কলকাতা, 20 জুন: কলকাতার কুমোর পাড়ার নাম বিশ্বখ্যাত ৷ কুমোরটুলি থেকে দুর্গা-সহ বিভিন্ন প্রতিমা পাড়ি দেয় বিদেশে ৷ এখানকার শিল্পীদের কর্মকাণ্ড নিয়ে ঢের উৎসাহ বিদেশি নাগরিকদের মনে ৷ তাই শিল্পীরা এখানে কাজ কীভাবে করেন ? তাদের জীবনযাপনই বা কেমন ? এসবই দেখতে সেখানে হাজির হলেন সুদূর ডেনমার্ক থেকে আগত দুই শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধি ৷
এমিল ওলসেন ডেনমার্কের নাগরিক । পেশায় নির্মাণ কর্মী । সম্প্রতি তাঁকে দেখা গেল পটুয়া পাড়ায় ঘুরতে । সঙ্গে ছিলেন অ্যানড্রেস বিলো হেনসেন । তিনিও পেশায় নির্মাণ কর্মী । তাঁরা সুদূর ডেনমার্ক থেকে ছুটে এসেছেন পটুয়া পাড়ার কর্মকাণ্ড দেখার জন্য । বাঁশ প্লাস্টিকের ফাঁক দিয়ে এক একটি শিল্পীর স্টুডিও উকি দিচ্ছেন তাঁরা । আর সেখানেই এখন কেউ বাঁশ কেটে কাঠামো বাঁধছেন, তো কেউ আবার দড়ি দিয়ে খর বাঁধছেন কাঠামোয় ।
আরও পড়ুন: কুমোরটুলি স্বাভাবিক ছন্দে ফিরতে এবার কুলিদের মুখেও স্বস্তির ছাপ
শিল্পীদের কাজের খুঁটিনাটি সবটাই দেখলেন এমিল ওলসেন । কথা বললেন মৃৎশিল্পীদের সঙ্গে । ডেনমার্কে যে কোনও কারিগরি বিদ্যা বা শিল্পকলার জন্য তিন বছরের কোর্স করতে হয় । তবে এখানে মৃৎশিল্পীদের বংশ পরম্পরায় কাজ করতে দেখে তাঁরা রীতিমত হতবাক । মৃৎশিল্পীদের থেকে শুনলেন তাঁদের কাজ কর্মের আদল । তাঁরা কোন সময় কী ধরনের কাজ করেন, তারও নিলেন খোঁজ ।
শুধু মৃৎশিল্পীদের অন্দরমহল নয়, ঘুরে দেখলেন সাজ শিল্পী ও শোলা শিল্পীদের কাজ কর্ম । এমিল ওলসেন ও অ্যানড্রেস বিলো হেনশেনকে কুমোরটুলি মৃৎশিল্পী সমিতির তরফে সম্পাদক সুজিত পাল একটু থার্মোকলের দুর্গা প্রতিমা তুলে দেন । সঙ্গে ফুলের তোড়া দিয়ে অভিনন্দন জানান । শোনেন ডেনমার্কের শ্রমিকদের কাজ কর্মের কথা । সুজিত পাল বলেন, "ওনারা ওয়ার্ল্ড ফেডারেশন অব ট্রেড ইউনিয়নের প্রেসিডেন্সিয়াল কাউন্সিলের সদস্য । এ রাজ্যে বেশ কয়েকটি জায়গায় তাঁরা ঘুরে দেখবেন । তারা নিজেরা পেশায় নির্মাণ কর্মী। এ রাজ্যে নির্মাণ কর্মীদের কাজ কর্ম, তাদের সামাজিক সুরক্ষা, আর্থিক অবস্থা ও নিরাপত্তা এই সম্পর্কে জানবেন তাঁরা । পাশাপশি মাটি দিয়ে এমন একটি শিল্প হয় এবং যেখানে এত শিল্পী বংশ পরম্পরায় কাজ করে চলেছেন, সে বিষয়েও তাঁরা জানলেন।"
আরও পড়ুন: ফটো তুলতে রেকর্ড সংখ্যক আবেদন কুমোরটুলিতে
দুর্গাপুজো আসতে আর বাকি মাসচারেক ৷ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে দুর্গা মূর্তি বাঁধার কাজ। গত বছরই ইউনেসকোর স্বীকৃতি পেয়েছে বাংলার দুর্গা পুজো। সেই নিয়েও জানার কৌতূহল ছিল শ্রমিক সংগঠনের ওই দুই প্রতিনিধির। এই উৎসব কেমন হয় সে বিষয়ে অনেকটাই ছবি ও ভিডিয়ো দেখিয়ে এবং গল্প করে কুমোরটুলি মৃৎশিল্পীরা জানিয়েছেন এমিল ও অ্যানড্রেসকে । কুমোরটুলি সফর তাঁদের স্মৃতির পাতায় থেকে যাবে বলেই পটুয়া পাড়ার শিল্পীদের জানিয়েছেন ডেনমার্কের নাগরিকরা ।