কলকাতা, ২৪ ফেব্রুয়ারি : প্রিন্সিপাল নিয়োগ করতে চাইছে রাজ্য সরকার। অথচ পর্যাপ্ত আবেদনকারী পাওয়া যাচ্ছে না। আজ সল্টলেকের বিদ্যুৎ ভবনে নিখিল বঙ্গ সরকারি কলেজ শিক্ষক সমিতির ৩৫তম অধিবেশনে এসে একথা জানালেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। এই অধিবেশনে সমিতির তরফ থেকে একাধিক দাবি পেশ করা হয়। যার মধ্যে একটি দাবি ছিল কলেজগুলিতে প্রিন্সিপাল নিয়োগ করতে হবে। সেই দাবির পরিপ্রেক্ষিতেই একথা জানান শিক্ষামন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি জানান সরকার ও সরকার পোষিত কলেজগুলিতে ৩ হাজার শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে।
এ বিষয়ে পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সরকারি কলেজে এবং সরকার পোষিত কলেজে নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই আমরা ছয় হাজার অধ্যাপক-অধ্যাপিকা নিয়েছি। পাইপ লাইনে ৩ হাজার আছে। যার ইন্টারভিউ হচ্ছে। প্রিন্সিপাল তো আমরা চেয়েছি। কিন্তু আবেদনকারী কোথায়? আবেদনকারীই তো নেই। তখন বুঝলাম দুরকম অসুবিধা। এক, যারা পুরোনো তাঁরা UGC নিয়মে আসতে পারছেন না। আর যাঁরা UGC-র নিয়মে পড়েন তাঁরা সেই অবস্থায় আসেননি যাতে প্রিন্সিপাল হওয়া যায়। তাই আমরা ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগ করছি। TIC না রেখে ভাইস প্রিন্সিপাল নিয়োগ করার চেষ্টা করছি। আর TIC-দের যদি যোগ্যতা থাকে তাহলে তাঁরা প্রিন্সিপাল হবেন। হচ্ছে কোথায়? আমি তো চাইছি।" শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, "কোয়ালিটি এডুকেশন দিতে হবে। শুধু কলেজে এলাম আর বাড়ি চলে গেলাম সেটা চলবে না। সে ছাত্র, শিক্ষক, অশিক্ষক সবাইকেই বলব। ঐক্যবদ্ধভাবে সমস্যার সমাধান করতে হবে।"
আজকের অধিবেশনে সমিতির তরফে শিক্ষামন্ত্রীর সামনে অনেকগুলি দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলি হল, UGC অনুমোদিত সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ মেনে শিক্ষকদের বেতন নির্ধারণ, ইচ্ছুক অধ্যাপকদের স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণের সুযোগ, সরকারি কলেজের শূন্য প্রফেসর পদগুলি অবিলম্বে পূর্ণ করা ও নতুন প্রফেসর পদ তৈরি, সমস্ত সরকারি কলেজে অবিলম্বে প্রিন্সিপাল নিয়োগ, নতুন কলেজগুলিকে UGC-র অনুমোদন পাওয়ার ব্যবস্থা করা হোক, CBCS অনুসারে সরকারি কলেজগুলিতে পরিকাঠামো গড়ে তোলার দাবিসহ মোট ২৩ দফা দাবি তুলে ধরেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড: সুশান্ত রায় কর্মকার।
তাঁদের দাবিগুলির প্রেক্ষিতে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "নিয়ম করলেই তো হয় না। আমি অনেক নিয়ম করতে পারি। সেই নিয়মটা যদি মন থেকে গ্রহণ না করেন, তাহলে নিয়ম তৈরি কী করে হবে? আপনারা আপনাদের ১৪০০ সদস্য-সদস্যাদের দায়িত্ব দিন। দিয়ে বলুন কোথায় অভাব আছে, অভিযোগ আছে, কীভাবে ছাত্রদের অতিরিক্ত কোনও কাজে যুক্ত করা যায়। আপনাদের দাবি, প্রিন্সিপাল নিয়োগ করতে হবে। কে বারণ করেছে? আপনাদের যোগ্যতা থাকলে আবেদন করতে পারেন। আমি ১৫০ জন প্রিন্সিপাল নেব। এখনও পর্যন্ত ৭৮ জনকে পাওয়া গেছে।"
সপ্তম বেতন কমিশনের দাবি নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সপ্তম বেতন কমিশন লাগু করতে হলে আড়াই হাজার কোটি টাকা লাগবে। দেওয়ার ক্ষমতা আছে? আমাদের তো রেডি করা আছে। নাহলে টাকার কথাটা বলছি কী করে। সুতরাং আমাদের নজর আছে। আমরা এবিষয়ে আলোচনা করছি। অর্থ দপ্তরের সঙ্গে কথা বলছি। আরও তিন হাজার শিক্ষক নিয়োগ হতে চলেছে। আপনাদের দাবি সনদ আমার মোটামুটি মুখস্থ। যেগুলো করা যাবে সেগুলো নিয়ে নিশ্চয়ই মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।"
সমিতির আর একটি দাবি ছিল, কলেজগুলোতে লাইব্রেরিয়ান নিয়োগ করতে হবে। এবিষয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "লাইব্রেরিতে আজকাল কে যাচ্ছে বলুন তো? একটা রেকর্ড দেখান। যদি কো-এডুকেশন কলেজ হয় তাহলে গল্প করতে যাচ্ছে। তবুও আমি লাইব্রেরিয়ানের বিষয়টি ভেবে দেখেছি।" পাশাপাশি তিনি নাম না করে যাদবপুরের প্রসঙ্গে বলেন, "ছাত্র সমস্যাই শিক্ষাকে শেষ করছে এটা বোধহয় আমার কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। কোনও ছাত্র কি উপাচার্যকে ধাক্কা মারতে পারে? তাঁদেরকে আপনি ছাত্র বলবেন? পারমিসেবল ম্যানেজমেন্ট যতক্ষণ না আসবে ততক্ষণ উন্নতি হতে পারে না।"