কলকাতা, 29 অগস্ট: পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সর্বদল বৈঠকে একটি নির্দিষ্ট দিনকে বেছে নেওয়া নিয়ে সর্বসম্মতিতে পৌঁছনো গেল না । তবে মঙ্গলবার এই বৈঠক থেকে সর্বসম্মতিক্রমে 20 জুনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে গ্রহণের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করা হয়েছে । বরং কেন্দ্র ও রাজ্যপালের ওই উদ্যোগের পিছনে রাজনৈতিক ইন্ধন আছে বলে মনে করেছে মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘরে উপস্থিত সমস্ত রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্টরা।
এদিনের বৈঠকের পর যদি পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় সেক্ষেত্রে সবথেকে বেশি সমর্থন পাওয়া গিয়েছে পয়লা বৈশাখের পক্ষেই । 12 ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদের দিন, 19 অগস্ট নেতাজি এবং রবীন্দ্রনাথ যে দিনটিকে মহামিলন দিবস হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এই দিনটিও আলোচনায় ওঠে আসে । আলোচনায় উঠে এসেছে 23 জানুয়ারি, অর্থাৎ নেতাজির জন্মদিনও ৷ এছাড়া সিপিআইএমএল দলের তরফ থেকে 1 নভেম্বর দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব দেওয়া হয় । এদিনের সর্বদল বৈঠক থেকে মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার কোনও নির্দিষ্ট দিনকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসাবে পালনের বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয়নি । এক্ষেত্রে সভায় উপস্থিত সকলেই খোলা মনে তাদের মতামত জানাতে পারেন । কারও আপত্তি থাকলে সে মতামত আসতে পারে । ফলের সকলেই এদিন খোলা মনে তাঁদেরব মত দেন ৷
এদিনের বৈঠকে অনুপস্থিত ছিল সিপিএম, কংগ্রেস, বিজেপির মত প্রথম সারির রাজনৈতিক দলগুলি । তবে এদিনের বৈঠকে যোগ দেয় একদা তৃণমূল সরকারের জোটসঙ্গী এসইউসিআই এবং সিপিআইএমএল । এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুরা ৷ ছিলেন বিভিন্ন ভাষা সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রতিনিধিরা । ছিলেন শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক ও বুদ্ধিজীবীদের একাংশ । এদিনের বৈঠকে যোগ ইতিহাসবিদ সুগত বসু, নেতাজির পরিবারের সদস্য চন্দ্র বসু, ভাষাবিদ নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুরী, কবি সুবোধ সরকার, চিত্রশিল্পী সুভাপ্রসন্নের মতো বিশিষ্টরা ৷ ছিলেন বিভিন্ন বণিক সভার সদস্যরাও ।
আরও পড়ুন: পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত, 4 সেপ্টেম্বর প্রস্তাব আসছে বিধানসভায়
এদিন এই বৈঠকের শুরুতেই সিপিএম এবং কংগ্রেসের মতো ইন্ডিয়া জোটে থাকা দলগুলির অনুপস্থিতি নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করতে দেখা যায় রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । তিনি বলেন, "আমি ইন্ডিয়া জোটে আছি এবং সব ব্যাপারে যাই । আমি কিন্তু কারও বিরুদ্ধে একটা কথাও বলি না । কিন্তু আজ কংগ্রেস ও সিপিএমের বৈঠকে যোগ না-দেওয়াটা অত্যন্ত দুঃখজনক ।"
পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে তড়িঘড়ি আলোচনার প্রাসঙ্গিকতা বোঝাতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, "20 জুন নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক থেকে নির্দেশিকা পর্যন্ত জারি করেছে । আমাদের জানায়নি । এখন বাংলার ব্যাপার বাংলা জানবে না ! তড়িঘড়ি, এই জন্যই তো করতে হয়েছে ।" তিনি আরও বলেন, "সময়ে যদি আপনি প্রতিবাদ না-করেন, তাহলে কিন্তু এই বেআইনি জিনিসটাই আইনত হয়ে যাব । এটাই স্থায়ী হয়ে যাবে । 20 জুন নাকি বাংলার প্রতিষ্ঠাদিবস ! আমি তো জীবনে শুনিনি । আপনারা কেউ শুনে থাকলে বলবেন । আমরা চাইছি, এই দিনটা হবে না । আমরা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে প্রতিবাদপত্র লিখেছি ।"
তবে এদিন যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে কোনও একটি নির্দিষ্ট তারিখ নিয়ে সর্বসম্মতিতে পৌঁছনো যায়নি তাই বৈঠকে উপস্থিত সমস্ত প্রতিনিধিদের আগামী 5 সেপ্টেম্বরের মধ্যে তাঁদের মতামত জানাতে বলা হয়েছে । সকলের মতামত বিবেচনা করে আগামী 7 সেপ্টেম্বর রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব নিয়ে আসবে রাজ্য সরকার । যা রাজ্য বিধানসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে পাশ করা হবে । এদিন এমনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে ।