ETV Bharat / state

পরিবর্তিত আবহাওয়ায় কী ভাবে সুস্থ রাখবেন আপনার শিশুকে - শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

পরিবর্তিত আবহাওয়ার রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের পাশাপাশি ডায়ারিয়া , আমাশয়ের প্রকোপ বাড়ছে শিশুদের মধ্যে । এর সঙ্গে ডেঙ্গির প্রকোপও রয়েছে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কী ভাবে সুস্থ রাখা যাবে শিশুদের? উপায় বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

কলকাতা
author img

By

Published : Oct 12, 2019, 11:47 AM IST

Updated : Oct 12, 2019, 2:33 PM IST

কলকাতা, 12 অক্টোবর : দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গেছে । অথচ, এই শেষ আশ্বিনেও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে । দেখে মনেও হচ্ছে না, এটা শরৎকাল । এমন আবহাওয়ার জেরে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের পাশাপাশি ডায়ারিয়া , আমাশয়ের প্রকোপ বাড়ছে শিশুদের মধ্যে । এর সঙ্গে ডেঙ্গির প্রকোপও রয়েছে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কী ভাবে সুস্থ রাখা যাবে শিশুদের? উপায় বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

শরৎকালে বৃষ্টি খুব একটা হয় না । যেহেতু এবছর এখনও বৃষ্টি হচ্ছে, এর ফলে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে । কখনও বৃষ্টি, তারপরে গরম । এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "শিশুদের উপর এর প্রভাব পড়ছে । এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের শিকার হচ্ছে শিশুরা । এ সবের মধ্যে যে সব কমন সংক্রমণ রয়েছে, তা হল, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা অর্থাৎ, টনসিলের সংক্রমণ। টনসিল ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে । ঢোক গিলতে পারছে না । এর সঙ্গে সর্দি, কাশি তো হচ্ছে।"

তিনি আরও বলেন, "এই সময় জলবাহিত কিছু রোগ বিশেষ করে বাড়ছে । যেমন, ডায়ারিয়া । অর্থাৎ, জল দূষিত হচ্ছে, সেই দূষিত জল বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে শিশুদের শরিরে প্রবেশ করছে ৷ ফলে শিশুদের মধ্যে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ছে । বৃষ্টি হলে জলবাহিত অন্য আরও কিছু অসুখ এই সময়ে বেড়ে যায় । তার মধ্যে একটি হচ্ছে হেপাটাইটিস এ অর্থাৎ, জন্ডিস ৷ প্রতিষেধক যাদের দেওয়া নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অসুখ বেশি দেখা যায় । অন‍্য একটি সংক্রমণও এই সময় বেশি দেখা যায়, তা হল টাইফয়েড । এটাও জলবাহিত রোগ । এ ক্ষেত্রেও যাদের প্রতিষেধক দেওয়া নেই, তাদের এই অসুখের প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।"

বর্ষার সময় আর্দ্রতা বেশি থাকায় বিভিন্ন ধরনের চামড়ার রোগ বাড়ছে ৷ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "এই সময় যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা বেশি, সেই জন্য চামড়ায় বিভিন্ন ধরনের রোগ এই সময় দেখা যায় । যেমন, ফাংগাল ইনফেকশন দেখা যাচ্ছে । কারও কারও চামড়ায় ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণও দেখা যাচ্ছে । ফাংগাল ইনফেকশন যাদের বেশি দেখা যাচ্ছে, তাদের খুসকির সমস্যাও বেশি দেখা যাচ্ছে । এদিকে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে । ফলে জল-কাদা ঘেঁটে আসছে যে সব শিশু, তাদের স্কিনে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি এবং ইনফেকশন হচ্ছে ।"

রাজ্যজুড়েই কম-বেশি ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে ৷ ডেঙ্গি নিয়ে অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "যেহেতু মশার প্রকোপ বেড়েছে, সেই জন্য ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুদেরও বেশি দেখা যাচ্ছে । বিভিন্ন স্থানে জল জমছে বলে মশার প্রকোপ বেড়ে গেছে । তবে, মানুষ বেশ সচেতন এখন । জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে চাইছেন । কারণ, ডেঙ্গির সংক্রমণ হয়েছে কি না, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছেন।"

