কলকাতা, 5 ফেব্রুয়ারি : LIC-র শেয়ার IPO-র মাধ্যমে ছাড়া নিয়ে বাজেটে ঘোষণা হয়ে গেছে । দিনকয়েকের মধ্যে IPO-র মাধ্যমে শেয়ারবাজারে নথিভুক্ত হয়ে যাবে LIC-র একটা অংশ । এর জন্য সরকারের কোষাগারে আসতে চলেছে 77 হাজার কোটি টাকা । অন্তত অর্থনীতিবিদদের দাবি তেমনটাই । অর্থ মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের পরে চিন্তায় পড়ে গেছেন গ্রাহকরা । তাঁদের চিন্তা একটাই, গচ্ছিত অর্থ নিরাপদে থাকবে তো?
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক সুমন মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘LIC-র যে অংশ বিলগ্নিকরণ করা হচ্ছে, তাতে চিন্তার কিছু নেই । কারণ শেয়ারের একটা বড় অংশ এখনও থেকে যাবে সরকারের কাছেই । তাই আতঙ্কের কোনও কারণ নেই । এখন পর্যন্ত যা জানা যাচ্ছে, তাতে 25 শতাংশের মতো শেয়ার আমজনতার জন্য IPO-র মাধ্যমে ছাড়া হবে । অর্থাৎ 75% শেয়ার থেকে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে । তাই সুরক্ষা নিয়ে সংশয় থাকার কথা নয়।" তাঁর মতে, ওই পরিমাণ অংশ বিলগ্নিকরণ হলে আখেরে লাভ হবে গ্রাহকদের । কারণ, এখন দেখা যায় একটি ইনসিওরেন্স ক্লেম হলেও অনেক সময় তা রিলিজ করতে সময় লাগে । কিন্তু সেখানে অংশীদারিত্ব এলে কর্মীদের উপর চাপ বাড়বে । ফলে, ফাইল তাড়াতাড়ি ছেড়ে দিতে হবে । এতে আখেরে উপকৃত হবেন গ্রাহকরা ।
IPO কী? সুমনবাবু জানাচ্ছেন, IPO হল ইনিশিয়াল পাবলিক অফার । সরকারি কোনও সংস্থা বা সম্পত্তির একটা অংশ যদি বিলগ্নিকরণ করা হয় তবে সেটা IPO-র মাধ্যমেই করা হয় । যেমনটা হয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক সহ অন্য কয়েকটি ক্ষেত্রে । সহজে বললে, যদি একটি চারতলা বাড়ি থাকে তার একটি তলা যদি তার মালিক বিক্রি করে দেন সেক্ষেত্রে যেমনটা হয়, এটাও ঠিক তেমনই । অর্থাৎ বাড়ির মালিকের কাছে থাকছে বড় অংশ । LIC-র মতো সরকারি সংস্থার ক্ষেত্রে এই বিষয়টি হয় IPO র মাধ্যমে । কেন্দ্রীয় সরকার এর মাধ্যমে LIC-র একটা অংশের শেয়ার বিক্রি করবে ।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে কতটা অংশ বিলগ্নিকরণ হতে চলেছে LIC-র ? এখনও পর্যন্ত কর্পোরেশনের 100% মালিকানা কেন্দ্রীয় সরকারের । সুমন মুখোপাধ্যায় এপ্রসঙ্গে বলেন, “এবারের ডাইভার্সমেন্ট প্ল্যান আছে দুলাখ এক হাজার কোটি টাকার । তার এক তৃতীয়াংশ কেন্দ্রীয় সরকার তুলবে LIC থেকে । অর্থাৎ 70 হাজার কোটি টাকা LIC থেকে তুলবে সরকার । তবে এটাই প্রথম নয় । 2010 সালে IPO-র মাধ্যমে কোল ইন্ডিয়ার এক অংশ শেয়ারবাজারে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছিল । তখন তোলা হয়েছিল 15 হাজার কোটি টাকা ।"
কিন্তু কেন এটা করা হল? সুমনবাবুর উত্তর, “সরকারের এখন টাকার দরকার । বর্তমান সরকারের আমলে এখন নন পারফর্মিং অ্যাসেট (NPA) অনেক বেড়ে গেছে । এমনিতেও যে খুব একটা লাভ হচ্ছিল তা নয় । সরকার LIC-র অর্থ অন্যত্র বিনিয়োগ করছিল । তাতে ক্ষতিও হচ্ছিল । কিন্তু এখন একদিকে যেমন সরকারের হাতে অর্থ এল, অন্যদিকে যে শেয়ারহোল্ডাররা শেয়ার কিনবেন তাঁরা LIC-র কাজের দিকে নিশ্চিতভাবেই নজর রাখবেন । এখন IPO-র মাধ্যমে সরকার যদি বেশি মানুষের কাছে শেয়ার বিক্রি করে তবে একরকম বিষয় হবে । সরকারের নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি থাকবে । আবার যদি কোনও বিশেষ সংস্থা বেশিরভাগ শেয়ার কিনে নেয় সেক্ষেত্রে কিন্তু তাদেরও কথা শুনতে হবে । বিদেশে কোনও ইনসিওরেন্স সরকারি নয় । যে ব্যাঙ্কগুলি বেসরকারি সংস্থা চালাচ্ছে সেগুলির নন পারফর্মিং অ্যাসেটস অনেক কম । অর্থাৎ সরকারি ব্যাঙ্কের থেকে বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলি এক্ষেত্রে অনেক বেশি ভালো কাজ করছে।"
ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে সরাসরি সরকারের সুরক্ষা কবজ অনেকটাই কম । সেখানে একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকার দায়বদ্ধতাই নেয় সরকার । কিন্তু, ইনসিওরেন্সের ক্ষেত্রে পুরোটাই নিতে হবে সরকারকে । সরকার এই বিষয়ে হাত তুলে নেবে কি না সেটা আদালতের বিচার্য বিষয়। অর্থনীতিবিদের মতে, এই বাজেট পর্যন্ত যা হয়েছে তাতে আমানত সুরক্ষিত থাকবে । গ্রাহকের এই বিষয়টিতে আশঙ্কার কারণ নেই ।