কলকাতা, 19 মার্চ : এ রাজ্যেও কোভিড-19-এর সংক্রমণ ধীরে ধীরে আবার বাড়তে দেখা যাচ্ছে । এদিকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন-ও চলছে । আর এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কোভিড-19-এর বিভিন্ন ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে দেখা যাচ্ছে, ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বেড়ে চলেছে ভিড় অথচ, সেভাবে মানা হচ্ছে না ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্স-এর বিষয়টি । এর ফলে কোভিড-19-এর সংক্রমণ এ রাজ্যেও আরও বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা ।
কিছু দিন আগে পর্যন্ত এ রাজ্যে কোভিড-19-এর দৈনিক সংক্রমণ 200-র নিচে নেমে গিয়েছিল । তবে দৈনিক এই সংক্রমণ ফের বেড়ে চলেছে । স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী 18 মার্চ এ রাজ্যে 323 জন কোভিড-19-এ আক্রান্ত হয়েছেন । 17 মার্চ এই সংখ্যা ছিল 303 । এর পাশাপাশি কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন-ও চলছে । স্বাস্থ্য দপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী 18 মার্চ পর্যন্ত এ রাজ্যের 29 লাখ 53 হাজার জনকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হয়েছে । কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সেন্টারে ভিড়-ও বেড়ে চলেছে । স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সেন্টারে বয়স্কদের ভিড় বেশ উৎসাহজনক ।
এদিকে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য বিভিন্ন সেন্টারে ভিড় বেড়ে চললেও, কোভিড-19-এর সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্স-এর বিষয়টি সেভাবে মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না । যার জেরে কোভিড-19-এর সংক্রমণ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চিকিৎসকরা । এ রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসকদের পাঁচটি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ, জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর তরফে চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন, "যে সব হাসপাতালে কোভিড-19-এর ভ্যাকসিনেশন চলছে, সেখানে এখন সিনিয়র সিটিজেনদের-ও ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে । প্রচণ্ড ভিড় হচ্ছে ভ্যাকসিন নেওয়ার এই সেন্টারগুলিতে । আমাদের চিন্তা, এই ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলি যেন কোভিড-19-এর সংক্রমণের হট স্পট হয়ে না দাঁড়ায় ।"
তিনি বলেন,"ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলিতে ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্স মানা হচ্ছে কি না, এটাই আমাদের চিন্তার । এই সেন্টারগুলিতে যেভাবে ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য ভিড় করে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে, এটা খুব একটা স্বস্তিকর বিষয় নয় । মনে রাখতে হবে, এখানে সিনিয়র সিটিজেনরা যাচ্ছেন ।"
এ রাজ্যের সরকারি চিকিৎসকদের একটি সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিস ডক্টরস, ওয়েস্ট বেঙ্গল-এর সাধারণ সম্পাদক, চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন, "ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলিতে ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্স মেনে চলা হচ্ছে না, আমরা যেটা জানি, সরকারি জায়গাগুলিতে ভালো ব্যবস্থাপনা করা হয়েছে । বেসরকারি সেন্টারগুলিতে কোথায় কতটা কী হচ্ছে, এটা আমরা বলতে পারব না । তবে এটাও ঠিক, ভ্যাকসিন দেওয়ার সময় ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্স মেইনটেইন অবশ্যই করা উচিত । ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য যাতে ভিড় না জমে যায়, তার জন্য সেভাবে অ্যাপোয়েন্টমেন্ট দিতে হবে । এটা মেনে চলা উচিত ।"
তবে শুধুমাত্র ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলিতে নয় । অন্য যে কোনও স্থানেও ভিড় লেগে রয়েছে । এ কথা জানিয়ে স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন-এর প্রাক্তন অধিকর্তা চিকিৎসক অমিতাভ নন্দী বলেন, "নির্বাচনের সভা থেকে শুরু করে ভ্যাকসিনের লাইনম । রেশনের লাইন, শপিংমল, সব জায়গাতেই তো ভিড় হচ্ছে । কোভিড-19-এর সংক্রমণ যখন আবার ধীরে ধীরে বাড়ছে, তখন আবার সাবধান হতে হবে ।" ভ্যাকসিনেশন সেন্টারগুলিতে যাঁরা ভ্যাকসিন নিতে আসছেন, তাঁদের মধ্যে ফিজিক্যাল ডিসট্যান্স-এর বিষয়টি সেভাবে মেনে চলতে দেখা যাচ্ছে না । চিকিৎসকদের বিভিন্ন অংশের আশঙ্কা, ফিজ়িক্যাল ডিসট্যান্স মেনে না চলার জেরে ভ্যাকসিন নিতে এসে ভ্যাকসিনেশনের সেন্টারগুলিই না কোভিড-19-এর সংক্রমণের হট স্পট হয়ে ওঠে । এই বিষয়ে চিকিৎসক অমিতাভ নন্দীও বলেন, "নিশ্চয়ই এমন হতে পারে ।"
এ দিকে, কোভিড-19-এর সংক্রমণ ফের এ রাজ্যেও বেড়ে চলেছে । চিকিৎসক কৌশিক লাহিড়ী বলেন,"এখন লকডাউন চলছে না । এই কারণে কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা এখন খুব মুশকিল । এই ধরনের অতিমারী রুখে দেওয়ার জন্য কেস ডিটেকশন, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং, চিকিৎসা এবং ভ্যাকসিনেশন ছাড়া তো আমাদের উপায় নেই । প্রতিদিন একটু একটু করে কেস বাড়ছে । ভোটের সময় এটা হঠাৎ করে বেড়ে গেলে মুশকিল হয়ে যাবে ।"
আরও পড়ুন : ফের 40 হাজারের কাছাকাছি দৈনিক সংক্রমণ, জোরালো হচ্ছে ভ্যাকসিনের দাবি
চিকিৎসক মানস গুমটা বলেন,"কোভিড-19 প্রতিরোধের জন্য ন্যূনতম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়টি বেশি গুরুত্বপূর্ণ । কোভিড-19-এর সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের জন্য এখনও পর্যন্ত যে সব উপায় রয়েছে, যেমন, সংক্রমণ ধরা পড়লে আইসোলেট করা, কন্ট্যাক্ট ট্রেসিং করা, চিকিৎসা করা, এ সব থেকে বেরিয়ে এলে চলবে না । এই বিষয়টি একই রকম ভাবে করে যেতে হবে ।"