ভিডিয়োয় শুনুন

এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় শিশুদের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে? এই নিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "প্রধানত, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন । অর্থাৎ, সর্দি, কাশি, গলা ব‍্যথা , এর সঙ্গে জ্বর । এছাড়াও ডায়ারিয়া, আমাশয়ও খুব বেশি দেখা যাচ্ছে । এর পাশাপাশি ডেঙ্গিও রয়েছে । এই তিন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের এখন বেশি দেখা যাচ্ছে ।"

আবহাওয়া বদলের এই সময় আর কোন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা? তিনি বলেন, "এই সময় শীতের প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়বে। যেহেতু আবহাওয়া বদল হচ্ছে ৷ এই সময়, যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়তে পারে । সর্দি, কাশি, জ্বর বাড়তে পারে । স্কিনের কিছু অসুখ হতে পারে । যেমন, শীতকালে যেটা হয় কিছু কিছু এগজ়িমা, সোরিয়াসিস, অ্যালার্জিক, এই কন্ডিশনগুলি বেড়ে যায় । "

এই সময়ে হওয়া অসুখ থেকে কী ভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে ? তিনি বলেন, "প্রতিরোধের জন‍্য প্রথমেই হাইজিন মেইনটেইনের কথা বলব । অর্থাৎ, খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে খেতে হবে । এর ফলে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা যায় । ঢাকা জামাকাপড় পরতে হবে যাতে মশা কামড়াতে না পারে । হাইড্রেশন মেইনটেন করা । অর্থাৎ, জ্বর, ডায়ারিয়া হলে বার বার ORS খাওয়ানো। এর সঙ্গে যদি কোনও ইনফেকশন রয়েছে বলে মনে হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।"

ভিডিয়োয় শুনুন

পুজো শেষ হয়ে গেল, বৃষ্টিও হচ্ছে মাঝেমধ্যে । শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে মায়েদের উদ্দেশে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "মায়েদের সতর্ক হতে হবে । তার কারণ, শিশুদের যে ইনফেকশন আসে, সেটা বড়দের কাছে থেকেও আসে । এ জন্য মায়েদের যদি সর্দি, কাশি, জ্বর হয় কিংবা, লুজ় মোশন অর্থাৎ, ডায়ারিয়া হয়, তার থেকেও শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, শিশুর সামনেই নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে মা । এখান থেকেও সরাসরি রেসপিরেটরি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে ।"

তিনি আরও বলেন, "যখন লুজ় মোশন হচ্ছে, তখন ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রান্না করা, খাবার পরিবেশন করা এবং শিশুকে খাওয়ানো উচিত । কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে, মা-বাবা হোক অথবা, শিশুর পরিচর্যা যে বা যাঁরা করছেন, তাঁদের মাধ‍্যমে জীবাণু শিশুদের মধ্যে চলে যেতে পারে । এ জন্য, শিশুর পরিচর্যা যাঁরা করবেন, তাঁদের সকলকেই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে । প্রতিবার হাত পরিষ্কার করে খাবার দেওয়া এবং খাওয়াতে হবে । অর্থাৎ, হাইজিন, এটা ভীষণভাবে মেইনটেন করতে হবে।"

ভিডিয়োয় শুনুন

পুজোর সময় বৃষ্টি এবং এখনও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে, এর জন্যই কি এই সময় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে? অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "নিশ্চয়ই । আবহাওয়া যদি এভাবে বদলে যায়, মানুষ তার জন্য প্রস্তুত থাকে না । ছাতা, রেইনকোট এসব এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। কেউ যদি ছাতা বা রেইনকোট না নিয়ে বাইরে চলে যায়, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি-কাশি-জ্বর তার খুব সহজেই হচ্ছে । এ ক্ষেত্রেও সতর্কতার প্রয়োজন । এক একদিন এমন বৃষ্টি হচ্ছে, দেখে মনেই হচ্ছে না এখন শরৎকাল । এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব জরুরি এবং সতর্ক হওয়াও খুব জরুরি । শিশুরা যাতে ভিজে জামা-কাপড় না পরে সেটা দেখতে হবে ৷ কারণ এই সময় জামাকাপড় ভালো শুকোবে না ।"

কলকাতা, 12 অক্টোবর : দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গেছে । অথচ, এই শেষ আশ্বিনেও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে । দেখে মনেও হচ্ছে না, এটা শরৎকাল । এমন আবহাওয়ার জেরে রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনের পাশাপাশি ডায়ারিয়া , আমাশয়ের প্রকোপ বাড়ছে শিশুদের মধ্যে । এর সঙ্গে ডেঙ্গির প্রকোপও রয়েছে । এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কী ভাবে সুস্থ রাখা যাবে শিশুদের? উপায় বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার ।

শরৎকালে বৃষ্টি খুব একটা হয় না । যেহেতু এবছর এখনও বৃষ্টি হচ্ছে, এর ফলে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে । কখনও বৃষ্টি, তারপরে গরম । এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "শিশুদের উপর এর প্রভাব পড়ছে । এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের শিকার হচ্ছে শিশুরা । এ সবের মধ্যে যে সব কমন সংক্রমণ রয়েছে, তা হল, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা অর্থাৎ, টনসিলের সংক্রমণ। টনসিল ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে । ঢোক গিলতে পারছে না । এর সঙ্গে সর্দি, কাশি তো হচ্ছে।"

তিনি আরও বলেন, "এই সময় জলবাহিত কিছু রোগ বিশেষ করে বাড়ছে । যেমন, ডায়ারিয়া । অর্থাৎ, জল দূষিত হচ্ছে, সেই দূষিত জল বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে শিশুদের শরিরে প্রবেশ করছে ৷ ফলে শিশুদের মধ্যে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ছে । বৃষ্টি হলে জলবাহিত অন্য আরও কিছু অসুখ এই সময়ে বেড়ে যায় । তার মধ্যে একটি হচ্ছে হেপাটাইটিস এ অর্থাৎ, জন্ডিস ৷ প্রতিষেধক যাদের দেওয়া নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অসুখ বেশি দেখা যায় । অন‍্য একটি সংক্রমণও এই সময় বেশি দেখা যায়, তা হল টাইফয়েড । এটাও জলবাহিত রোগ । এ ক্ষেত্রেও যাদের প্রতিষেধক দেওয়া নেই, তাদের এই অসুখের প্রবণতা বেশি দেখা যায় ।"

বর্ষার সময় আর্দ্রতা বেশি থাকায় বিভিন্ন ধরনের চামড়ার রোগ বাড়ছে ৷ শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "এই সময় যেহেতু বাতাসে আর্দ্রতা বেশি, সেই জন্য চামড়ায় বিভিন্ন ধরনের রোগ এই সময় দেখা যায় । যেমন, ফাংগাল ইনফেকশন দেখা যাচ্ছে । কারও কারও চামড়ায় ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণও দেখা যাচ্ছে । ফাংগাল ইনফেকশন যাদের বেশি দেখা যাচ্ছে, তাদের খুসকির সমস্যাও বেশি দেখা যাচ্ছে । এদিকে এখনও বৃষ্টি হচ্ছে । ফলে জল-কাদা ঘেঁটে আসছে যে সব শিশু, তাদের স্কিনে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি এবং ইনফেকশন হচ্ছে ।"

রাজ্যজুড়েই কম-বেশি ডেঙ্গির প্রকোপ রয়েছে ৷ ডেঙ্গি নিয়ে অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "যেহেতু মশার প্রকোপ বেড়েছে, সেই জন্য ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুদেরও বেশি দেখা যাচ্ছে । বিভিন্ন স্থানে জল জমছে বলে মশার প্রকোপ বেড়ে গেছে । তবে, মানুষ বেশ সচেতন এখন । জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে চাইছেন । কারণ, ডেঙ্গির সংক্রমণ হয়েছে কি না, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছেন।"

ভিডিয়োয় শুনুন

এই আবহাওয়ার পরিবর্তনের সময় শিশুদের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে? এই নিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "প্রধানত, রেসপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন । অর্থাৎ, সর্দি, কাশি, গলা ব‍্যথা , এর সঙ্গে জ্বর । এছাড়াও ডায়ারিয়া, আমাশয়ও খুব বেশি দেখা যাচ্ছে । এর পাশাপাশি ডেঙ্গিও রয়েছে । এই তিন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের এখন বেশি দেখা যাচ্ছে ।"

