বর্ধমান, 7 নভেম্বর: রাজ্যে মেডিক্যাল দুর্নীতির পন্থা বদলে গিয়েছে ৷ বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজ-সহ স্বাস্থ্য দফতরের নিয়োগ বোর্ড কিংবা ওষুধ ও চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনা, সব ক্ষেত্রেই চলছে লাগাতার দুর্নীতি ৷ এমনটাই জানালেন পূর্ব বর্ধমানের ডেপুটি সিএমওএইচ তথা আরজি কর নিয়ে প্রতিবাদে সামনের সারিতে থাকা চিকিৎসক নেতা ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী ৷
প্রশাসন থেকে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সর্বোচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসক সংগঠনগুলির পক্ষ থেকে অভিযোগ জানানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি ৷ ফলে স্বাস্থ্য দফতরের বিভিন্ন বিভাগে নতুন পন্থায় দুর্নীতি শুরু হয়েছে বলে দাবি করলেন প্রবীণ চিকিৎসক । বহু চিকিৎসকদের মতে, 2021 সালের পরে বদলে গিয়েছে দুর্নীতির পন্থা ৷
ডাঃ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "2021 সাল থেকে এই দুর্নীতি একটা অন্য মাত্রায় চলে গিয়েছে ৷ কারণ এর আগে 8-10 বছর আগে যাঁরা দুর্নীতি করতেন, সেই দুর্নীতির একটা চরিত্র ছিল, চেনা ছকে বাঁধা ছিল ৷ আমরা দেখতাম কেউ একজন কুকুরের ডায়ালিসিস করবেন বলে কুকুরটিকে হাসপাতালে নিয়ে গেল ৷ আবার কোনও এক নেতা তার ছেলে পরীক্ষা দেবে বলে সিসিটিভির সুইচ অফ করে দিল ৷ এগুলোর একটা চেনা ছক ছিল ৷"
আরজি করের চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় সামনে এসেছে হুমকি দেওয়ার খবর ৷ থ্রেট কালচারে অভিযুক্ত সেই সব চিকিৎসকদের নাম উল্লেখ করে চিকিৎসক নেতা বলেন, "কিন্তু 2021 সালের পরে সন্দীপ ঘোষ, বীরুপাক্ষ, অভীক কিংবা সুশান্ত রায় ; এদের কাজে নামিয়ে দেওয়া হল ৷ রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার বিভিন্ন মাথায় তাদের বসিয়ে দেওয়া হল ৷ এদের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের মাথায়, রাজ্যের মেডিক্যাল কাউন্সিল, রাজ্যের হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ড, স্বাস্থ্য দফতর, যেখানে ওষুধ কিংবা চিকিৎসার সরঞ্জাম কেনাকাটা হয় সেই ওয়েস্ট বেঙ্গল মেডিক্যাল সার্ভিস কর্পোরেশন লিমিটেড, যেখানে বিভিন্ন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ হয় সেই ওয়েস্ট বেঙ্গল হেলথ ইউনিভার্সিটি - এই সব কিছুর মাথায় এই গোষ্ঠীর লোকেদের বসিয়ে দেওয়া হল ৷ ফলে তাঁরা দুর্নীতির নতুন নতুন পন্থা আবিষ্কার করতে শুরু করল ৷ তারা টর্চের আলো ফেলে দেখতে শুরু করলো কোথায় দুর্নীতি করবার সুযোগ আরও একটু রয়ে গেছে। যা আগের নেতারা করতে পারেননি।"
দুর্নীতির নতুন দিকগুলি সম্পর্কে চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, "তাদের নজর পড়ল লাশ কাটা ঘরে ৷ এদের নজর পড়ল মেডিক্যাল বর্জ্য, ওষুধপত্রের দিকে ৷ শুরু হল জাল ওষুধের কারবার, মৃতদেহ নিয়ে ব্যবসা, মেডিকেল বর্জ্য পদার্থ নিয়ে ব্যবসা ৷ নেতার ছেলে পরীক্ষা দেবে বলে সেদিন শুধু সিসিটিভি বন্ধ করা হল না, যাতে গণ টোকাটুকি করা যায়, সেই ব্যবস্থাও করা হল ৷ এমনকী পরীক্ষায় পাশ করার জন্য মেডিক্যাল ছাত্রদের তোলা দিয়ে পাশ করতে হবে ৷ এই সবকিছুর প্রতিবাদ জানিয়ে চিকিৎসক সংগঠন বারবার সরব হয়েছে ৷ প্রশাসন থেকে রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ মহলে বারংবার জানানো হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি ৷"