কলকাতা, 2 নভেম্বর : অবশেষে কড়েয়া খুনের কিনারা করল পুলিশ । গ্রেপ্তার করা হয়েছে খুনিকে । ধৃতের নাম মহম্মদ ইসমাইল । কড়েয়া এলাকারই বাসিন্দা সে । গত রাতে তাকে কড়েয়া থানার পুলিশ আটক করে । আজ জিজ্ঞাসাবাদে রফিককে খুনের কথা স্বীকার করে ইসমাইল । সে জানায়, তাঁর স্ত্রীকে কুনজরে দেখত আবদুল রফিক । তাই ভাইফোঁটার দিন সুযোগ পেয়ে চপার দিয়ে রফিককে খুন করে সে ।
ভাইফোঁটার দিন সন্ধে 7 টা 15 মিনিট নাগাদ জামাকাপড় নিতে এসে ফ্ল্যাটের দরজা দিয়ে টাটকা রক্ত বেরিয়ে আসতে দেখেন স্থানীয় লন্ড্রিওয়ালা । খবর দেন আশপাশের ফ্ল্যাটের লোকেদের । সেই সময় রফিকের বিবি বাড়িতে ছিলেন না । একদিন আগে 28 অক্টোবর জাহেদা সেলিম ওরফে নিলু বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন । কড়েয়া এলাকাতেই তাঁর বাপের বাড়ি । দ্রুত তাঁকে ফোন করা হয় । তিনি এসে দেখেন রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন রফিক ।
পুলিশি তদন্ত অনুযায়ী, বিবির সঙ্গে রফিকের শেষবার কথা হয় সন্ধে 6 টা নাগাদ । তাই সন্ধে 6 টা থেকে 7 টা 15 মিনিটের মধ্যে এই খুনের ঘটনা ঘটেছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুমান । মূলত, চপার দিয়ে আঘাত করেই এই খুন করা হয়েছে । তবে, এক সময় বক্সার হওয়ার কারণে খুনের সময় তিনি আততায়ীকে যথেষ্ট বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন । দেহে সেই চিহ্ন পাওয়া গেছে ।
একটা সময় যথেষ্ট অবস্থাপন্ন ছিল রফিকের পরিবার । তিলজলা রোডে তাদের পারিবারিক 60 কাঠা জমি রয়েছে । সেই জমিতে এখন প্রোমোটিংয়ের কাজ । ওই জমিতে শরিক রয়েছেন 40 জন । রফিকরা চার ভাই । তাঁর বাকি তিন ভাই বাংলাদেশের নাগরিক । তাঁরা সেখানেই থাকে । প্রোমোটারের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী ওই 60 কাঠা জমিতে নির্মীয়মান বিল্ডিংয়ে একটি করে ফ্ল্যাট ও নগদ টাকা পেয়েছেন 40 শরিক । ইতিমধ্যেই সেখানে চারটি টাওয়ার তৈরি হয়েছে । বেশিরভাগ শরিক নতুন ফ্ল্যাটে চলে গেছেন । এখনও পর্যন্ত তৈরি হয়নি পাঁচ নম্বর টাওয়ারটি । সেটি তৈরির কাজ চলছে । তাই যে ফ্ল্যাটে রফিক খুন হয়েছেন সেখানে তাদের থাকার ব্যবস্থা করেছিল প্রোমোটার ।
64 বছরের রফিক পেশায় অটোচালক । বছর তিনেক আগে তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী মারা যায় । কয়েক মাসের মধ্যেই তিনি নীলুকে বিয়ে করেন । তখন নীলুর বয়স 37 । দরিদ্র পরিবারের নীলুর সঙ্গে অসমবয়সী রফিকের বিয়ে দিয়েছিল তাঁর পরিবারের লোকজনই ।
খুন হওয়া রফিকের ফ্ল্যাটে একটি ড্রয়ার খোলা ছিল । যার তালা ভাঙা ছিল । সেই ড্রয়ারে ছিল প্রায় 7 লাখ টাকা । সেটি একটি ট্রান্সপারেন্ট কনটেইনারে রাখা ছিল । ছিল বেশ কিছু সোনার গয়নাও । তার কিছুই খোয়া যায়নি । ড্রয়ারের পাশে পড়েছিল একটি স্ক্রু ড্রাইভার । প্রাথমিকভাবে দেখলে মনে হবে ওই স্ক্রু ড্রাইভার দিয়েই ভাঙা হয়েছে ড্রয়ারের লক । কিন্তু পুলিশ সূত্রে খবর, ফরেনসিকের প্রাথমিক রিপোর্ট বলছে, ওই স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে লক ভাঙা হয়নি । অর্থাৎ বিভ্রান্ত করতেই এই পথ নেওয়া হয় বলে তদন্তকারীদের অনুমান ।