কলকাতা, 1 অগাস্ট : প্রথমে বেহালা, পরে নেতাজি নগর । আর কলকাতা পুলিশের এলাকায় না হলেও নরেন্দ্রপুর । বাড়িতে বয়স্কদের একা থাকার সুযোগ নিয়ে লুটপাট চালাতে গিয়ে খুন করা হচ্ছে একের পর এক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে । পুলিশের সন্দেহ সেটাই । সেই সূত্রে বয়স্কদের নিরাপত্তা নিয়ে কলকাতা পুলিশ চিন্তাভাবনা শুরু করে । এরপর খুন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রীও । তারপরই গতকাল কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে পুলিশ কমিশনার অনুর শর্মার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক হয় । তাতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ।
ভাবনাচিন্তা চলছে, কলকাতা পুলিশের এলাকায় বসবাসকারী একাকী বয়স্কদের জন্য লাগানো হবে বিপদঘণ্টি । সঙ্গে চালানো হবে CCTV-র নজরদারি । তেমন প্রয়োজন হলে একাকী বয়স্ক দম্পতি কিংবা একলা থাকা বয়স্কদের বাড়ির সামনে বসানো হবে CCTV । তবে বয়স্কদের সুরক্ষায় কলকাতা পুলিশের বাজি প্রণাম প্রকল্প ।
প্রণাম । কলকাতা পুলিশের নেওয়া বয়স্কদের জন্য এক সামাজিক প্রকল্প । মূলত প্রবীণ মানুষজনের কথা ভেবেই 2009 সালের 27 জুন কলকাতা পুলিশ শুরু করে 'প্রণাম' । এখন এর সদস্য সংখ্যা 14 হাজারের কিছু বেশি । বয়স্কদের সুরক্ষার ক্ষেত্রে কলকাতা পুলিশ তুরুপের তাস করতে চাইছে এই প্রকল্পকেই । গতকালের বৈঠকে ঠিক হয়েছে কলকাতা শহরের বেশিরভাগ প্রবীণ নাগরিকদের নিয়ে আসা হবে এই প্রকল্পের আওতায় । প্রবীণ মানুষজনের সঙ্গে এর মাধ্যমেই আরও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে হবে । আর সেই কাজের জন্য গতকাল থেকেই শহরের একাকী থাকা সমস্ত প্রবীণ নাগরিকের ডেটাবেস তৈরিতে নেমেছে কলকাতা পুলিশ । যে ডেটাবেসের সঙ্গেই থাকবে ওই প্রবীণদের সঙ্গে প্রতিদিনের সংস্পর্শে থাকা পরিচারিকা থেকে শুরু করে চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজে যুক্ত থাকা মানুষজনের পুরো পরিচয় ও ফোন নম্বর । বাড়িতে কোনও প্লাম্বার কিংবা রাজমিস্ত্রি কিংবা রংমিস্ত্রি বা অন্য কোন ধরনের কাজের মিস্ত্রির প্রয়োজন হলে তারও খোঁজ রাখবে কলকাতা পুলিশ । থানাতে ডিউটিরত কনস্টেবলরা তাঁর এলাকায় খোঁজ রাখবেন ওই প্রবীণ মানুষের । ওই কনস্টেবলরা নিজের ডিউটির এলাকায় থাকা প্রবীণদের সপ্তাহে একবার ফোন করবেন । 15 দিন অন্তর যাবেন বাড়িতে ।
কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে প্রবীণ নাগরিকদের জন্য আগে থেকেই চালু ছিল একটি টোল ফ্রি নম্বর । লালবাজার সূত্রের খবর এবার সেটিকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । নম্বরটি হল 9830088884 । এই নম্বরে ফোন করে যে কোন প্রবীণ মানুষ নিজেদের সমস্যার কথা জানাতে পারবেন । আজকের বৈঠকে ঠিক হয়েছে প্রবীণ নাগরিকদের ডেটা সংগ্রহের পর তাঁদের সিকিউরিটি অডিট করা হবে । এমনিতে কলকাতা পুলিশের এলাকার প্রত্যেকটি মোড় CCTV ক্যামেরায় মোড়া । ঠিক হয়েছে কোনও এলাকায় যদি একাকী প্রবীণ মানুষ থাকেন , তবে তাঁর বাড়ির উপর নজর রেখে ঠিক হবে CCTV কোন অ্যাঙ্গেলে থাকবে । ওই এলাকায় CCTV-র সংখ্যা অপ্রতুল হলে তা পূরণ করা হবে । একইসঙ্গে সমস্ত সমর্থ প্রবীণদের বলা হবে বাড়িতে CCTV লাগানোর জন্য । তারপরও যদি কোনও হতদরিদ্র মানুষ থাকেন , যাঁর CCTV কেনার ক্ষমতা নেই, সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন বুঝে কলকাতা পুলিশ নিজেই লাগাবে CCTV ক্যামেরা । একইসঙ্গে লালবাজার চিন্তাভাবনা শুরু করেছে প্রবীণ মানুষজনের বাড়িতে বিপদঘণ্টি লাগানোর । যাতে ওই ঘণ্টি শুনে এগিয়ে আসতে পারেন প্রতিবেশীরা । এই কাজে বিদেশের কায়দায় নেবারহুড পুলিশিং চালুর ভাবনাচিন্তা শুরু করেছে লালবাজার । প্রতিবেশীদের এক্ষেত্রে কাজ হবে প্রয়োজনীয় খবরটুকু পুলিশকে জানানো । প্রবীণদের সুরক্ষার বিষয়টি দেখভাল করবেন কলকাতা পুলিশের অ্যাসিস্ট্যান্ট পদমর্যাদার অফিসাররা । এমনই ঠিক হয়েছে গতকালের বৈঠকে ।