কলকাতা, ২৭ ফেব্রুয়ারি : তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় দায়ের হচ্ছে অভিযোগ। কিন্তু তার সঠিক তদন্ত করতে দক্ষ নয় রাজ্য পুলিশ। আর তাই রাজ্য পুলিশের শীর্ষ আধিকারিককে একাধিক নির্দেশ দিল বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ।
নিজের স্ত্রীর আপত্তিকর ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে বিপদে পড়েছিলেন নদিয়া জেলার বাসিন্দা। তাঁর বিরুদ্ধে কৃষ্ণনগর মহিলা থানায় গত বছর একাধিক ধারায় অভিযোগ দায়ের করেন স্ত্রী। পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তি আইনের ৬৬ E ও ৬৭ A ধারতেও অভিযোগ দায়ের হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান তিনি। ১৮ ফেব্রুয়ারি ১০ হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও মনোজিৎ মণ্ডলের ডিভিশন বেঞ্চ তা মঞ্জুর করে।
এই মামলাকে কেন্দ্র করেই ডিভিশন বেঞ্চ জানায়, বর্তমান সময়ে সমাজে সাইবার ক্রাইমের পরিমাণ বেড়েছে। ফলে পুলিশের কাছেও এই সংক্রান্ত অভিযোগ প্রচুর পরিমাণে দায়ের হচ্ছে। তবে, এই ধরনের ক্রাইম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন ডিভাইসে, ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে রেকর্ড করে করা হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবে পুলিশকেও তদন্তের স্বার্থে বিভিন্ন ইলেকট্রনিক রেকর্ড যেমন, CCTV ফুটেজ, ইলেকট্রনিক মেসেজ, হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট থেকে প্রমাণ বা নথি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। তাই পুলিশের এই সমস্ত তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও তার বিশ্লেষণের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণের প্রয়োজন। কারণ এই ডিভাইসগুলি সামলানোর দক্ষতা না থাকলে যেকোনও সময় সংগ্রহীত তথ্য বা নথিপত্র বিকৃত হতে পারে। তাই এই ধরনের যে সমস্ত অপরাধের ক্ষেত্রে ইলেকট্রনিক রেকর্ড থাকবে, তার নিরপেক্ষ ও সঠিক তদন্তের জন্য কিছু নির্দেশ দেওয়া হল।
যে নির্দেশগুলি দেওয়া হয়েছে-
- DGP-কে এই সমস্ত ক্ষেত্রে তথ্য গ্রহণ, সংরক্ষণ ও তার বিশ্লেষণের জন্য রাজ্যের পুলিশের যথাযথ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। প্রত্যেকটি থানায় কমপক্ষে একজন ইন্সপেক্টর পর্যায়ের অফিসারকে পুলিশ ট্রেনিং কলেজ থেকে এই প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কলেজ, প্রশিক্ষণ শেষে ওই অফিসারকে দক্ষতার একটি সার্টিফিকেট দেবে
- তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিভিন্ন ধারায় যে সমস্ত অভিযোগ আসবে তার তদন্ত এই ধরনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অফিসারদের দিয়েই করাতে হবে
- প্রত্যেকটা জেলায় একটি করে সাইবার সেল রাখতে হবে। এবং সেখানে এই ধরনের প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অফিসাররাই থাকবে। কোনও অভিযোগ দায়ের হলে তারাই যাতে পুলিশকে সঠিক তদন্তের কাজে সহায়তা করতে পারে
- DGP-কে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করে এই সংক্রান্ত বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা আগামী ১৩ মার্চ অর্থাৎ পরবর্তী শুনানির দিন রিপোর্ট ফাইল করে জানাতে হবে
- সত্যতা যাচাই করার জন্য এই সংক্রান্ত প্রমাণপত্রের ফরেনসিক বিশ্লেষণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ফলে এই কাজকে ত্বরান্বিত করার জন্য বিশেষ ফরেনসিক সেটআপ তৈরি করতে হবে
নির্দেশের একেবারে শেষে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নারী ও শিশুদের বিরুদ্ধে সংঘটিত সাইবার অপরাধ প্রতিরোধ প্রকল্পে প্রায় ৩.৯৪ কোটি টাকা রাজ্যকে দিয়েছে। অবিলম্বে সাইবার ফরেনসিক ল্যাব কাম ট্রেনিং সেন্টার গঠনের জন্য রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। পাশাপাশি এই সংক্রান্ত কাজ কতদূর সম্পন্ন হল, তার রিপোর্ট পরবর্তী শুনানির দিন পেশ করতে হবে হাইকোর্টে।