কলকাতা, 15 ফেব্রুয়ারি: কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বঅধীন বিজেপির সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ইতিহাস বিকৃতির (Distortion of History) অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে । ইতিমধ্যে একাধিক ঐতিহাসিক জায়গার নাম বদল করা হয়েছে । মোদি সরকারের অন্যতম মন্ত্রী অমিত শাহ নতুন করে ইতিহাস রচনার কথাও বলেছিলেন । দেশের এই সার্বিক ইতিহাস বদলের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরার চেষ্টা উর্দু বইমেলায় । আয়োজকদের দাবি, নতুন প্রজন্মের কাছে সঠিক ইতিহাস তুলে ধরে আরও বেশি করে দেশপ্রেম ও দেশের জন্য নিজেদের প্রস্তুত করার জন্য নাটকের মাধ্যমে তুলে ধরা হল 'কাকোরি কাণ্ড' (Kakori Case of English Era)! যে নাটকে বিপ্লবী আশফাক উল্লাহ খানের জীবন তুলে ধরা হয়েছে ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের উদ্যোগে 12 ফেব্রুয়ারি থেকে উর্দু অ্যাকেডেমির প্রাঙ্গণে উর্দু বইমেলা (Urdu Book Fair) শুরু হয়েছে । 18 ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলবে এই মেলা । প্রতিদিনই নানা রকম সংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এই বইমেলাতে রাখা হয়েছে । গত 13 ফেব্রুয়ারি স্কুল-কলেজ পড়ুয়াদের জন্য নাটকের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয় । সেই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জাকারিয়া স্ট্রিটের মহম্মদ জান হাইস্কুলের পড়ুয়ারা । 'আশফাক উল্লাহ খান' শীর্ষক নাটক পরিবেশন করা হয় । মূলত কাকোরি কাণ্ডকেই তুলে ধরা হয় নাটকে ।
নাটকের পরিচালক তথা ওই স্কুলেরই শিক্ষক মুস্তাক আহমেদ বলেন, "মূলত নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের কাছে দেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে এবং দেশাত্মবোধ জাগাতে নাটকে এ ধরনের বিষয় বেছে নেওয়া হয়েছে ।" এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও বলেন, "নানাভাবে দেশের ঐতিহাসিক স্থানের নাম বদল করা হচ্ছে ৷ বদলে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে সঠিক ইতিহাসকে । গবেষণামূলক যে ইতিহাস আমাদের পাঠ্যবই থেকে শুরু করে দেশের মানুষ জেনে থাকেন, তা বদলের অপচেষ্টা চলছে । তারই বিরুদ্ধে আমাদের এই প্রয়াস ।"
এই নাটক নির্মাণের পিছনে সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন এসএম রাশিদ । তিনি বলেন, "ঐতিহাসিক জায়গার নাম বদল করে ইতিহাস ভোলানো যায় না । তাই নামবদল থেকে শুরু করে ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা যে কেউ করতেই পারেন । কিন্তু তারপরেও সঠিক ইতিহাস থেকে যাবে । সেই সঠিক ইতিহাস জানার জন্য ইতিহাসপ্রেমীরা সব রকম ভাবে চেষ্টা করবেন ।"
কাকোরি কাণ্ড কী ?
আশফাক উল্লাহ খানের জীবনে মহাত্মা গান্ধির প্রভাব প্রথম থেকেই ছিল ৷ গান্ধিজি যখন 'অসহযোগ আন্দোলন' প্রত্যাহার করে নেন, তখন তাঁর মনে গভীর আঘাত লাগে । এর পরে রামপ্রসাদ বিসমিল এবং চন্দ্রশেখর আজাদের নেতৃত্বে 1925 সালের 8 অগাস্ট বিপ্লবীদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয় । যেখানে তার পরের দিন অর্থাৎ 9 অগাস্ট কাকোরি স্টেশনে আসা সাহারানপুর-লখনউ যাত্রীবাহী ট্রেনটিতে ডাকাতির পরিকল্পনা করা হয়েছিল । যার মধ্যে ছিল সরকারি কোষাগার ।
বিপ্লবীরা সেই টাকা লুট করতে চেয়েছিলেন । আসলে ব্রিটিশরা সেই টাকা ভারতীয়দের কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছে বলেই তা ছিনিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করা হয় ৷ তাই 1925 সালের 9 অগাস্ট আশফাক উল্লাহ খান, রামপ্রসাদ বিসমিল, চন্দ্রশেখর আজাদ, রাজেন্দ্রনাথ লাহিড়ী, ঠাকুর রোশন সিং, শচীন্দ্র বকসি, কেশব চক্রবর্তী, বনোয়ারী লাল, মুকুন্দ লাল এবং মন্মথ লাল পরিচয় গোপন করে 'কাকোরি'-তে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেন । এই ঘটনা কাকোরি ঘটনা নামে পরিচিত ।
আরও পড়ুন: ঢাকার পর প্রিয় শহর কলকাতা, বইমেলায় খোলামেলা আড্ডায় বাংলাদেশের সাহিত্যিক সাদাত হোসাইন
এই ঘটনার সময় সমস্ত বিপ্লবী তাঁদের নাম পরিবর্তন করেছিলেন । আশফাক উল্লাহ খান নিজের নাম রাখেন 'কুমারজি'। ব্রিটিশ সরকার এই ঘটনার কথা জানার সঙ্গে সঙ্গে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে । এরপর অনেক নিরপরাধকে ধরে জেলে নিক্ষেপ করা হয় ।
এই ঘটনার পর ব্রিটিশ সরকার একে একে সব বিপ্লবীকে ধরে ফেলে । কিন্তু চন্দ্রশেখর আজাদ ও আশফাক উল্লাহ খান পুলিশের হাতে আসেনি ।
1925 সালে 26 সেপ্টেম্বর হিন্দুস্তান রিপাবলিকান অ্যাসোসিয়েশনের মোট 40 জন বিপ্লবীকে গ্রেফতার করা হয়েছিল । তাঁদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, সশস্ত্র যুদ্ধ, সরকারি কোষাগার লুটপাট ও যাত্রী হত্যার অভিযোগে মামলা করা হয় । পরে রাজেন্দ্র নাথ লাহিড়ী, পণ্ডিত রাম প্রসাদ বিসমিল, আশফাক উল্লাহ খান এবং ঠাকুর রোশন সিংকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় । অন্য 16 জন বিপ্লবীকে সর্বনিম্ন চার বছর থেকে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল ।
আশফাক উল্লাহ খান ছিলেন ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের একজন বীর যোদ্ধা । যিনি রামপ্রসাদ বিসমিলের সঙ্গে শহীদ হয়েছিলেন । তাঁদের উভয়কে একই দিনে আলাদা জেলে ফাঁসি দেওয়া হয় । আসফাকউল্লা খান ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রথম ভারতীয় মুসলিম, যাঁকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ফাঁসি দেওয়া হয় ।