কলকাতা, 5 এপ্রিল : শান্তিপ্রসাদ সিনহা তাঁর রক্ষাকবচ গতকালই হারিয়েছেন। মঙ্গলবার আদালত সার্ভে পার্ক থানার ওসিকে নির্দেশ দিল, আজ 3টের মধ্যে তাঁকে সিবিআই দফতরে নিয়ে যাওয়া সুনিশ্চিত করতে হবে ৷ এছাড়া একাধিক নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চ (HC orders CBI to interrogate Former SSC Advisor S P Sinha today) ৷
এ প্রসঙ্গে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বক্তব্য, "এই শান্তিপ্রসাদ সিনহা হচ্ছেন প্রধান কালপ্রিট ৷ সিবিআই যদি মনে করে তাহলে আমি কাস্টোডিয়াল জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দিচ্ছি সিবিআইকে।" এসএসসি-র প্রাক্তন উপদেষ্টা এসপি সিনহার পক্ষের আইনজীবী বিশ্বরূপ ভট্টাচার্য বিচারপতিকে অনুরোধ করেন, "দয়া করে এই নির্দেশ দেবেন না । কাস্টোডিয়াল জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেবেন না ।" বিচারপতি এর জবাবে জানিয়ে দেন, এটা সম্ভব নয় ।
নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় সিবিআইয়ের বিশেষ দল এসএসসি-র 4 আধিকারিককে সোমবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদ করে (CBI interrogation SSC Officer) । ইতিমধ্যেই এসএসসি-র দুর্নীতিকাণ্ডে তদন্তে নেমে একাধিক নথিপত্র জোগাড় করেছেন সিবিআইয়ের গোয়েন্দারা । সূত্রের খবর, এবার সেই নথিপত্র একেবারে টেবিলের সামনে রেখে এসএসসি-র 4 আধিকারিককে মুখোমুখি বসিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং বয়ান রেকর্ড করেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার আধিকারিকরা । কিন্তু সিবিআই সূত্রের খবর ,জিজ্ঞাসাবাদ করা একাধিক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গিয়েছেন এই চার এসএসসি আধিকারিক।
আরও পড়ুন : SSC Group D Recruitment Case : উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের আপিল মামলা এক বেঞ্চ থেকে আরেক বেঞ্চে ঘুরল
আজ শুনানির আরম্ভে সেই রিপোর্ট আদালতে জমা দেয় সিবিআই ৷ রিপোর্ট দেখে আদালত সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে, অলোককুমার সরকারকে ফের জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক । প্রয়োজনে হেফাজতেও নিতে পারে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ৷ কারণ তিনি শূন্যপদের বিষয়টি দেখতেন । বিচারপতির মনে করছেন, এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় তিনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি । রাজ্যের পক্ষে জানানো হয়, আদালত নির্দেশ দিলে সমস্ত বেআইনি নিয়োগ অবিলম্বে বাতিল করা হবে ।
এর উত্তরে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় প্রশ্ন করেন, "ওয়েটিং লিস্টে থাকা প্রার্থীদের কী হবে ? তাঁরা বছরের পর বছর এখানে-ওখানে বসে ধর্না দিচ্ছেন । তাঁদের যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন চাকরি দেওয়া হয়নি ? এদের চোখের জল আমাকে কিছু করতে বাধ্য করেছে ৷"
তবে তাপস পাঁজা-সহ আরও দুই আধিকারিককে আজ জেরার নির্দেশ দেননি বিচারপতি । যদিও 8 এপ্রিল তাঁদের সম্পত্তির হিসাব আদালতকে জানাতে হবে । এর আগে যে 98 জনের বেতন বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, তাঁদের দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি ৷ এই নিয়োগে কোনও টাকার লেনদেন হয়েছে কি না তা জানতে রাজ্য পুলিশ এবং সিআরপিএফ-এর সাহায্য নেবে সিবিআই বলে জানিয়েছে আদালত ।
আজ থেকেই এই জিজ্ঞাসাবাদ শুরুর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে । সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশ আধিকারিক এই প্রার্থীদের নিয়ে আসার ব্যবস্থা করবে । যাঁরা দফতরে হাজিরা দিতে রাজি হবেন না, আদালত তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে ।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আজ স্কুল সার্ভিস কমিশনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্যদের আপিল সংক্রান্ত মামলা না শুনে ছেড়ে দেয় বিচারপতি জয়মাল্য বাগচি ও বিচারপতি বিভাস পট্টনায়কের ডিভিশন বেঞ্চ (SSC Group D Recruitment Case) । দিনের শুরুতেই দুই বিচারপতি জানিয়ে দেন, ব্যক্তিগত কারণে এই মামলা তাঁদের পক্ষে শোনা সম্ভব নয় । এরপর এসএসসি-র সদস্যরা প্রধান বিচারপতির কাছে মামলা শোনার আবেদন জানান ৷ এতে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব অসন্তুষ্ট হন ৷ তিনি জানান, আদালতের নিজস্ব কিছু নীতি আছে ৷ এইভাবে যে কোনও সময়ে মামলা নিয়ে এলে এভাবে তার শুনানি সম্ভব নয় ৷ প্রধান বিচারপতি সিঙ্গল বেঞ্চে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেন ৷ এরপর কোনও পথ না পেয়ে স্বভাবতই মামলাটি শুনানির জন্য বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের সিঙ্গল বেঞ্চে ফিরে আসে ৷