আবহাওয়া বদলের এই সময় আর কোন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা? তিনি বলেন, "এই সময় শীতের প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়বে। যেহেতু আবহাওয়া বদল হচ্ছে ৷ এই সময়, যাদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে তাদের শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়তে পারে । সর্দি, কাশি, জ্বর বাড়তে পারে । স্কিনের কিছু অসুখ হতে পারে । যেমন, শীতকালে যেটা হয় কিছু কিছু এগজ়িমা, সোরিয়াসিস, অ্যালার্জিক, এই কন্ডিশনগুলি বেড়ে যায় । "

এই সময়ে হওয়া অসুখ থেকে কী ভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে ? তিনি বলেন, "প্রতিরোধের জন‍্য প্রথমেই হাইজিন মেইনটেইনের কথা বলব । অর্থাৎ, খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে খেতে হবে । এর ফলে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা যায় । ঢাকা জামাকাপড় পরতে হবে যাতে মশা কামড়াতে না পারে । হাইড্রেশন মেইনটেন করা । অর্থাৎ, জ্বর, ডায়ারিয়া হলে বার বার ORS খাওয়ানো। এর সঙ্গে যদি কোনও ইনফেকশন রয়েছে বলে মনে হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।"

ভিডিয়োয় শুনুন

পুজো শেষ হয়ে গেল, বৃষ্টিও হচ্ছে মাঝেমধ্যে । শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে মায়েদের উদ্দেশে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "মায়েদের সতর্ক হতে হবে । তার কারণ, শিশুদের যে ইনফেকশন আসে, সেটা বড়দের কাছে থেকেও আসে । এ জন্য মায়েদের যদি সর্দি, কাশি, জ্বর হয় কিংবা, লুজ় মোশন অর্থাৎ, ডায়ারিয়া হয়, তার থেকেও শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, শিশুর সামনেই নিশ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে মা । এখান থেকেও সরাসরি রেসপিরেটরি ট্র‍্যাক্ট ইনফেকশন হতে পারে ।"

তিনি আরও বলেন, "যখন লুজ় মোশন হচ্ছে, তখন ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রান্না করা, খাবার পরিবেশন করা এবং শিশুকে খাওয়ানো উচিত । কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে, মা-বাবা হোক অথবা, শিশুর পরিচর্যা যে বা যাঁরা করছেন, তাঁদের মাধ‍্যমে জীবাণু শিশুদের মধ্যে চলে যেতে পারে । এ জন্য, শিশুর পরিচর্যা যাঁরা করবেন, তাঁদের সকলকেই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে । প্রতিবার হাত পরিষ্কার করে খাবার দেওয়া এবং খাওয়াতে হবে । অর্থাৎ, হাইজিন, এটা ভীষণভাবে মেইনটেন করতে হবে।"

ভিডিয়োয় শুনুন

পুজোর সময় বৃষ্টি এবং এখনও মাঝে মাঝে বৃষ্টি হচ্ছে, এর জন্যই কি এই সময় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে? অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "নিশ্চয়ই । আবহাওয়া যদি এভাবে বদলে যায়, মানুষ তার জন্য প্রস্তুত থাকে না । ছাতা, রেইনকোট এসব এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। কেউ যদি ছাতা বা রেইনকোট না নিয়ে বাইরে চলে যায়, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি-কাশি-জ্বর তার খুব সহজেই হচ্ছে । এ ক্ষেত্রেও সতর্কতার প্রয়োজন । এক একদিন এমন বৃষ্টি হচ্ছে, দেখে মনেই হচ্ছে না এখন শরৎকাল । এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব জরুরি এবং সতর্ক হওয়াও খুব জরুরি । শিশুরা যাতে ভিজে জামা-কাপড় না পরে সেটা দেখতে হবে ৷ কারণ এই সময় জামাকাপড় ভালো শুকোবে না ।"

Intro:কলকাতা, ১১ অক্টোবর: দুর্গাপুজো শেষ হয়ে গিয়েছে। অথচ, এই শেষ আশ্বিনেও মাঝে মধ্যে বৃষ্টি হচ্ছে। দেখে মনেও হচ্ছে না যে, এটা শরৎকাল। এমন আবহাওয়ার জেরে রেসপিরেটরি ট্র‍্যাক ইনফেকশনের পাশাপাশি ডায়ারিয়া, আমশার প্রকোপ বাড়ছে শিশুদের মধ্যে। এর সঙ্গে ডেঙ্গির প্রকোপও রয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতির মধ্যে কীভাবে সুস্থ রাখা যাবে শিশুদের? এ সব নিয়ে বলেছেন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।


