কলকাতা, 23 মে : শহরজুড়ে ইতিউতি ব্যাঙের ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকা জলসত্র বন্ধের নির্দেশ দিল কলকাতা পৌরনিগম (Kolkata Municipal Corporation has directed to close the Water Hut in City) ৷ কলকাতার প্রাণ কেন্দ্র ধর্মতলা মোড়ে রয়েছে ওয়াই চ্যানেলে জীর্ণ, শ্যাওলা পড়া একটি বহু পুরনো ঠান্ডা জলের মেশিন । জল এখন ঠান্ডা না হলেও বহু পথচলতি মানুষ সেখান থেকে জল খান ।
বহুদিন ধরে দেখভাল না হওয়ায় মেশিনের তলার অংশে নোংরা জমেছে, লোহার খাঁচায় মরচে পড়ে নষ্ট হচ্ছে । জলের গুণমান নিয়েও সংশয় থেকে যায় অনেক সময় । কারণ মেশিনের রক্ষণাবেক্ষণ হয় না বললেই চলে আর জল তার মধ্যেই আসছে । ফলে ভাল জলও দূষিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে । অন্যদিকে, উত্তর কলকাতার 10 নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ণেন্দু ক্রীড়াঙ্গনে একটি বেসরকারি সংস্থা এই জলসত্র তৈরি করলেও তারপর আর ঘুরে তাকায়নি । ফলে দীর্ঘ বছর ধরে পড়ে রয়েছে বন্ধ অবস্থায় । দক্ষিণ কলকাতার 84 নম্বর ওয়ার্ডে এমন ঠান্ডা জলের কল রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় পড়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ।
আরও পড়ুন : Social Sector of KMC : করোনা কমায় শুরু হচ্ছে প্রশিক্ষণ, এবার কাজের ব্যবস্থাও করবে কলকাতা পৌরনিগম
শুধু এই তিনটিই নয়, কলকাতা জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মতো বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে রাস্তার ধারে ফুটপাতে বা গলির মুখে এই ঠান্ডা জল খাওয়ার জায়গা অসংখ্য রয়েছে । যদিও একটিও কলকাতা পৌরনিগমের অনুমতি নিয়ে করা হয়নি বলে জানা গিয়েছে । আর অধিকাংশ যন্ত্রই রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় সেখান থেকে মানুষ জল পান করলে পেটের রোগ হওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে ৷ তার জেরেই এই ধরনের ওয়াটার হাট বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পৌরনিগম ।
সম্প্রতি 84 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পারমিতা চট্টোপাধ্যায় এক প্রস্তাবে জানান, তাঁর ওয়ার্ডে বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার উদ্যোগে তৈরি এমন 10টি ওয়াটার হাট রয়েছে । সেখান থেকে ঠান্ডা জল দেওয়ার প্রস্তাব আসায় তিনি এগুলি তৈরিতে রাজি হন । এখন দেখা যাচ্ছে পুরনো হয়ে যাওয়ায় এবং দীর্ঘদিন ধরে রক্ষণাবেক্ষণ না করায় সেগুলির অবস্থা খুব সঙ্গীণ । 10টির মধ্যে মাত্র দুটি ঠিক চলছে । যারা তৈরি করেছিল তাঁরা নিজেদের বিজ্ঞাপন দিলেও আর ফিরে দেখেনি রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য । সেগুলি ঠিক করা যায় কি না তা জানতে চান ৷
তবে মেয়র পারিষদ সদস্য দেবাশিস কুমার বলেন, "কলকাতা পৌরনিগমের অনুমতি নিয়ে এই মেশিন লাগানো হয়নি । নিজেদের মতো করা হয়েছিল । এগুলো খুব খারাপ অবস্থায় রয়েছে এখন । পরীক্ষা করা হোক প্রতি মেশিন থেকে পড়া জলের গুণগত মান । মূলত কোম্পানিগুলোর লক্ষ্য ছিল বিনামূল্যে বিজ্ঞাপন দেওয়া । মেয়র সিদ্ধান্ত নিক এগুলো থাকবে কি না ।
আরও পড়ুন : KMC on Plastic Use in Market : সাতদিনের মধ্যে দোকান থেকে খুলতে হবে প্লাস্টিক, হকারদের নির্দেশ পৌরনিগমের
গোটা বিষয় নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিম বলেন, "কলকাতার নাগরিকদের স্বাস্থ্যের ব্যাপার জড়িয়ে এই ঘটনায় । দিনের পর দিন ফিল্টার পরিবর্তন না হলে সেটার জল পান করা মানে বিষ জল পান করা । নতুন করে আর এই কাজ এভাবে করা যাবে না । পাঁচ বছরের জন্য চুক্তি করতে হবে কলকাতা পৌরনিগমের সঙ্গে । ট্যাংক পরিষ্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ যে কোম্পানি এই ওয়াটার হাট করবে লিখিতভাবে তাদেরকেই দায়িত্ব নিতে হবে । না হলে পৌরনিগম অনুমতি দেবে না ।"
এছাড়াও তিনি উল্লেখ বলেন, "সম্প্রতি 13 নম্বর ওয়ার্ডে এমন হয় খোঁজ পাই । আমি জানাই চুক্তি করলে তবেই হবে । এর বাইরে যেগুলো হয়ে গিয়েছে সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হবে । এখান থেকে জল খাওয়া স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর । যারা রক্ষণাবেক্ষণ করছে না সেই বিজ্ঞাপন সরিয়ে দেব । যে করবে তার বিজ্ঞাপন হবে চুক্তি করে । জল সরবরাহ বিভাগকে বলেছি পরিত্যক্ত জলসত্রগুলোর লাইন বন্ধ করে দেওয়ার জন্য ।"
আরও পড়ুন : KMC Building Rule : বিপজ্জনক বাড়ি সংস্কার আইন ফের সংশোধনের পথে কলকাতা পৌরনিগম