কলকাতা, 27 সেপ্টেম্বর: পঞ্চায়েত নির্বাচনে 'পিস রুম' খুলেছিলেন রাজ্যপাল। একক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে অন্তর্বর্তী উপাচার্যও নিয়োগ করেছেন। এবার পুজোর মুখে 108 জনকে 'দুর্গা ভারত সম্মান' দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। তাঁর এই ধারাবাহিক কার্যকলাপে নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে রাজ্যপাল এমন পদক্ষেপ নিতে পারেন কী ? রাজ্য সরকারকে এড়িয়ে তিনি কী সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর চেষ্টা করছেন ? এরকম পদক্ষেপে খরচ হওয়া বিপুল অর্থ আসছে কোথা থেকে ? ইত্যাদি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর খোঁজারই চেষ্টা করল ইটিভি ভারত।
বাংলার শিল্পীদের বিশেষ সম্মান প্রদান করবেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। দুর্গাপুজোর প্রাক্কালে সেই পুরস্কার দেওয়ার বিষয়ে যাবতীয় প্রস্তুতি শুরু করেছে রাজভবন। সূত্রের খবর, 108 জনকে 'দুর্গা ভারত সম্মান' দেবেন রাজ্যপাল। সেই 108 জনের মধ্যে 33 শতাংশের বেশি নারী শিল্পী থাকবেন। সূত্রের দাবি, মহিলা সংরক্ষণ বিলকে সম্মান দিয়েই শিল্পী নির্বাচনে 33 শতাংশের বিষয়টি গুরুত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু, রাজ্যপাল সরকারকে এড়িয়ে এমনটা করতে পারেন না বলেই দাবি করছে শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস। তৃণমূল মুখপাত্র এবং বরানগরের বিধায়ক তাপস রায় বলেন, "সাম্প্রতিক, অতীতেও রাজ্যপালের একাধিক পদক্ষেপ দেখা গিয়েছে, যা তিনি সাংবিধানিক পদে বসে করতে পারেন না। এক্ষেত্রেও রাজ্যপালের এই পদক্ষেপ সমান্তরাল প্রশাসন চালানোর নামান্তর। তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যপাল মহিলাদের সম্মান জানাতে চাইছে তার বিরোধিতা করছে না। বিরোধিতা রাজ্যকে এড়িয়ে পুরস্কার ঘোষণা করা নিয়েই। সব ক্ষেত্রেই এ ধরনের পদক্ষেপ বর্তমান রাজ্যপালের দেখা যাচ্ছে। এখনো তিনি অধ্যক্ষকে এড়িয়ে পদক্ষেপ নিতে চাইছেন। কখনও সরকারকে এড়িয়ে। এ বিষয়ে তাঁর আরও একবার ভাবা দরকার। তিনি রাজ্যের সাংবিধানিক প্রধান। কিন্তু রাজ্যে জনগণ নির্বাচিত সরকার রয়েছে, তাকে এড়িয়ে বারবার এই ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা পড়ছে কেন ?"
সিপিআইএম নেতা রবীন দেব বলেন, "রাজ্যপাল তাঁর যে সাংবিধানিক অধিকার আছে তা প্রয়োগ না-করে সংবিধান বহির্ভূত কাজ করছেন। এটা ভালো লক্ষণ নয়। তিনি সংবিধানিক প্রধান হিসাবে রাজ্য সরকার আইন মেনে কাজ করছেন কি না, তা দেখবেন। এসব কাজে অগ্রাধিকার না দিয়ে তিনি না না কাজে জড়িয়ে পড়ছেন। সংবাদমাধ্যমে, খবরে থাকার একটা চেষ্টা দেখা যাচ্ছে।"
মেঘালয়ের প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায় বলেন, "সংবিধানে এমন কোনও ধারা নেই, যেখানে রাজ্যপাল এমন পদক্ষেপ করতে পারেন না। হয়তো এরকম ঘটনা আগে কখনও কোনও রাজ্যপাল করেননি। তাই, প্রশ্ন উঠছে রাজ্যপাল কী করতে পারেন, কী করতে পারেন না। কিন্তু, বিষয়টা এরকম নজরে দেখাও উচিত নয়। একইসঙ্গে বিষয়টাও যে খুব গুরুত্বপূর্ণ, হইচই পড়ে যাওয়ার মত, এমনও নয়। আমি রাজ্যপালের ভুলের কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছি না। তবে, অবশ্যই এটা অস্বাভাবিক পদক্ষেপ। আমি যে তিনটি রাজ্যের রাজ্যপাল ছিলাম, তখন এরকম কোনও প্রশ্ন ওঠেনি। আমার অভিজ্ঞতাও নেই।"
কংগ্রেস মুখপাত্র সৌম্য আইচ বলেন, "রাজ্যপাল স্বতঃপ্রণোদিতভাবে কী পুরস্কার দিচ্ছেন, কেন দিচ্ছেন এবং তার আদৌ এই অধিকার আছে কিনা তা আমার জানা নেই। আসলে উনি বোঝাতে চাইছেন, কার দরকার কি আছে আমি জানিনা, আমি আমার মত করে চলব। আমি জানি, উৎকর্ষতার জন্য রাজ্য সরকার পুরস্কার দিয়ে থাকে। এখন রাজ্যপাল কেনই পুরস্কার দিচ্ছেন, কি প্রমাণ করতে চাইছেন রাজ্যপাল জানি না। সারা ভারতবর্ষ এ ধরনের নিদর্শন আছে বলেও আমার জানা নেই। আসলে এই আকচা-আকচি করে আসল ইসুগুলো সব ধামাচাপা পড়ে যাচ্ছে।"
আরও পড়ুন: মদন'বাণে' অস্বস্তিতে তৃণমূল, কামারহাটির বিধায়কের সঙ্গে বৈঠকে জেলা সভাপতি
যদিও রাজভবন সূত্রের দাবি, "এধরনের পুরস্কার বা পদক্ষেপ কিংবা রাজভবন থেমে নানারকম স্কলারশিপ,দুঃস্থকে আর্থিক সাহায্য রাজ্যপাল করতেই পারেন। মারণরোগের চিকিৎসার অর্থ জোগাড় করতে না-পেরে সারা বছর রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বহু মানুষ রাজভবনের সাহায্য প্রার্থনা করেন। রাজভব তা দিয়েও থাকে। এরজন্য রাজ্য সরকার বা রাজ্য মন্ত্রী সভার অনুমতি প্রয়োজন নেই। কারণ, এই সমস্ত খাতে অর্থ খরচের জন্য রাজ্যপালের কোষাগারে ব্রিটিশ আমল থেকেই বিপুল অর্থ রয়েছে। যা এক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা আছে। এর জন্য রাজ্য সরকারের উপর নির্ভর করতে হয় না।"