Body:শরৎকালে বৃষ্টি খুব একটা হয় না। যেহেতু এখন বৃষ্টি হচ্ছে, এর ফলে তাপমাত্রার হেরফের হচ্ছে। কখনও বৃষ্টি, তার পরে গরম। এ কথা জানিয়ে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "শিশুদের উপর এর প্রভাব পড়ছে। এর প্রভাবে বিভিন্ন ধরনের সংক্রমণের শিকার হচ্ছে শিশুরা। এ সবের মধ্যে যে সব কমন সংক্রমণ রয়েছে, তা হল, জ্বর, সর্দি, কাশি, গলাব্যথা অর্থাৎ, টনসিলের সংক্রমণ। টনসিলগুলি ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে। ঢোক গিলতে পারছে না। এর সঙ্গে সর্দি, কাশি তো হচ্ছে।" তিনি বলেন, "এই সময় জলবাহিত কিছু রোগ বিশেষ করে বাড়ছে। যেমন, ডায়ারিয়া। অর্থাৎ, জল দূষিত হচ্ছে, সেখান থেকে বিভিন্ন খাবারের মধ‍্য দিয়ে খাবার দূষিত হয়ে শিশুদের মধ্যে ডায়ারিয়ার প্রকোপ বাড়ছে। বৃষ্টি হলে জলবাহিত অন্য আরও কিছু অসুখ এই সময়ে বেড়ে যায়। তার মধ্যে একটি হচ্ছে হেপাটাইটিস এ অর্থাৎ, জন্ডিস দেখা যায়। প্রতিষেধক যাদের দেওয়া নেই, তাদের ক্ষেত্রে এই ধরনের অসুখ বেশি দেখা যায়। অন‍্য একটি সংক্রমণও এই সময় বেশি দেখা যায়, তা হল টাইফয়েড। এটাও জলবাহিত রোগ। এ ক্ষেত্রেও যাদের প্রতিষেধক দেওয়া নেই, তাদের এই অসুখের প্রবণতা বেশি দেখা যায়।"

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "এই সময় যেহেতু ময়শ্চার বেশি, সেই জন্য স্কিনে বিভিন্ন ধরনের রোগ এই সময় দেখা যায়। যেমন, ফাংগাল ইনফেকশন দেখা যাচ্ছে। কারও কারও স্কিনে ব‍্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে। ফাংগাল ইনফেকশন যাদের বেশি দেখা যাচ্ছে, তাদের খুসকির সমস্যাও বেশি দেখা যাচ্ছে। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। এর ফলে জল-কাদা ঘেঁটে আসছে যে সব শিশু, তাদের স্কিনে বিভিন্ন ধরনের অ্যালার্জি এবং ইনফেকশন হচ্ছে।" ডেঙ্গির মরশুমও চলছে এখন ...। এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "যেহেতু মশার প্রকোপ বেড়েছে, সেই জন্য ডেঙ্গি আক্রান্ত শিশুদেরও বেশি দেখা যাচ্ছে। বিভিন্ন স্থানে জল জমছে বলে মশার প্রকোপ বেড়ে গিয়েছে। তবে, মানুষ বেশ সচেতন এখন। জ্বর হলেই রক্ত পরীক্ষা করাতে চাইছেন। কারণ, ডেঙ্গির সংক্রমণ হয়েছে কি না, সেই সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইছেন।"

এই সময় শিশুদের মধ্যে কোন ধরনের সমস্যা বেশি দেখা যাচ্ছে? শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার বলেন, "প্রধানত, রেসপিরেটরি ট্র‍্যাক ইনফেকশন। অর্থাৎ, সর্দি, কাশি, গলাব‍্যথা, এর সঙ্গে জ্বর। এবং, এর সঙ্গে ডায়ারিয়া, আমশা খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। এর পাশাপাশি ডেঙ্গিও রয়েছে। এই তিন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত শিশুদের এখন বেশি দেখা যাচ্ছে।" আবহাওয়া বদলের এই সময় আর কোন ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারে শিশুরা? তিনি বলেন, "এই সময় শীতের প্রকোপ ধীরে ধীরে বাড়বে। যেহেতু আবহাওয়া বদল হচ্ছে এই সময়, শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়েছে যাদের, এই সময় তাদের শ্বাসকষ্টের প্রবণতা বাড়তে পারে। সর্দি, কাশি, জ্বর বাড়তে পারে। স্কিনের কিছু অসুখ হতে পারে। যেমন, শীতকালে যেটা হয় কিছু কিছু এগজিমা, সোরিয়াসিস, অ্যালার্জিক, এই কন্ডিশনগুলি বাড়ে।"


