । ওদের সবসময় বলতাম কোনও কাজই ছোট নয় । দাঁতে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকলে সব কাজেই সফলতা আসবে । মমতা তা বুঝেছে । ও না যোগ দিলে ব্যবসা দাঁড় করানো মুশকিল ছিল ।"
আরও পড়ুন : স্বাদ বদলাতে বার্মিশ ও থাই ফুড, চর্চায় মেদিনীপুর শহরের নয়া রেস্তোরাঁ
গত দেড় মাস ধরে এই হোটেলেই খাবার খাচ্ছেন অজয় ঠাকুর । জন্মসূত্রে বিহারি হলেও বাঙালি খাবার তাঁর খুব প্রিয় । বাবা-মেয়ের এই হোটেলের খাবারের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য, "মনে হবে না হোটেলে খাচ্ছি । মনে হবে যেন বাড়ির আদরে খাবার খাচ্ছি ৷ কম দামে ভালো মানের খাবার । এতদিন ধরে খাচ্ছি কোনও অসুবিধা হয়নি ৷ অন্যান্য হোটেলে খেলে তো শরীর খারাপ করে ৷ কিন্তু এখানে তা হয় না ৷" তবে নন্দিনী ও তাঁর বাবার আতিথেয়তা পেতে চাইলে সময় করে একটা দুপুরে আপনিও চলে যেতে পারেন কলকাতার বিবাদী বাগ এলাকার 3 নং কয়লাঘাট স্ট্রিটে ৷ চেখে আসতে পারেন ঘরোয়া সুস্বাদু খাবার ৷
আরও পড়ুন : 1500 দিন ধরে অভুক্ত ভবঘুরেদের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছেন বুম্বা ও তাঁর অনুগামীরা