কলকাতা, 4 জুলাই : বাড়ছে না বেতন কাঠামো । তাই এবার অভিভাবকদের পাশে পেতে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভরতি হতে আসা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে নিজেদের সমস্যার বয়ান তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সংগঠন (JUTA) । পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী, আচার্য ও শিক্ষামন্ত্রীকেও নিজেদের দাবি জানিয়ে চিঠি লিখবেন অধ্যাপকরা । এরপর জুলাই মাসের মধ্যে কোনও সদুত্তর না পেলে শুধুমাত্র ক্লাস ছাড়া বাকি সব কাজ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানাচ্ছেন JUTA-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতীম রায় । এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিধিবদ্ধ কমিটিতে নির্বাচিত প্রতিনিধির দাবিও তোলা হচ্ছে ।
2017 সালের নভেম্বর মাসে কেন্দ্রীয় সরকার সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ প্রকাশ করেছিল। ইতিমধ্যেই তা অধিকাংশ রাজ্যের কেন্দ্রীয় সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চালু করা হয়েছে । কিন্তু, প্রায় 2 বছর পেরিয়ে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে চালু হয়নি। দ্রুত সপ্তম পে কমিশন চালু করার দাবিতে এর আগে বহুবার আন্দোলন করেছে JUTA । কিন্তু, কোনও লাভ হয়নি। সংগঠনের বৈঠকে আগামীদিনে বেতন কাঠামো বৃদ্ধির দাবি নিয়ে কী কী কর্মসূচি নেওয়া হবে তার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এবিষয়ে JUTA-র সাধারণ সম্পাদক পার্থপ্রতিম রায় বলেন, "আমরা মুখ্যমন্ত্রী, আচার্য এবং শিক্ষা মন্ত্রী কে আবার চিঠি লিখছি। দ্বিতীয়ত, ১৮ তারিখে একটা প্রোগ্রাম করব। তারপরে যদি দেখি জুলাই মাসের মধ্যে কিছু হচ্ছে না তাহলে আমরা প্রথমে শুধু ক্লাস নেওয়া ছাড়া সব কাজ করা বন্ধ করে দেব। তারপরও কোনও ব্যবস্থা না হলে আমরা কর্মবিরতি ও অনশনের পথে হাঁটব। আর সমাজকে পাশে পাওয়ার জন্য এবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যে পড়ুয়ারা ভরতি হতে আসবেন তাঁদের অভিভাবকদের কাছে আমাদের সমস্যা তুলে ধরব । বলব, আমরাই সমস্ত কাজ করছি অথচ, আমাদের যা প্রাপ্য তা পাচ্ছি না। আমরা আমাদের বেতন পাচ্ছি না।"
বৈঠকে আন্দোলনের আগামী পদক্ষেপ ঠিক করেছে JUTA ।
- প্রথমত, তাঁরা অবিলম্বে নতুন বেতন কাঠামো চালুর ও বিশ্ববিদ্যালয় অ্যাক্টের প্রভিশন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিধিবদ্ধ কমিটিতে নির্বাচিত প্রতিনিধির দাবিতে মুখ্যমন্ত্রী, আচার্য ও শিক্ষামন্ত্রীকে চিঠি দেবেন ।
- দ্বিতীয়ত, 18 জুলাই এই দাবিগুলি নিয়ে একটি মিছিল ও অবস্থান করবেন ।
- তৃতীয়ত, যদি জুলাই মাসের মধ্যে সরকার নতুন বেতন কাঠামো চালু না করে তাহলে তাঁরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের দিকে পা বাড়াবেন। প্রথমে তাঁরা ক্লাস নেওয়া ছাড়া অন্য যাবতীয় কাজ বন্ধ করে দেবেন। তারপরে অনির্দিষ্টকালের জন্য সম্পূর্ণ কর্মবিরতি ও অনশনের কথা ভাবনাচিন্তা করবেন ।
এছাড়া, এবার ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ভরতি হতে আসা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে নিজেদের সমস্যার কথা তুলে ধরবেন। অভিভাবকদের বলবেন, তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সব কাজ করছেন । কিন্তু, সঠিক বেতন পাচ্ছেন না । কমিটিতে নির্বাচিত প্রতিনিধি না রেখে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার নষ্ট করা হচ্ছে । এবিষয়ে, সায়েন্স ও আর্টস ফ্যাকাল্টিতে ভরতি হতে আসা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে গিয়েও বলা হবে JUTA-র তরফ থেকে।
তবে, সমাজকে পাশে পেতে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের অভিভাবকদের কাছে গিয়ে নিজেদের সমস্যার কথা বলা কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে সংশ্লিষ্ট মহলে। একাংশের মতে, আন্দোলন হতেই পারে। তবে, নতুন পড়ুয়াদের বাবা-মায়ের কাছে গিয়ে হঠাৎ করে আমরা বেতন পাচ্ছি না বলাটা কতটা যুক্তিযুক্ত ? যদিও, বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চাননি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ । যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য প্রদীপ কুমার ঘোষ বলেন, "সংগঠনে কে কী করছেন তা নিয়ে আমার বলার তো কোনও জায়গা নেই । এখানকার মাস্টারমশাইরা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই সিদ্ধান্তের উপর আমার বলার কোনও জায়গা নেই।"