Conclusion:কীভাবে প্রতিরোধ করা যেতে পারে ...? তিনি বলেন, "প্রতিরোধের জন‍্য প্রথমেই হাইজিন মেইনটেইনের কথা বলব। অর্থাৎ, খাওয়ার আগে ভালো করে হাত ধুয়ে খেতে হবে। এর ফলে অনেকটাই সুরক্ষিত থাকা যায়। ঢাকা জামাকাপড় পরতে হবে যাতে মশা কামড়াতে না পারে। অর্থাৎ, ফুল হাতা জামাকাপড় পরা এবং, যতটা কম সম্ভব স্কিন খোলা যাতে থাকে, সেটা দেখা‌। হাইড্রেশন মেইনটেন করা। অর্থাৎ, জ্বর, ডায়ারিয়া হলে বার বার ওআরএস খাওয়ানো। এর সঙ্গে যদি কোনও ইনফেকশন রয়েছে বলে মনে হয়, তখন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।" পুজো শেষ হয়ে গেল, বৃষ্টিও হচ্ছে মাঝেমধ্যে। শিশুদের সুরক্ষিত রাখতে মায়েদের প্রতি কিছু বলবেন...? তিনি বলেন, "মায়েদের সতর্ক হতে হবে। তার কারণ, শিশুদের যে ইনফেকশন আসে, সেটা বড়দের কাছে থেকেও আসে। এ জন্য মায়েদের যদি সর্দি, কাশি, জ্বর হয় কিংবা, লুস মোশন অর্থাৎ, ডায়ারিয়া হয়, তার থেকেও শিশুদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। কারণ, শিশুর সামনেই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছে মা। এখান থেকেও সরাসরি রেসপিরেটরি ট্র‍্যাক ইনফেকশন হতে পারে।"

তিনি বলেন, "যখন লুস মোশন হচ্ছে, তখন ভালোভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে রান্না করা, খাবার পরিবেশন করা এবং শিশুকে খাওয়ানো উচিত। কারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন না থাকলে, মা-বাবা হোক অথবা, শিশুর পরিচর্যা যে বা যাঁরা করছেন, তাঁদের মাধ‍্যমে জীবাণু শিশুদের মধ্যে চলে যেতে পারে। এ জন্য, শিশুর পরিচর্যা যাঁরা করবেন, তাঁদের সকলকেই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে। প্রতিবার হাত পরিষ্কার করে খাবার দেওয়া এবং খাওয়াতে হবে। অর্থাৎ, হাইজিন, এটা ভীষণভাবে মেইনটেন করতে হবে।" পুজোর সময় বৃষ্টি এবং বৃষ্টি মাঝে মধ্যে এখনও হচ্ছে, এর জন্যই কি এই সময় এমন সমস্যা দেখা দিচ্ছে? এই শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ বলেন, "নিশ্চয়ই। আবহাওয়া যদি এভাবে বদলে যায়, মানুষ তার জন্য প্রস্তুত থাকে না। ছাতা, রেইনকোট এসব এখন ব্যবহার করতে হচ্ছে। কেউ যদি ছাতা বা রেইনকোট না নিয়ে বাইরে চলে যায়, তাহলে বৃষ্টিতে ভিজে সর্দি-কাশি-জ্বর তার খুব সহজেই হচ্ছে। এ ক্ষেত্রেও সতর্কতার প্রয়োজন। এক একদিন এমন বৃষ্টি হচ্ছে, দেখে মনেই হচ্ছে না এখন শরৎকাল। এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া খুব জরুরি এবং সতর্ক হওয়াও খুব জরুরি। শিশুরা যাতে ভিজে জামা-কাপড় না পরে সেটা দেখতে হবে, কারণ এই সময় জামাকাপড় ভালো শুকোবে না। ভিজে জামা-কাপড় শিশুরা যাতে বেশি সময় পড়ে না থাকে, সেটাও দেখতে হবে।"
_______


বাইট:
wb_kol_01a_weather_children_diseases_bite_7203421
শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অগ্নিমিতা গিরি সরকার।

_______
Last Updated : Oct 12, 2019, 2:33 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.