কলকাতা, 13 এপ্রিল: প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক পড়ুয়াদের জন্য মাসে একবার রাজভবন থেকে দুপুরের খাবার পাঠানোর প্রস্তাব দিলেন স্বয়ং রাজ্যপাল ! কিন্তু, এই প্রস্তাবে মন গলল না পড়ুয়াদের ৷ তাঁরা বলছেন, এই প্রস্তাবে তাঁদের সমস্য়া মিটবে না ৷ এমনকী, রাজ্যপালের প্রস্তাবকে 'হাস্যকর' বলে সমালোচনা করতেও দ্বিধা করেননি বাম ছাত্রনেতা ৷
বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে 'সারপ্রাইজ ভিজিট'-এ আসেন রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বোস ৷ আচার্যকে সামনে পেয়েই তাঁর কাছে নিজেদের দাবিদাওয়া জানাতে চান পড়ুয়াদের একাংশ ৷ এমনকী, আলোচনার দাবিতে বিক্ষোভও দেখান তাঁরা ৷ পড়ুয়াদের দাবি মেনে নেন আচার্য ৷ কিন্তু, সেই বৈঠক ফলপ্রসূ হয়নি বলে জানিছেন পড়ুয়ারা ৷ যদিও এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দেবজ্যোতি কোনার ৷
করোনা পরবর্তী সময়ে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু হস্টেল এবং গার্লস হস্টেলের মেস বা ক্যান্টিন বন্ধ রয়েছে ৷ যার জেরে বিপাকে পড়েছেন 200-রও বেশি আবাসিক ৷ বিশেষ করে আর্থিকভাবে দুর্বল ঘরের ছেলেমেয়েদের অবস্থা অত্যন্ত করুণ ৷ সেই কথা এদিন রাজ্যপালকে জানিয়েছিলেন পড়ুয়ারা ৷ শুধু তাই নয়, গার্লস হস্টেলটি আবার সল্টলেকে ! ফলে, সেখান থেকে ক্যাম্পাসে যাতায়াত করতে দিনে প্রায় 100 টাকা খরচ হয় ৷ এই খরচ সকলের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয় ৷ এই সমস্যার সমাধান করতে বাসের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয় পড়ুয়াদের তরফে ৷ কিন্তু, রাজ্যপাল পড়ুয়াদের সেই দাবিকে আমল দেননি বলে অভিযোগ ৷
এরপর খাওয়ার সমস্যা সংক্রান্ত বিষয়টি উল্লেখ করা হলে রাজ্যপাল বলেন, সামনেই পয়লা বৈশাখ ৷ ওই দিন বিশ্ববিদ্য়ালয়ের পড়ুয়ারা চাইলে রাজভবন যেতে পারেন ৷ অথবা বিশ্ববিদ্য়ালয় চত্বরেও অনুষ্ঠান হতে পারে ৷ আর পড়ুয়ারা রাজি থাকলে রাজভবন থেকে মাসে একদিন আবাসিক পড়ুয়াদের জন্য খাবারের বন্দোবস্ত করা যেতে পারে ৷ পড়ুয়াদের পালটা প্রশ্ন, এতে তাঁদের সমস্যা মিটবে কীভাবে ?
এসএফআইয়ের প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সম্পাদক ঋষভ সাহা এই প্রসঙ্গে বলেন, "হস্টেলে খাবারের সমস্যা রয়েছে ৷ তার উপর মেয়েদের হস্টেলটা এতটা দূরে ৷ সেই কারণেই বাসের ব্যবস্থা করার আবেদন জানানো হয়েছিল ৷ কিন্তু, রাজ্যপাল সেসব প্রশ্ন ঘুরিয়ে দিয়েছেন ৷ বদলে তিনি বললেন, আমি তোমাদের সঙ্গে মাসে একবার খাব ! পয়লা বৈশাখে রাজভবনে যাওয়ার আমন্ত্রণও করেছেন ৷ বিষয়টি শুধু হাস্যকরই নয়, উপহাস করার সমান ৷ যেখানে পড়ুয়ারা নিয়মিত দু'বেলা খেতে পারছেন না, সেখানে রাজ্যপাল এসব বলে এড়িয়ে যেতে চাইছেন ! যেন তাঁর কিছুই করার ক্ষমতা নেই ! তাই এদিনের বৈঠক ফলপ্রসূ হয়েছে বলে মনে হয় না ৷"
আরও পড়ুন: উপাচার্যদের কাছে সাপ্তাহিক রিপোর্ট তলব আচার্যের, কী বলছে শিক্ষামহল ?
ইন্ডিপেন্ডেন্টস কনসোলিডেশন বা আইসি-এর আহ্বায়ক অহন কর্মকার এই প্রসঙ্গে বলেন, "হিন্দু হস্টেলে মেস সিস্টেম চালু না থাকায়, আবাসিক পড়ুয়াদের খাওয়া-দাওয়ার কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ এই বিষয়টি আচার্যের নজরে আনা হলে তিনি বলেন, রাজভবনে ডেকে ছাত্রছাত্রীদের মাসে একবার খাওয়াবেন ! কিন্তু পড়ুয়ারা পরিষ্কার জানিয়ে দেন, সেটি মোটেই মূল সমস্যার সমাধান নয় ৷ একদিন খেয়ে মানুষের পেট ভরে না ৷ মেস চালুর বিষয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করতে হবে ৷"
এদিকে এক বিজ্ঞপ্তিতে রাজভবনের তরফে জানানো হয়েছে, পড়ুয়াদের ফেলোশিপ, মেডিকেল ইউনিট-সহ একাধিক সমস্যার কথা শোনার পর রাজ্যপাল সঙ্গে সঙ্গে 2 লক্ষ টাকা অনুমোদন করেন। রাজ্যপাল পড়ুয়াদের থেকে জানতে পারেন দুর্ঘটনায় কারণে একজন ইউজি ছাত্রী বিআর- হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। সন্ধ্যায় হাসপাতালে ছুটে যান তিনি। ওই পড়ুয়া ও তার বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা করেন। ডাক্তারদের সঙ্গেও আলোচনা করেন। রাজ্যপাল তার চিকিৎসার জন্য 50,000 টাকা হস্তান্তর করেছেন। গভর্নর বিশ্বাস করেন যে বাংলা থেকে শিক্ষার নবজাগরণ শুরু হবে। প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, এর শিক্ষক এবং ছাত্রদের সম্ভাবনার প্রতি তার আস্থা প্রদর্শন করেন।