কলকাতা, 14 জুন: শুধু তদন্তভার দেওয়া নয়, এবার সিবিআইকে তদন্তের জন্য সময়সীমাও বেঁধে দিল আদালত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অভিযোগ উঠেছে, সিবিআইয়ের তদন্ত শুরু হলেও শেষ হওয়ার নাম নেয় না। এবার সেই অনন্তকাল তদন্তের উপর রাশ টানল হাইকোর্ট । কয়লা মাফিয়া রাজু ঝা খুনের তদন্ত ভার সিবিআইকে দিয়ে একই সঙ্গে কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়ে দিল, কয়লা মাফিয়া খুনের ঘটনার তদন্ত চার মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে সিবিআইকে । সুতরাং হাইকোর্টের রায় থেকে স্পষ্ট, তদন্তের নামে দীর্ঘদিন ধরে মামলা ঝুলিয়ে রাখতে পারবে না সিবিআই ।
শক্তিগড় জাতীয় সড়কের উপরে ভর সন্ধ্যায় প্রকাশ্যে খুন করা হয় রাজু ঝাকে । আবদুল লতিফ নামে কয়লা মামলায় যুক্ত থাকা আরও একজন ওই গাড়িতে ছিল বলেও জানা যায় । সুতরাং সহজেই অনুমেয়, কয়লা পাচারের সঙ্গে এই খুনের কোনও যোগ থাকলেও থাকতে পারে । তাই সিবিআইয়ের অপরাধ দমন শাখার এসপিকে দ্রুত কেস ডাইরি-সহ যাবতীয় নথি হস্তান্তর করতে রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। চারমাস পর রিপোর্ট দিতে হবে সিবিআইকে, এমনই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা।
বুধবার ব্যাবসায়ী নরেন্দ্র খারকার তরফে জানানো হয়, ইতিমধ্যে তাঁর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে । এমনকী তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও ফ্রিজ করা হয়েছে। অথচ রাজ্য পুলিশ বলছে তার নামে কোনও এফআইআর নেই। খুন হওয়া ব্যাক্তি রাজু ঝা ও তাঁর স্ত্রী দুজনেই সিবিআই কয়লা পাচার মামলাযর সাক্ষী। রাজু ঝার স্ত্রী এদিন আদালতে জানান, "1 এপ্রিল শক্তিগড়ে রাজু ঝা খুন হন। অথচ সিবিআই এপ্রিলের শেষে তাঁকে কয়লা মামলায় সমন পাঠিয়েছে!" পাশাপাশি তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে জানান, কয়লা পাচার, গোরু পাচার মামলার ভীরে তার স্বামীর খুনের তদন্ত চাপা পড়ে যাবে।
অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে ব্যবসায়ী নরেন্দ্র খারকার মামলা করার এক্তিয়ার নিয়েই প্রশ্ন তোলা হয়। বিচারপতি রাজা শেখর মান্থা পালটা বলেন, "রাজু ঝা কয়লা মামলার চার্জশিটে অভিযুক্ত না হলেও 2015 সাল থেকে নানা অভিযোগে অভিযুক্ত। যেহেতু কয়লা, গোরু পাচারের মামলায় সিবিআই তদন্ত করছে, আর দুটি ঘটনার মধ্য়ে যোগ আছে, তাই আদালত মনে করে রাজু ঝা খুনের তদন্তও সিবিআইয়ের করা উচিত।" সেইসঙ্গে, আদালত নিশ্চিত, এই খুনের সঙ্গে কয়লা পাচার মামলার কিছু যোগ আছে। গত চার দশক ধরে কয়লা পাচার একটা গুরুতর বিষয় বলেও পর্যবেক্ষণে জানায় আদালত। এই খুনের তদন্ত সিবিআইয়ের হাতে না গেলে কয়লা পাচার মামলার তদন্ত ধাক্কা খাবে বলেও জানান বিচারপতি।
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত নির্বাচনে পর্যবেক্ষক নিয়োগ, হাইকোর্টের দ্বারস্থ রাজ্য নির্বাচন কমিশন
বিচারপতি রাজাশেখর মান্থা এদিন মন্তব্য করান, "আমিও মনে করি কোনও কোনও অভিযুক্ত মনে করছে সিবিআইয়ের হাতে তদন্ত গেলে তারা রক্ষা পেয়ে য়াবে । কেউ আবার ভাবছে রাজ্যের হাতে তদন্ত থাকলে তাদের সুবিধা ।" কেন্দ্রের অ্যাডিশনাল সলিসিটর জেনারেল অশোক চক্রবর্তী বলেন, "কয়লা পাচার ও রাজু ঝা খুনের মধ্যে খুব গভীর যোগ আছে। তাই আমরা তদন্ত হাতে নিতে প্রস্তুত।" রাজ্যের অবশ্য পালটা দাবি, রাজ্য সরকার খুনের ঘটনার কিনারা করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছে । এখন তদন্ত হস্তান্তর করা হলে মামলা ধাক্কা খাবে। তবে সব পক্ষের সওয়াল-জবাব শেষে সিবিআই তদন্তের নির্দেশই দেন বিচারপতি। উল্লেখ্য, 1 এপ্রিল রাজু ঝা খুন হন। সেই ঘটনায় নরেন্দ্র খারকার গাড়ির চালক অভিজিৎ মন্ডলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের অতিসক্রিয়তার বন্ধ করার দাবিতে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন নরেন্দ্র।